7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১২ জানুয়ারী, ২০২২

বিষ্ণু দেবতা

ভগবান বিষ্ণু 

    পরমেশ্বর যখন জগতকে লালন-পালন করেন তখন তিনি ভগবান বিষ্ণু। পূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে যে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব পৃথক দেবতা নন। পুরাণে যেহেতু দেবতাদের পৃথক পৃথক রূপ কল্পিত হয়েছে সেহেতু বিষ্ণুকেও পৃথকভাবে বর্ণনা করা প্রয়োজন। বিষ্ণু পুরাণের দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে

অবিকারায় শ্রদ্ধায় নিত্যায় পরমাত্ননে।

সদৈবারূপরূপায় বিষ্ণবে সর্বজিষ্ণবে।।

 নমো হিরণ্যগর্ভায় হরয়ে শঙ্করায় চ।

বাসুদেবায় তারায় সর্গ স্থিত্যন্তকারিণে।। (১/২/১২)

যার বিকার নেই, যিনি শুদ্ধ, নিত্য ও পরমত্নাস্বরূপ, যিনি সর্বদা একরূপ এবং সর্ববিজয়ী। যিনি হরি, হিরণ্যগর্ভ (ব্রহ্মা) ও শিব নামে কথিত, সেই বাসুদেব বিষ্ণুকে নমস্কার। বেদে বিষ্ণু ও সূর্য একই দেবতা। কিন্তু পুরাণে সূর্য ও বিষ্ণুকে পৃথকভাবে কল্পনা করা হয়েছে। ঋক্-বেদে বিষ্ণুর তিনটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বিষ্ণু পূর্বদিকে সূযোর্দয়ের সময় উদয়গিরিতে প্রথম পদক্ষেপ, মধ্যাহ্ণের সময় মধ্য-আকাশে দ্বিতীয় পদক্ষেপ এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার সময় অস্তাচলে তৃতীয় পদক্ষেপ করেন। রামায়ণে আছে বিষ্ণু প্রথম পদক্ষেপ করেন উদয়শিখরে, দ্বিতীয় পদক্ষেপ করেন মেরু-শিখরে এবং জম্বুদ্বীপ অতিক্রম করে অস্ত যাওয়ার সময় তৃতীয় পদক্ষেপ করেন স্বর্গে। পুরাণে বিষ্ণু রক্ষাকর্তা বা পালনকর্তা। বেদেও বিষ্ণু গোপা বা রক্ষক। ঋক্-বেদের ১ম মণ্ডলের ২২ সুক্তের ১৮ নং ঋকে আছে “ত্রীণি পদা বিচক্রমে বিষ্ণুর্গোপা অদাভ্যঃ। অতো ধর্মাণি ধারয়ন্।।” অর্থাৎ বিষ্ণু রক্ষক, তাঁকে কেউ আঘাত করতে পারে না। তিনি ধর্মসমুদয় ধারণ করে তিন পদ পরিক্রমণ করেছিলেন। সূর্য ছাড়া জীবকুলের জীবন ধারণ অসম্ভব। সূর্য আলো দেয়। সূর্যের আলো দিয়ে উদ্ভদকুল খাদ্য প্রস্তুত করে আর মনুষ্যকুল সে উদ্ভিদকুল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। তাই বিষ্ণু যে পালনকর্তা, তা বৈদিক যুগ থেকেই কল্পিত হয়েছে।

বিষ্ণু

বেদে বিষ্ণু

    বেদে বিষ্ণু ইন্দ্রের বন্ধু বা সখা। ঋক্-বেদের ৭ম মণ্ডলের ৯৯ সূক্তে আছে ইন্দ্র ও বিষ্ণু বৃষশিপ্রের মায়া বিনষ্ট করেছিলেন, শম্বরাসুরের নিরানব্বইটি দুর্গ বিনষ্ট করেছেন এবং বর্চি নামক অসুরের সৈন্য ধ্বংস করেছিলেন। ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তের ৬ নং ঋকে আছে “উরুক্রমস্য স হি বন্ধুরিত্থা বিষ্ণোঃ পদে মধ্ব উৎসঃ তদ্বিষ্ণোঃ” অর্থাৎ উরুবিক্রমী বিষ্ণুর পরমপদে মধুর উৎস আছে এবং তিনিই প্রকৃত বন্ধু। তাঁর পরমপদে মধুর উৎস থাকার কারণে হয়তো তাঁর নাম মধুসূদন হয়েছে। যজুর্বেদে বিষ্ণু হলেন যজ্ঞরূপী। ঋগ্বেদে বিষ্ণুকে শিপিবিষ্ট বলা হয়েছে। প্রভাতকালীন সূর্যের নাম শিপিবিষ্ট। ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তের ৬ নং ঋকে আছে “তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম” অর্থাৎ জ্ঞানীগণ চক্ষু দ্বারা যেমন সূর্যালোক দেখে, তেমন করে বিষ্ণু পরম পদ সর্বদা দর্শন করেন।

পুরাণে বিষ্ণু

    বেদের সূর্য পুরাণে বিষ্ণু হয়ে যে মূর্তি ধারণ করেছেন, এখন সে মূর্তির বর্ণনা করা যাক। কালিকা পুরাণে বিষ্ণুর যে রূপ পাওয়া যায় তা এরকম বিষ্ণু চতুভূর্জ অর্থাৎ তাঁর চারটি হস্ত। ঐ চার হস্তে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। তাঁর বর্ণ নীল মেঘের মত। তিনি গরুড়ের উপর পদ্মাসনে উপবিষ্ট। তাঁর বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন এবং গলে বনমালা। তাঁর মস্তকে কিরীটি বা মুকুট, কর্ণে কুণ্ডল এবং হস্তে কেয়ুর বা বাজু বিদ্যামান। বিষ্ণু সূর্যমণ্ডলে অবস্থিত শূন্যে বিরাজমান।

বিষ্ণুর রূপ

    পদ্ম পুরাণ অনুসারে বিষ্ণু দেহ নবমেঘের মত শ্যাম বর্ণের এবং শুভলক্ষণযুক্ত। বিষ্ণু পীতবাস অর্থাৎ হলুদ রঙের বস্ত্র পরিহিতি। তন্ত্রসার গ্রন্থে বলা হয়েছে বিষ্ণুর বর্ণ তপ্ত স্বর্ণের মত এবং তাঁর দক্ষিণভাগে লক্ষ্মী ও বামভাগে পৃথিবী সেবা করছেন। বৃহৎ সংহিতা অনুসারে বিষ্ণু দ্বিভূজ, চতুভূর্জ অথবা অষ্টভূজ। অতসী পুষ্পের মত তাঁর বর্ণ এবং তিনি কৌস্তব-মণি শোভিত। বিষ্ণুর শঙ্খের নাম পাঞ্চজন্য, চক্রের নাম সুদর্শন, গদার নাম শাঙ্গর্ এবং অসির নাম নন্দক। ঐশ্বর্য, বীর্য, সৌন্দর্য প্রভৃতি রজোগুণ নির্দেশ করে। বিষ্ণুর অস্ত্রশস্ত্র ও কৌস্তব-মণি, কিরীটি, কেয়ুর সহ সকল অলঙ্কার তাঁর ঐশ্বর্য, বীর্য ও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে। তাই বিষ্ণু হলেন রজোগুণ সম্পন্ন। প্রজাদের রক্ষা বা পালন করার জন্য রজঃ গুণই অধিক প্রয়োজন।

    বেদের সূর্য পুরাণে বিষ্ণু হলেও সূর্য ও বিষ্ণুর রূপে অনেক মিল পাওয়া যায়। সূর্যের আলোর রং পীত বা হলুদ বলা চলে আবার বিষ্ণুর বসনের রংও পীত। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র মুলত সূর্যের বর্ষচক্রেরই প্রতীক। বার মাসে অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে সূর্যের চারদিকে চক্রাকারে পৃথিবী ভ্রমণ করে যা বর্ষচক্র নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন হতে পারে বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে তো অসুর বধ করেন কিন্তু বর্ষচক্র দ্বারা অসুর বধ কিভাবে সম্ভব? এবং বর্ষচক্র কেন সুদর্শন চক্র হবে? প্রকৃতপক্ষে বর্ষচক্র অসুর তথা সমগ্র প্রাণিকুল নিধনের জন্য প্রয়োজন। প্রত্যেক প্রাণীর একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল রয়েছে। বর্ষচক্র ঘুর্ণনের সাথে সাথে সময় বা কাল আস্তে আস্তে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ আয়ু কমে যায়। এভাবে যখন নিদিষ্টর্ আয়ু শেষ হবে, তখন মৃত্যু আসবেই। তাই বলা যায় কালের উপর আর বড় অস্ত্র নেই। এই কালের অস্ত্রে বিষ্ণুর অবতার রাম, বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ সকলকেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। তাই সূর্যের বর্ষচক্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র সুদর্শন চক্র রূপে কল্পনা করা হয়েছে। সূর্যের চারদিকে কতশত উজ্জ্বল দীপ্তিমান গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। বিষ্ণুর উজ্জ্বলতম কৌস্তব-মনি ঐ গ্রহ-নক্ষত্রেরই প্রতীক। বিষ্ণুর হস্তে পদ্ম। পদ্ম কিন্তু সূর্যের প্রতীক। আবার পদ্ম ভক্তিরও প্রতীক। বিষ্ণু ভক্তকে ভক্তি প্রদান করেন এই কথাটি বোঝাতেই তাঁর হস্তে পদ্মের কল্পনা করা হয়েছে।

বিষ্ণু ও লক্ষ্মী

    সমুদ্র্র-মন্থন থেকে উঠে আসা কৌস্তব-মণি এবং শ্রী (লক্ষ্মী) দেবীকে বিষ্ণু বক্ষে ধারণ করেছিলেন। সে জন্য তাঁর বক্ষে শ্রীবৎস্য চিহ্ন। বিষ্ণুর একপাশে লক্ষ্মী আর অন্যপাশে পৃথিবী অর্থাৎ পালনকার্যে ধন-সম্পদের প্রয়োজন বেশী হওয়ায় তিনি ধনের দেবীকে দক্ষিণে রেখেছেন এবং যেহেতু পৃথিবীকে তিনি পালন করছেন সেহেতু পৃথিবী তাঁর পত্নী যার স্থান তাঁর বামপাশে। বিষ্ণুর চারটি হস্ত চারদিক প্রকাশক। সূর্যকে কেন্দ্র করেই দিক নির্ণয় করা হয়। সূর্য যে স্থান হতে উদিত হয় সেটাকে পূর্বদিক এবং সূর্যের অভিমুখে দাড়িয়ে দক্ষিণ হস্ত যে পাশে থাকে তা দক্ষিণ দিক, বামহস্ত যে পাশে থাকে তা উত্তর দিক এবং সূর্য যে স্থানে অস্ত যায় তা পশ্চিম দিক ধরা হয়। বিষ্ণুর বর্ণ নবমেঘের মত শ্যাম কেন? নবমেঘ আলোর সকল বর্ণ শোষণ করে এবং কোন বর্ণকেই প্রকাশিত হতে দেয় না। অর্থাৎ নবমেঘের নিকট সকল বর্ণই তুচ্ছ। সূর্যও সকল বর্ণকে শোষণ করে। তাই দেখা যায় যে, অনেক ক্ষেত্রেই সূর্যের সাথে বিষ্ণুর মিল রয়েছে।

বিষ্ণুর সহস্র নাম

    এবার বিষ্ণুর নাম প্রসঙ্গে আসা যাক। বেদে সুপর্ণ (সুন্দর পাখা বিশিষ্ট) ও গরুত্মান্ বলা হয়েছে হয়তো এ থেকেই পুরাণে বিষ্ণুর বাহন গরুড় কল্পিত হয়েছে। ‘বিষ্ণু’ নামের তাৎপর্য কি? বিষ্ণু শব্দটি এসেছে ‘বিষ্’ ধাতু থেকে। ‘বিষ্’ ধাতুর অর্থ বিস্তার বা ব্যাপক। তাই সর্বভূতে যার বিস্তার অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী যিনি রয়েছেন, তিনিই বিষ্ণু। বৌধায়ণ ধর্মসূত্রে বিষ্ণুর যেসব নামের উল্লেখ রয়েছে তা হল ত্রিবিক্রম, কেশব, নারায়ণ, মাধব, গোবিন্দ, বামন, শ্রীধর, হৃষীকেশ, পদ্মনাভ, দমোদর প্রভৃতি। ত্রিবিক্রম হল তিন ধরনের তেজ বা শক্তি। সূর্য থেকেই বিষ্ণু কল্পিত হয়েছে। সূর্য উদয়ের সময়, মধ্যাহ্নে এবং অস্ত যাওয়ার সময় তিনটি পদক্ষেপ করেন এবং এ তিন সময়ে বিষ্ণুর তিন ধরনের তেজ বা শক্তি থাকে, তাই তিনি ত্রিবিক্রম। ‘কেশব’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দাড়ায় কে + শব = কেশব। কে অর্থ জল। বিষ্ণু কারণ-জলে যোগনিদ্রায় শবের মত শুয়ে ছিলেন, তাই তিনি কেশব। ‘নারায়ণ’ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে হয় নারা + অয়ণ = নারায়ণ। নারা অর্থ জল আর অয়ণ অর্থ আশ্রয়। সুতরাং নারা (জল) অয়ন (আশ্রয়) হয়েছিল যার, তিনি নারায়ণ। বিষ্ণু সৃষ্টির আদিতে কারণ-জল আশ্রয় করেছিলেন অর্থাৎ কারণ-জলে শায়িত ছিলেন, এজন্য তিনি নারায়ণ নামে পূজিত। মধু নামক অসুরকে বধ করায় বিষ্ণু মাধব ও মধুসূদন নামে খ্যাত হলেন। আবার মধু-বিদ্যার জনক বলেও তাকে মধুসূদন বলা হয়। আবার মধু দ্বারা অমৃত আর সূদন দ্বারা রন্ধনকারী বা পরিবেশনকারী বোঝায়। তাহলে যিনি মধু পরিবেশন করেন তিনিই মধসূদন। মধুসূদন জ্ঞান রূপ মধু পরিবেশন করেন যা পান করে ভক্তরা অমৃতত্ব লাভ করেন বা অমর হন। ‘গোবিন্দ’ শব্দটির দুটি অর্থ। গো অর্থ বাণী বা বেদবাক্য তাই বেদের দ্বারা যাকে জানা যায়, তিনিই গোবিন্দ। আবার গো অর্থ পৃথিবী অর্থাৎ যিনি পৃথিবীর পালক বা রক্ষক তিনিই গোবিন্দ। দৈত্যরাজ বলিকে দমন করার জন্য বিষ্ণু বামন (খর্বাকায়) হয়েছিলেন বলে তিনি বামন নামে খ্যাত হলেন। শ্রী বা লক্ষ্মীর পতি বলে বিষ্ণু শ্রীধর, শ্রীপতি, শ্রীনাথ, শ্রীকান্ত প্রভৃতি নামে খ্যাত হলেন।

    চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচটিকে ইন্দ্রিয় বলে। ইন্দ্রিয়ের আরেক নাম হৃষীক। তাই হৃষীক বা ইন্দ্রিয়গণের প্রভূ যিনি, তিনিই হৃষীকেশ। দাম বা দড়ি উদরে যার তিনিই দামোদর। বিষ্ণুর উদরে দড়ি কেন? বিষ্ণু মুক্ত, অনন্ত ও অসীম পরমাত্মার প্রতীক। কিন্তু ভক্তের ভক্তির ডোরে তিনি বাঁধা পড়েন অর্থাৎ ভক্তি রূপ দড়ি দ্বারা দারা ঐ মুক্ত ঈশ্বরকেও বন্ধন করা যায়, এজনই বিষ্ণু দামোদর। এসব নাম ছাড়াও তিনি হরি, জনার্দ্ধন, অচ্যুত, বৈকুণ্ঠ, ক্ষীরোদশায়ী, গোপাল, মুকুন্দ, বাসুদেব, ধাতা, মুরারি, বৃষভ, শ্রীমান, যজ্ঞেশ, ধর্মগোপ্তা, পুণ্ডরীকাক্ষ, হংস, সঙ্কর্ষণ, পীতাম্বর, চক্রপাণি, শাঙ্গর্পাণি, গদাধর, প্রভব, অনীশ, উদীর্ণ, শ্রীবৎস প্রভৃতি নামে পরিচিত। হরি অর্থ যিনি হরণ করেন বা ছিন্ন করেন। সুতরাং যিনি সংসার-বন্ধন হরণ বা ছিন্ন করে মুক্তি দান করেন, তিনিই হরি। জনগণ যার প্রাথর্না করেন বা যিনি জনগণের পালক, তিনিই জনার্ধন। চ্যুতি বা ক্ষয় নাই বলে বিষ্ণুর নাম অচ্যুত হয়েছে। যার কোন কুণ্ঠা নেই, তিনি বৈকুণ্ঠ। বিষ্ণু ভক্তকে কৃপা করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না, এজন্য তিনি বৈকুণ্ঠ নামে পূজিত। ক্ষীর-সমুদ্রে অনন্তশয্যায় শায়িত ছিলেন বলে বিষ্ণু ক্ষীরোদশায়ী নামে পরিচিত হলেন। যিনি গো অর্থাৎ পৃথিবীর পালক বা পোষক, তিনিই গোপাল। মুকু বা মুক্তি দান করেন বলে বিষ্ণু মুকুন্দ। বিষ্ণুর বাসুদেব নামটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাসু অর্থ যিনি বাস করেন। তাই সর্বভূতে আত্মা রূপে বাস করেন বলে তাঁর এক নাম বাসুদেব। পৃথিবীকে ধারণ করে আছেন বলে বিষ্ণু ধাতা বা বিধাতা। মুর নামক এক অসুরকে বধ করে বিষ্ণু মুরারি নামের অধিকারী হলেন। যিনি ভক্তের প্রতি অভীষ্টবর্ষী অর্থাৎ যিনি সব মনোবাসনা পূর্ণ করেন, তিনিই বৃষভ। বিষ্ণু সুদর্শন এবং অতুলনীর সৌন্দর্যের অধিকারী বলে শ্রীমান নামে খ্যাত হলেন। যজ্ঞের পতি বা যজ্ঞরূপী বলে তিনি যজ্ঞেশ। ধর্মকে পালন করেন বলে তিনি ধর্মগোপ্তা। তিনি স্বাধীন বলে অনীশ এবং সবার অন্তর্যামী বলে উদীর্ণ। পুণ্ডরীক বা পদ্মের মত তাঁর অক্ষি (চোখ), এজন্য তিনি পুণ্ডরীকাক্ষ। হংস অর্থ জ্ঞান। সকল জ্ঞানের উৎস সূর্য বা বিষ্ণু, তাই তিনি হংস নামে খ্যাত হলেন। তিনি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডকে নিজের দিকে আকর্ষণ করছেন, এজন্য তিনি সঙ্কর্ষণ। পীত বা হলুদ যার অম্বর (বসন), তিনিই পীতাম্বর। তিনি হস্তে চক্র ধরেছেন বলে চক্রপাণি, শাঙ্গর্ নামক ধনু ধরেছেন বলে শাঙ্গর্পাণি এবং গদা ধরেছেন বলে গদাধর নামে পরিচিত। সৎ বা অসৎ সকলেরই উৎপত্তির হেতু এজন্য তিনি প্রভব। তার বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন থাকায় তিনি শ্রীবৎস নামে পরিচিত হলেন।

    বিষ্ণুর ষোড়শ নাম বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। যেমন ঔষধ সেবনকালে বিষ্ণু, ভোজনে জনার্ধন, শয়নে পদ্মনাভ, বিবাহে প্রজাপতি, যুদ্ধে চক্রধর, প্রবাসে ত্রিবিক্রম, দেহত্যাগে নারায়ণ, প্রিয়সঙ্গমে শ্রীধর, দুঃস্বপ্নে, গোবিন্দ, সঙ্কটে মধুসূদন, কাননে নরসিংহ, পাবকে (আগুনে) জলশায়ী, জলমধ্যে বরাহ, পর্বতে রঘুনন্দন, গমনে বামন এবং সর্বকার্যে মাধব।

বিষ্ণু ও লক্ষ্মী

    ভাগবতে বর্ণিত ভক্ত অজামিলের উপাখ্যান থেকে জানা যায় যে, কোন পাপী ব্যক্তিও যদি মৃত্যুকালে নারায়ণের নাম স্মরণ করে তবে তার সৎগতি লাভ হয়। অজামিল প্রথম জীবনে ধর্মপরায়ণ ও আচারনিষ্ট থাকলেও পরে এক স্বৈরিণী দাসীর সংস্পর্শে এসে পাপ কর্মে লিপ্ত হন। তিনি ঐ দাসীর জন্য তার সতী স্ত্রীকে ত্যাগ করেন এবং দাসীর সাথে বসবাস শুরু করেন। তার ঔরসে ঐ দাসীর গর্ভে দশ পুত্রের জন্ম হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে যে কনিষ্ঠ, তার নাম নারায়ণ। অজামিল নারায়ণকেই সব থেকে বেশী স্নেহ করতেন। অজামিলের মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে এলো, তখন তিনি পুত্র নারায়ণের নাম স্মরণ করতে লাগলেন। অজামিল মৃত্যুকালে নারায়ণের নাম স্মরণ করায় মৃত্যুর পরে যমদূতগণ তাকে নিয়ে যেতে চাইলে বিষ্ণুদূতগণ বাধা দেন এবং তাকে বৈকুণ্ঠে নিয়ে যান। অজামিল দুশ্চরিত্রা নারীর সংস্পর্শে এসে পাপকার্য করলেও পূর্বের অর্জিত পূণ্যবলে মৃত্যুকালে নারায়ণের নাম স্মরণ করেন এবং তিনি মৃত্যুর পর বৈকুণ্ঠে গমণ করেন। আসলে ধর্মই ধার্মিককে রক্ষা করে। এ উপাখ্যান থেকে আরেকটি শিক্ষা পাওয়া যায় যে, অসৎ ব্যক্তির সংস্পর্শে ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিও বিপথে যেতে পারে। 

    ভাগবতে ভক্ত ধ্রুবের উপাখ্যান বর্ণিত আছে। ভক্ত ধ্রুব বিষ্ণুকে ভক্তি ভরে ডেকে তাঁর দর্শন লাভ করেছিলেন। উপাখ্যানটি এরকম স্বায়ম্ভব মনুর পুত্র উত্তানপাদের সুনীতি আর সুরুচি নামে দুই রাণী ছিল। রাজা উত্তানপাদ সুনীতির চেয়ে সুরুচিকে বেশি ভালবাসতেন। উত্তানপাদের ঔরসে সুনীতির গর্ভে ধ্রুব আর সুরুচির গর্ভে উত্তম নামে দুই পুত্রের জন্ম হয়। একদিন ধ্রুব তার সৎ ভাই উত্তমকে পিতার কোলে বসতে দেখে তারও পিতার কোলে বসার ইচ্ছা জাগল। কিন্তু বিমাতা সুরুচি তাকে অপমান করলেন। ধ্রুব সব কথা মার কাছে এসে বললেন। মা তাকে দুঃখ দূর করার জন্য হরির নাম জপ করতে বললেন। তখন থেকে ধ্রুব শ্রীহরির জন্য ব্যাকুল হয়ে বনে চলে গেলেন তাঁর দর্শন পাবার জন্য। নারদ তার ভক্তি-নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে নিজে এসে তাকে শ্রীহরির সাধন-পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে যান। ধ্রুব নারদের কথামত ঐ পদ্ধতিতে শ্রীহরির ভজনা শুরু করেন। তার কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে অবশেষে শ্রীহরি তাকে দর্শন দেন।

বিষ্ণুর অবতার

    এবার বিষ্ণুর অবতার প্রসঙ্গে আসা যাক। শাস্ত্রে বিষ্ণুর ছয় প্রকার অবতারের কথা বলা হয়েছে। যথা পুরুষাবতার, গুণাবতার, লীলাবতার, যুগাবতার, মন্বন্ততরাবতার ও শক্ত্যাবেশ অবতার। এর মধ্যে বিষ্ণুর দশ লীলাবতারের কাহিনীই বেশী প্রচলিত। ভাগবতে বিষ্ণুর যেসব অবতারের উল্লেখ আছে তা হল পুরুষ, বরাহ, নারদ, নর-নারায়ণ, ঋষি, কপিল, দত্তাত্রেয়, যজ্ঞ, ঋষভ, পৃথু, মৎস্য, কূর্ম, ধন্বন্তরি, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, বেদব্যাস, রাম, বলরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি প্রভৃতি। ভাগবতের অন্যত্র ষোড়শ অবতারের কথা বলা হয়েছে, যথা বরাহ, সুযজ্ঞ, কপিল, দত্তাত্রেয়, কুমার (সনৎ, সনক, সনন্দন ও সনাতন), নর-নারায়ণ, ধ্রুব, পৃথু, ঋষভ, হয়গ্রীব, মৎস্য, কূর্ম, নরসিংহ, বামন, বলি ও হংস। পদ্ম পুরাণে যে দ্বাদশ অবতারের নাম আছে তা হল নরসিংহ, বামন, বরাহ, অমৃত-মন্থনকারী (কূর্ম), সংগ্রাম, আড়ীবক, ত্রিপুরহন্তা, অন্ধক-বধকারী, বৃত্রহন্তা, ধ্বজ, হালাহল, ও ঘোর কোলাহল। বিষ্ণুর প্রচলিত দশাবতারের নাম মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ ও কল্কি।

বিষ্ণুর অসুর বধ

    বিষ্ণু মধু-কৈটভ, হয়গ্রীব, গয়, শঙ্খচূড় প্রভৃতি অসুরদের বধ করেন। যখন বিষ্ণু অনন্ত-শয্যায় যোগনিদ্রায় নিমগ্ন ছিলেন তখন তাঁর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুর জন্মলাভ করেই ব্রহ্মাকে আক্রমন করল। ব্র‏‏হ্মা যোগমায়ার সাহায্যে বিষ্ণুকে জাগ্রত করলেন। তারপর বিষ্ণু মধু ও কৈটভের সাথে যুদ্ধ করতে উদ্যত হলেন। পাঁচ হাজার বছর যুদ্ধ করেও বিষ্ণু তাদের বধ করতে পারলেন না। তখন মহামায়া অসুরদের মোহাচ্ছন্ন করলেন। ফলে অসুররা মায়ার আক্রান্ত হয়ে বিষ্ণুকে তাদের নিকট বর প্রার্থনা করতে বলেন। বিষ্ণু তাদের মৃত্যুবর চাইলেন। তখন মধু ও কৈটভ বিষ্ণুকে বললেন, পৃথিবীর যে স্থানে জল প্লাবিত হয় না, এমন স্থানে তাদেরকে বধ করতে। বিষ্ণু তাঁর জঙ্ঘার উপরে তাদের মস্তক রেখে চক্র দ্বারা সে মস্তক ছিন্ন করলেন। তাহলে এই কাহিনী থেকে বোঝা গেল যে, মহামায়ার শক্তি ছাড়া কোন কার্য অসম্ভব। বিষ্ণু একা মধু কৈটভকে বধ করতে পারেন না অর্থাৎ মহামায়ার শক্তি ছাড়া বিষ্ণু অসম্পূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে শক্তি ছাড়া শক্তিমান অসম্পূর্ণ আবার শক্তিমান ছাড়াও শক্তি নিষ্কৃয়। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব শক্তিমান এবং সরস্বতী, লক্ষ্মী ও কালী তাঁদের শক্তি। শক্তিমান তাঁর শক্তির মাধ্যমেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কার্য করেন।

    দেবী ভাগবতে বিষ্ণুর হয়গ্রীব বধের কাহিনী আছে। পুরাকালে হয়গ্রীব নামক এক অসুর ছিল। হয়গ্রীবের মস্তক ছিল হয় বা ঘোড়ার মত। সে কঠোর তপস্যাবলে দেবী ভগবতীর বর পেয়েছিল যে, সে ছাড়া অথার্ৎ তার আকৃতির কোন প্রাণী ছাড়া আর কেউ তাকে বধ করতে পারবে না। এ বর পেয়ে হয়গ্রীব দেবতা ও ঋষিদের উপর অত্যাচার শুরু করল। তখন বিষ্ণু হয়গ্রীবের রূপ ধরে তাকে বধ করেন।

বিষ্ণুর গয়াসুর বধ

    এবার গয়াসুর বধ ও গয়া তীর্থের উৎপত্তি প্রসঙ্গে আসা যাক। বায়ু পুরাণে আছে, পুরাকালে গয় নামক এক অসুর বিষ্ণুর তপস্যা শুরু করল। অন্যান্য অসুরদের মত গয় অমর হওয়ার জন্য তপস্যা করেনি। গয় তপস্যা করেছিল ত্রিলোকের মধ্যে পবিত্রতম ব্যক্তি হওয়ার জন্য। গয়ের কঠোর তপস্যায় বিষ্ণু সন্তুষ্ট হয়ে বর দিলেন যে, ত্রিলোকের মধ্যে গয়ের শরীর সব থেকে পবিত্র হবে এবং গয়কে দেখামাত্র সকলে বৈকুণ্ঠে গমন করবে। এই বর পাওয়ার পর সকলে গয়কে দর্শন করে বৈকুণ্ঠে যেতে লাগল। ফলে যমপুরী ক্রমান্বয়ে জনশূন্য হতে লাগল। তখন দেবগণ ব্রহ্মার নিকট গেলেন এই প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কার্য ও অনাসৃষ্টির প্রতিকার জানতে। ব্র‏‏হ্মা তখন গয়ের নিকট গিয়ে তার শরীর প্রার্থনা করলেন। দানশীল গয় তার শরীর দিতে সম্মত হলে ব্র‏‏হ্মাদি দেবগণ সে শরীরের উপর যজ্ঞ শুরু করলেন। কিন্তু যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর উত্তপ্ত গয়দেহ কাঁপতে শুরু করল। কম্পমান গয়দেহে বৃহৎ শিলাখণ্ড রাখা হল কিন্তু কম্পন বন্ধ হল না। তখন দেবগণ ঐ গয়দেহের উপরে স্থাপিত শিলার উপর উঠলেন কিন্তু তাতেও কম্পন বন্ধ হল না। অবশেষে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যখন শিলাখণ্ডে উঠলেন তখন গয়ের শরীরের কম্পন বন্ধ হল। গয়ের এ আত্মত্যাগে দেবতারা মুগ্ধ হয়ে তাকে বর দিলেন যে, যতদিন পৃথিবী, পর্বত, চন্দ্র ও তারকা থাকবে ততদিন ব্র‏‏হ্ম, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি দেবগণ ঐ শিলায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এভাবে গয়াসুরের সমাধিস্থলে গয়া নামক তীর্থের উৎপত্তি হল।

বিষ্ণু কর্তৃক তুলসীর সতীত্ব হরণ

    ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বিষ্ণুর শঙ্খচূড় বধের কাহিনী এবং তুলসী বৃক্ষ ও শালগ্রাম শিলা উৎপত্তির কথা বর্ণিত আছে। দেবী তুলসী ছিলেন গোলকে রাধার সখী। রাধার শাপে তুলসী মর্ত্যলোকে রাজা ধর্ম ও মাধবী দেবীর কন্যা হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তুলসী বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য তপস্যা শুরু করলেন। তাঁর তপস্যার তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাকে বললেন যে, শঙ্খচূড় নামক দানবকে বিবাহ করলে তিনি নারায়ণকে পাবেন। পূর্বজন্মে শঙ্খচূড় ছিল কৃষ্ণের সখা সুদামা। রাধার অভিশাপে সুদামাকে শঙ্খচূড় নামক দানব হতে হয়েছে। শঙ্খচূড় তুলসীকে পত্নী রূপে পেতে চেয়েছিলেন। যা হোক, ব্র‏‏হ্মার কথামত তুলসী শঙ্খচূড়কেই গান্ধর্ব মতে বিয়ে করেন। তুলসীকে পত্নী রূপে পেয়ে শঙ্খচূড়েরও মনোবাসনা পূর্ণ হল। কঠোর তপস্যাবলে শঙ্খচূড় বর পেয়েছিল যে, যতদিন তার পত্নীর সতীত্ব হানি না হবে, ততদিন তার মৃত্যু নেই। এই বর পেয়ে শঙ্খচূড় অত্যাচারী হয়ে ওঠে। তিনি দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করেন। বিষ্ণু দেখলেন যে, তুলসীর সতীত্ব হরণ না করলে শঙ্খচূড়কে বধ করা অসম্ভব। তাই তিনি তুলসীর পতি অর্থাৎ শঙ্খচূড়ের রূপ ধরে তুলসীর সতীত্ব হরণ করেন এবং শঙ্খচূড়কে বধ করেন। কিন্তু পতিব্রতা তুলসী তা বুঝতে পেরে বিষ্ণুকে শাপ দিলেন “ছলনায় ধর্মভঙ্গ করে তুমি আমার পতীকে বধ করেছ। যেহেতু তুমি হৃদয়হীন পাষাণের মত কার্য করেছ, সেহেতু তুমি পাষাণরূপী হও”। বিষ্ণু তখন তুলসীকে বললেন, আমি তোমার শাপে ভারতে গণ্ডকী নদীর তীরে প্রস্তরখণ্ড হয়ে থাকব। সেখানে বজ্রকীটেরা সে প্রস্তরখণ্ডের মধ্যে আমার চক্র নিমার্ণ করবে। ইহাই হল শালগ্রাম শিলা উৎপত্তির ইতহাস। শালগ্রাম শিলা শ্রীধর, রঘুনাথ, নারায়ণ, দধিবামন প্রভৃতি নামেও পরিচিত। শালগ্রাম শিলার আকৃতি অনেকটা কূর্ম বা কচ্ছপের মত। কূর্ম হল বিষ্ণুর এক অবতার। তাই শালগ্রাম শিলা বিষ্ণুর প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়।

    এবার তুলসী বৃক্ষ প্রসঙ্গে আসা যাক। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে দেবী তুলসীর কেশ খেকে তুলসী বৃক্ষের জন্ম। যেহেতু তুলসী বিষ্ণুর প্রিয়া, সেহেতু তুলসীর কেশ হতে জাত তুলসী বৃক্ষও বিষ্ণুর খুব প্রিয়। তাই তুলসী পত্র দ্বারা শালগ্রাম শিলা পূজা করা একান্ত আবশ্যক। অশ্বত্থ বৃক্ষও নারায়ণ রূপে পূজিত হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন