7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

গীতা, চণ্ডী ও মনুসংহিতা

শ্রীমদ্ভগবত্ গীতা

    কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আত্মীয়দের বধ করতে হবে বলে অর্জুন যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিলে রথের সারথী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নানা উপদেশ ও তত্ত্বকথা শুনিয়ে যুদ্ধ করতে রাজি করান। শ্রীকৃষ্ণের সে তত্ত্ব-উপদেশই শ্রীমদ্ভগবত্ গীতা নামে খ্যাত। শ্রীমদ্ভগবত্ গীতা মহাভারতের অমত্মর্গত এবং ইহা ভীষ্ম পর্বের ২৫শ অধ্যায় থেকে ৪২শ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। শ্রীমদ্ভাগবত্ গীতাকে বলা হয় সর্ব ধর্ম গ্রন্থের সার। গীতার দর্শন অতি মহৎ ও উদার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশের ছলে সমগ্র হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব ব্যক্ত করেছেন । এটি একটি নিত্য-পাঠ্য গ্রন্থ। এর ১৮টি অধ্যায়ে ১৮টি যোগ রয়েছে, যথা- অর্জুন-বিষাদ যোগ, সাংখ্য যোগ, কর্মযোগ, জ্ঞান যোগ, সন্ন্যাস যোগ, অভ্যাস যোগ, জ্ঞান-বিজ্ঞান যোগ, অক্ষর-ব্র‏‏‏হ্ম যোগ, রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ, বিভূতি যোগ, বিশ্বরূপ-দর্শন যোগ, ভক্তি যোগ, ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ, গুণত্রয়-বিভাগ যোগ, পুরুষোত্তম যোগ, দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ, শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ যোগ ও মোক্ষ যোগ। গীতায় ৭০০টি ­শ্লোক রযেছে যার মধ্যে ৫৭৫টি শ্লোক শ্রীকৃষ্ণ কথিত। 
গীতা, চণ্ডী ও মনুসংহিতা

শ্রী শ্রী চণ্ডী

    মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১ হতে ৯৩ অধ্যায় শ্রী শ্রী চণ্ডী নামে খ্যাত। চণ্ডীতে ১৩টি অধ্যায়ে ৭০০ মন্ত্র আছে বলে একে ‘‘সপ্তশতী স্ত্রোত্র’’ বলে। চণ্ডী ‘‘দেবী-মাহাত্ম্য’’ হিসেবেও পরিচিত। চণ্ডীতে মধুকৈটভ, মহিষাসুর, শুম্ভ-নিশুম্ভ, চণ্ড-মুণ্ড প্রভৃতি অসুর বধের কাহিনী ছাড়াও দেবী দুর্গার স্তবস্তুতি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। চণ্ডী মতে দেবী দুর্গা হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া যিনি সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়, সুখ-দুঃখ, বিদ্যা-অবিদ্যা প্রভৃতির কারণ স্বরূপ। দেবী মায়া দ্বারা সব কিছু আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, জরা-ব্যাধি সব কিছুর মূলে এই মায়া। একমাত্র দেবীকে তুষ্ট করায় মাধ্যমেই মায়া দূর করে জগতে শান্তিলাভ করা সম্ভব। গীতার ন্যায় চণ্ডীও নিত্য-পাঠ্য গ্রন্থ।

শ্রী শ্রী চণ্ডীর কয়েকটি শ্লোক 

ত্বয়ৈব ধার্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজতে জগৎ।

ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা।। (১/৭৫)

অনুবাদঃ হে দেবি, আপনিই এই জগৎ ধারণ করে আছেন। আপনি এই জগৎ সৃষ্টি করেন, আপনিই জগৎকে পালন করেন এবং প্রলয়কালে আপনি জগৎ ধ্বংস করেন।

 

মেধাসি দেবি বিদিতাখিলশাস্ত্রসারা দুর্গাসি দুর্গভবসাগরনৌরসঙ্গা।

শ্রীঃ কৈটভারিহৃদয়ৈককৃতাধিবাসা গৌরী ত্বমেব শশিমৌলিকৃতপ্রতিষ্ঠা।। (৪/১১)

অনুবাদঃ আপনি সেই মেধারূপিনী সরস্বতী, আপনি দুস্তর সংসার সমুদ্রের তরণী। আপনি অদ্বিতীয়া ব্রহ্মময়ী। আপনি নারায়ণের হৃদয়-বিলাসিনী লক্ষ্মী এবং আপনি মহাদেবের হৃদয়-বিলাসিনী গৌরী।   

 

যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।। (৫/৪৯)

অনুবাদঃ যে দেবী সর্বভূতে শান্তিরূপে অবস্থান করেন তাকে নমস্কার, তাকে নমস্কার, তাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।

 

একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।

পশ্যৈতা দুষ্ট ময্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়।। (১০/৫)

অনুবাদঃ চণ্ডীকা দেবী শুম্ভ নামক অসুরকে বললেন একমাত্র আমিই এই জগতে বিরাজিতা। আমি ছাড়া জগতে আর দ্বিতীয় কে আছে? ওরে দুষ্ট, ব্রহ্মাণী প্রমুখ এই সকল দেবী আমারই শক্তি। এই দেখ তাঁরা আমাতেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

 

সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে।

শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।

সৃষ্টি স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।

গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্তুতে।।   

শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণপরায়ণে।

সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে।। (১১/১০-১২)

অনুবাদঃ হে দেবি, আপনি সকল মঙ্গলের মঙ্গলস্বরূপা, কল্যাণকারিণী, চতুর্বর্গ (ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ) প্রদায়িণী, ত্রিনয়না, গৌরবর্ণা হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম। হে দেবি, আপনি সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারের শক্তিরূপিণী। আপনি সনাতনি ও ত্রিগুণের আধারভূতা (নিগুর্ণা) অথচ ত্রিগুণময়ী। হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম। হে দেবি, আপনি শরণাগত, দীন ও আর্তগণকে পরিত্রাণ করেন। সকলের দুঃখ-নাশিনী হে নারায়ণি আপনাকে প্রণাম।

 

 ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।

 তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরি সংরক্ষয়ম্।। (১১/৫৪৫৫)

অনুবাদঃ এভাবে যখনই দানবদের উত্থান ঘটবে এবং তারা বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করবে তখনই আমি আবিভূতা হয়ে দেবশত্রু অসুরদের বিনাশ করব।

স্মৃতি শাস্ত্র

    মনুষ্য প্রণীত স্মৃতি শাস্ত্রে মূলত বেদেরই স্মৃতি-চিহ্ন রয়েছে। বিভিন্ন মুনি ঋষিদের সাধনা লব্ধ জ্ঞানই স্মৃতি শাস্ত্র। স্মৃতিতে ধর্মীয় জীবনের পাশাপাশি মানুষের সামাজিক জীবনেরও বর্ণনা রয়েছে। স্মৃতি-শাস্ত্রে ধর্মকথা, আচার-বিচার, বিধি-বিধান, নানাবিধ সংস্কার, বর্ণপ্রথা পভৃতির বর্ণনা রয়েছে। স্মৃতি শাস্ত্র মোট ২০খানা, যথা- ১) মনু, ২) যাজ্ঞবল্ক্য, ৩) পরাশর, ৪) অত্রি, ৫) বিষ্ণু, ৬) হারীত, ৭) ঊশনা, ৮) অঙ্গিরা, ৯) যম, ১০) আপস্তম্ব, ১১) সংবর্ত, ১২) কাত্যায়ন, ১৩) বৃহস্পতি, ১৪) ব্যাস, ১৫) শঙ্খ, ১৬) লিখিত, ১৭) দক্ষ, ১৮) গৌতম, ১৯) শাতাতপ ও ২০) বশিষ্ঠ। স্মৃতি শাস্ত্রগুলোর মধ্যে মনুসংহিতাই প্রধান ও জনপ্রিয়। মনুসংহিতায় মোট ১২টি অধ্যায় এবং ২৬৮৫টি শ্লোক আছে। মনুসংহিতায় স্বায়ম্ভুব মনু অর্থাৎ ব্রহ্মা কর্তৃক সৃষ্ট মনুর উপদেশ বানী রয়েছে। মনুসংহিতা ও যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা হিন্দু আইনেরও ভিত্তি স্বরূপ।

মনুসংহিতার কয়েকটি শ্লোক

যং মাতাপিতরৌ ক্লেশং সহেতে সম্ভবে নৃণাম্।

ন তস্য নিষ্কৃতিঃ শক্যা কতুর্ং বর্ষশতৈরপি।। (২/২২৭)

অনুবাদঃ সন্তান জন্মদানে পিতা-মাতা যে ক্লেশ সহ্য করেন, পুত্র শত শত বৎসরে শত শত জন্মেও পিতা মাতার সে ঋন পরিশোধ করতে সমর্থ হয় না।

 

ইমং লোকং মাতৃভক্ত্যা পিতৃভক্ত্যা তু মধ্যমম্ ।

গুরুশুশ্রূষয়া ত্বেবং ব্রহ্মলোকং সমশ্নুতে।। (২/২৩৩)

অনুবাদঃ মানুষ মাতৃভক্তির দ্বারা এই পৃথিবী জয় করতে পারে, পিতৃভক্তির দ্বারা মধ্যমলোক (স্বর্গলোক) জয় করতে পারে এবং গুরুভক্তির দ্বারা ব্রহ্মলোক জয় করতে পারে।

 

সর্বে তস্যাদৃতা ধর্মা যস্যৈতে ত্রয় আদৃতাঃ।

অনাদৃতাস্তু যস্যৈতে সর্বাস্তস্যাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। (২/২৩৪)

অনুবাদঃ যে ব্যক্তি পিতা, মাতা ও আচার্যকে শুশ্রূষার দ্বারা তুষ্ট করেছে, তার পক্ষে সকল ধর্মকর্ম অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, আর যে ব্যক্তি এই তিনজনের অনাদর করে, তার (শ্রৌত-স্মার্ত) সকল কাজই নিষ্ফল হয়ে যায়।


শ্রদ্দধানঃ শুভাং বিদ্যামাদদীতাবরাদপি।

অন্ত্যাদপি পরং ধর্মং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি।। (২/২৩৮)

অনুবাদঃ শ্রদ্ধাযুক্ত ব্যক্তি অত্যন্ত নিকৃষ্ট জাতি থেকেও উত্তম বিদ্যা গ্রহণ করবে; অন্ত্যজ চণ্ডালাদি জাতির কাছ থেকেও শ্রেষ্ঠ ধর্ম গ্রহণ করবে; নিজের থেকে নিকৃষ্ট কুল থেকেও উত্তমা স্ত্রী বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে।


নামুত্র হি সহায়ার্থং পিতা মাতা চ তিষ্ঠতঃ।

ন পুত্রদারং ন জ্ঞাতি ধর্মস্তিষ্ঠতি কেবলঃ।। (৪/২৩৯)

অনুবাদঃ পরলোকে সহায়তার জন্য পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র, জ্ঞাতি কেউই বিদ্যমান থাকে না, কিন্তু ধর্মই তখন একমাত্র সহায় হয়।


একঃ প্রজায়তে জন্তুরেক এব প্রলীয়তে।

একঃ অনুভুঙ্ক্তে সুকৃতমেক এব চ দুষ্কৃতম্।। (৪/২৪০)

অনুবাদঃ জীব একা জন্মগ্রহণ করে এবং একই মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে একাই নিজের সৎকর্মের ও দুষ্কর্মের ফল ভোগ করে।


বেদাভ্যাসস্তপো জ্ঞানমিন্দ্রিয়াণাঞ্চ সংযমঃ।

অহিংসা গুরুসেবা চ নিঃশ্রেয়সকরং পরম্।। (১২/৮৩)

অনুবাদঃ পুনঃ পুনঃ বেদপাঠ, তপস্যা, জ্ঞান, ইন্দ্রিয়সংযম, অহিংসা এবং গুরুসেবা এগুলো সর্ব-শ্রেষ্ঠ নিঃশ্রেয়সকর অর্থাৎ মোক্ষদায়ক ধর্ম। 

 

2 comments: