7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

হিন্দু দেবতা

হিন্দু দেবতা

    প্রাচীন তত্ত্বাদর্শী ঋষিগণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভাবতেন কার শক্তিতে মানুষ জীবন-ধারণ করে? কে মানুষকে লালন-পালন করছেন? কোন শক্তিতে প্রকৃতি এমন শস্যপূর্ণা হয়ে উঠে? এই শক্তির উৎস্য কোথায়? কি এর রহস্য? এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে তাঁরা দেবতাদের সন্ধান পেলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, প্রকৃতির সব কিছুর পশ্চাতে কেউ আছেন। প্রাচীনকালে মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কৃষিকাজ আর পশুপালন ছিল সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। সূর্য, চন্দ্র, বৃষ্টি, আগুন প্রভৃতি ছাড়া শস্য উৎপাদন ও জীবন-ধারণ অসম্ভব। সূর্য, চন্দ্র, বৃষ্টি, আগুন এরা কি জড় পদার্থ? ঋষিরা উপলব্ধি করতে পারলেন যে, এরা জড় বা নিষ্প্রাণ নয়, এরা মূলত ঈশ্বরের চৈতন্যময় শক্তি। এই চৈতন্যময় শক্তি সর্বদা সত্যের পক্ষে এবং অসত্যের বিপক্ষে ক্রিয়াশীল। ঈশ্বরের যে শক্তি জগতে আলো দিয়ে প্রাণিকুলকে বাঁচিয়ে রাখেন তিনি সূর্য দেবতা, যে শক্তি জল দান করে প্রাণিকুলকে তৃষ্ণা নিবারণ করান তিনি বরুণ দেবতা, যে শক্তি বৃষ্টি দান করে পৃথিবীকে শস্যপূর্ণা করে তোলেন তিনি ইন্দ্র দেবতা, যে শক্তি উত্তাপ প্রদান করে খাদ্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করেন তিনি অগ্নি দেবতা। দেবতাগণ ঈশ্বরের শক্তি তবে দেবতা অর্থ কিন্তু শক্তি নয়। ‘‘দেবতা’’ শব্দটি এসেছে ‘দিব’ ধাতু হতে যার অর্থ উজ্জ্বল। সূর্য, চন্দ্র, বিদুৎ, অগ্নি প্রভৃতি উজ্জ্বল বলেই হয়তো ঋষিগণ তাঁদের দেবতা বলে ডাকতেন। 
দেবতা

    প্রাচীন ঋষিদের চিন্তা-চেতনা ছিল মহৎ ও উদার। তাঁরা দেখলেন যে, দেবতাদের কৃপা ছাড়া তাঁদের জীবন-ধারণ অসম্ভব এবং তাঁরা উপলব্ধি করলেন যে, দেবতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে অধর্ম হবে। তাই তাঁরা দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রশংসামূলক বাক্য নিঃসৃত করতেন এবং উৎসর্গ করতেন তাঁদের প্রিয় সব খাদ্য সামগ্রী। সোমলতার রস, অজ বা ছাগলের মাংস, পুরোডাশ, মাখন, ঘৃত প্রভৃতি সে যুগের মানুষদের খুব প্রিয় ছিল। তাই তাঁরা এসব খাদ্য-সামগ্রী দেবতাদের উৎসর্গ করতেন। কিন্তু বেশির ভাগ দেবতাই তো থাকেন ঐ দূর আকাশে। তবে তাঁদেরকে এসব কিভাবে উৎসর্গ করতেন? ঋষিরা দেখলেন যে, মর্ত্যে খুব সহজেই যে দেবতাকে পাওয়া যায়, তিনি হলেন অগ্নি। তাঁরা উপলব্ধি করলেন যে, এই অগ্নিকে হবি (ঘৃত প্রভৃতি দ্রব্য) দিলেই সব দেবতা পাবেন। অগ্নিই সকল দেবতার নিকট হবি পৌছে দেবেন কারণ অগ্নিই যেন দেবতাদের মুখ ও পুরোহিত। এভাবে দেবতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই যজ্ঞের সূচনা হয়েছে এবং সেই দেবতাদের স্তুতি ও যজ্ঞের বর্ণনা লিপিবদ্ধ হয়ে বেদ সৃষ্টি হয়েছে।

    বৈদিক যুগের শুরুতে দেবতাদের পৃথকভাবে স্তুতি ও যজ্ঞ করা হত। পরে ঋষিরা উপলব্ধি করলেন যে, দেবতারা পৃথক নন। এক দেবতাই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ও বিভিন্ন রূপে অবস্থান করেন। তাই ঋষি কণ্ঠে উচ্চারিত হল- ‘‘একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’’ অথাৎ সেই এক আদিত্যকেই মেধাবীগণ বহু নামে স্তুতি করেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, ইন্দ্র, অগ্নি, সূর্য, মিত্র, বরুণ, রুদ্র, ঊষা প্রভৃতি দেবতা এক দেবতারই বিভিন্ন নাম। এক ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তিই জগতে বিভিন্ন রূপে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়। ঈশ্বরের এই প্রকাশিত শক্তিই হল দেবতা। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং তাঁর শক্তি অসীম। ঐ অসীম শক্তিকে মনন বা চিন্তা করা অসম্ভব আর ঐ অসীম শক্তির ভজনাও দুঃস্যাধ্য। তাই ঈশ্বরের একেক রূপ বা একেক শক্তিকে একেক দেবতা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। সুতরাং দেবতগণ পৃথক নন, তাঁরা একেরই বিভিন্ন রূপ। ঈশ্বর যে এক ও অদ্বিতীয়, তা ঋগ্বেদের ২য় ম-লের ১ম সূক্তের ৩য় ঋকে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে- ‘‘তমগ্ন ইন্দ্রো বৃষভঃ সতামসি ত্বং বিষ্ণুরুরুগায়ো নমস্যঃ। ত্বং ব্র‏‏হ্মা রষিবিদ ব্রহ্ম রষিবিদ্ ব্র‏‏হ্মণস্পতে ত্বং বিধর্তঃ সচমে পুরুন্ধ্যা।।’’ অর্থাৎ হে অগ্নি, তুমি সাধুদের মঙ্গলকারী, অতএব তুমি ইন্দ্র, তুমি বিষ্ণু তুমি বহু লোকের প্রশংসা পাও, তুমি নমস্কারযোগ্য। তুমি ব্রহ্মা, তুমি বিবিধ পদার্থ সৃষ্টি কর ও বহু প্রকার বৃদ্ধিতে অবস্থান কর। উক্ত মন্ত্রে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, দেবতা বহু নয়। অগ্নিই ইন্দ্র, অগ্নিই বিষ্ণু আবার অগ্নিই ব্র‏‏হ্মা। অতএব ঈশ্বর এক হলেও তিনি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রূপে জগতে প্রকাশিত হন এবং তাঁর এক একটি রূপকে এক একজন দেবতা বলা হয়। তাই বলা চলে যে, বেদ একেশ্বরবাদকেই সমর্থন করে। যেহেতু বেদে দেবতাদের পৃথকভাবে স্তুতি ও যজ্ঞ করা হয়েছে তাই পৃথকভাবে তাঁদের পরিচয় জানা প্রয়োজন।

    বেদে দেবতা মোট তেত্রিশ জন এবং তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। দ্বাদশ-আদিত্য একাদশ-রুদ্র এবং অষ্ট-বসু মিলে হয় একত্রিশ জন এবং এঁদের সাথে দ্যু ও পৃথিবী যোগ করলে মোট তেত্রিশ দেবতা হয়। মহাভারতে বর্ণিত দ্বাদশ আদিত্য, একাদশ রুদ্র এবং অষ্টবসুর নাম নিচের দেয়া হল-

    আদিত্য দেবতাগণঃ বিষ্ণু, অংশ, ভগ, মিত্র, বরুণ, ধাতা, অর্যমা, জয়ন্ত, ভাস্কর, ত্বষ্টা, ইন্দ্র ও পূষা।

    রুদ্র দেবতাগণঃ অজ, একপদ, অহির্ব্রধণ, পিনাকী, ঋত, পিতৃরূপ, ত্র্যম্বক, বৃষাকপি, শম্ভু, হবন ও ঈশ্বর।

    বসু দেবতাগণঃ ধর, ধ্রুব, সোম, সবিতা, প্রত্যূষ, প্রভাস, অনিল (বায়ু) ও অনল (অগ্নি)।

    এছাড়াও বেদে বৃহস্পতি, যম-যমী, ত্রিত, আপ্ত্য, বিশ্বকর্মা, হিরণ্যগর্ভ, প্রজাপতি, ইলা, ভারতী, সরস্বতী, ঋভু, শ্রী, রাত্রী, অদিতি, ঊষা, অশ্বিদ্বয় প্রভৃতি দেবতার পরিচয় পাওয়া যায়। দেবতাদের অনেকেরই একাধিক নাম রয়েছে। তাই দেবতা ৩৩ জনের অধিক মনে হতে পারে কিন্তু বেদের মন্ত্রেই ৩৩ জন দেবতার কথা বলা আছে।

    যাস্ক ঋষির মতে বেদের দেবতার তিন শ্রেনীতে বিভক্ত, যথা- মর্ত্যের দেবতা, অন্তরীক্ষের দেবতা এবং দ্যুলোকের দেবতা। মর্ত্যের দেবতারা হলেন- অগ্নি, অপ, পৃথিবী ও সোম দেবতা। অন্তরীক্ষের দেবতারা হলেন- ইন্দ্র, বায়ু, রুদ্র, মরুৎ, অপাং, নপাৎ, পর্জন্য প্রভৃতি এবং দ্যুলোকের দেবতা হলেন সূর্য, মিত্র, বরুণ, দ্যু, পূষা, সাধতা, আদিত্য, অশ্বিদয়, উষা, রাত্রি প্রভৃতি।

    এবার আসা যাক পৌরাণিক দেবতা প্রসঙ্গে। বেদে যে ঘটনার বীজ বপন করা হয়েছে, পুরাণের মাধমে তা বিশাল শাখা-প্রশাখা সমন্বিত বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বেদে ইন্দ্র বৃষ্টির দেবতা হলেও পুরাণে ইন্দ্র শুধু বৃষ্টির দেবতাই নয়, তিনি স্বর্গের রাজাও বটে। তিনি যে কত উপাখ্যানের নায়ক তা বলে শেষ করা যাবে না। বেদে ইন্দ্রকে বলা হয়েছে শচীপতি। শচীপতি অর্থ শচী নামক রমণীর পতি নয়। বেদে ‘‘শচীপতি’’ অর্থ যজ্ঞপতি অর্থাৎ যজ্ঞের অধীশ্বর। কিন্তু পুরাণে বলা হয়েছে ইন্দ্রের স্ত্রীর নাম শচী। এরকম বেদের অনেক উপমাকে পুরাণে গল্পের আকার দেয়া হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

    বেদে ঈশ্বর নিরাকার হলেও পুরাণে সাকার। মূলত পুরাণের হাত ধরেই শুরু হয় ভক্তিবাদের। ঈশ্বরের অনন্ত-অসীম ভাবটি উপলব্ধি করা খুবই দুঃসাধ্য কিন্তু সাকার রূপে তাকে সহজেই কল্পনা করা যায় এবং স্থান দেয়া যায় হৃদ-কমলে। অর্থাৎ ঈশ্বরের সাকার রূপে যতটা ভক্তি উৎপন্ন হয়, নিরাকারে ততটা হয় না। তবে পুরাণে বর্ণিত দেবতাদের ঐ রূপের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর দর্শন এবং বিভিন্ন উপাখ্যানে রয়েছে নানা নৈতিক শিক্ষার উপকরণ। বেদের শ্রী দেবতা পুরাণে হয়েছেন লক্ষ্মী, বেদের রাত্রী দেবতা পুরাণে হয়েছেন কালী, বেদের রুদ্র দেবতা পুরাণে হয়েছেন শিব, সূর্য হয়েছেন বিষ্ণু, বৃহস্পতি হয়েছেন ব্রহ্মা। পৌরাণিক দেবতাদের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার একটা রূপক তাৎপর্য আছে। যেমন- দুর্গার দশহাত দ্বারা দশদিক বোঝায়, কালীর চারহাত দ্বারা চতুর্বর্গ বোঝায়, ব্রহ্মার চার-মুখ চার-বেদ প্রকাশক। এরকম প্রত্যেক পৌরাণিক দেবতার স্বরূপ সম্যকভাবে না বুঝতে পারলে শাস্ত্র পাঠ বৃথা।

    পুরাণে দেবতাদের সংখ্যা নিদিষ্ট নয়। দেবতাদের পৃথক পৃথক রূপের বর্ণনা থাকলেও পুরাণ স্বীকার করে যে, দেবতারা হলেন এক ঈশ্বরের শক্তি। অগ্নির যে দহন-শক্তি রয়েছে তাকে অগ্নি থেকে পৃথক করা যায় না, তদ্রূপ ঈশ্বরের শক্তিকেও ঈশ্বর থেকে পৃথক করা যায় না। অর্থাৎ ঈশ্বর এবং তাঁর শক্তি অভেদ। দেবতারা কেবল এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন শক্তির নামান্তর মাত্র। পুরাণও এই কথাই বলে যে, ঈশ্বর যখন আলো দেন তখন তিনি সূর্য, যখন জল দেন তখন তিনি বরুণ, যখন বৃষ্টি দেন তখন তিনি ইন্দ্র, যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি ব্রহ্মা, যখন পালন করেন তখন তিনি বিষ্ণু আর যখন লয় করেন তখন তিনি শিব। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব হলেন ঈশ্বরের তিন মূর্তি। ব্রহ্মার শক্তি সরস্বতী, বিষ্ণুর শক্তি লক্ষ্মী এবং শিবের শক্তি দুর্গা। আবার শাস্ত্রে পাই মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী হলেন দেবী দুর্গা বা চণ্ডীরই অন্য রূপ আবার ব্র‏‏হ্মা-বিষ্ণু-শিবও একজনই। তাহলে বলা যায় কেবল এক শক্তিমান ঈশ্বর ও তাঁর শক্তি রয়েছে। শক্তি ছাড়া শক্তিমানের অস্তিত্ব থাকতে পারে না আবার শক্তিও শক্তিমানকে আশ্রয় না করে ক্রিয়াশীল হতে পারে না। তাই শক্তি ও শক্তিমান পৃথকভাবে থাকতে পারে না। এক ঈশ্বরই বিষ্ণু হয়েছেন, আবার লক্ষ্মীও হয়েছেন। অতএব পুরাণকে সুচারু রূপে বিশ্লেষণ করলে ঐ এক ঈশ্বরেরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 

সৌর ও গাণপত্য

মত-পথ

অনেক অনুসন্ধিৎসু হিন্দুর মনেই এই প্রশ্নটি জাগ্রত হয় যে, ঈশ্বর যদি একই হবেন তবে এত মত-পথ কেন? মূলত এক ঈশ্বরই স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রূপে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হন। পূর্বজন্মের কর্মফল অনুযায়ী মানুষের মধ্যে নানাবিধ বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। সব মানুষের বুদ্ধি-জ্ঞান সমান নয়। তাই ঈশ্বর সকলের নিকট সমানভাবে প্রকাশিত হন না। একই ঈশ্বর জ্ঞানীর নিকট নিরাকার ভাবে এবং ভক্তের নিকট সাকার ভগবান রূপে ব্যক্ত হন। তাই যেহেতু সকল মানুষ ঈশ্বরকে সমানভাবে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয় না সেহেতু একই সাধন-পদ্ধতি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। যদি ঈশ্বরকে পাওয়ার একটিই পথ থাকত তবে সবার পক্ষে ঈশ্বর-সাধনা সম্ভব হত না। তাই মানুষের বুদ্ধি-বিবেকের পার্থক্য হেতু সাধন-পদ্ধতির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। যার নিকট যে মত সহজসাধ্য হয়, তিনি সে মতই গ্রহণ করেন। মত বহু এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বর বহু। মূলত একই ঈশ্বরকে লাভ করার বিভিন্ন মত-পথ আছে। সব মতেই ঈশ্বর লাভ করা যায়। তাই কোন মতই ছোট বা হেয় নয়। শ্রীকৃষ্ণও একথা বলেছেন।
  যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
                                                          মম বর্তানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।। (গীতা-৪/১১)
অর্থাৎ হে পার্থ, যে যেভাবে আমাকে উপাসনা করে, আমি তাকে সে ভাবেই তুষ্ট করি। মনুষগণ সর্বপ্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে। তাই সকলকেই সদ্গুরুর শরণাগত হয়ে তার সাধ্য অনুযায়ী সাধন-পন্থা বেছে নেয়া আবশ্যক। সেই প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি যে পাঁচটি মুখ্য মত প্রচলিত রয়েছে তা হল- সৌর, গাণপত্য, শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব। নিচে সৌর ও গাণপত্য মতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল। 
সৌর

সৌর

সৌরগণ হলেন সূর্যের উপাসক। সৌরগণ কণ্ঠে স্ফটিকের মালা ধারণ করেন এবং ললাটে এক প্রকার রক্ত চন্দন দ্বারা তিলক করে থাকেন। তাঁরা রবিবার এবং সংক্রান্তির দিনে লবণ-বর্জিত অন্ন গ্রহণ করেন। কোনদিন সূর্য দর্শন না করে জলগ্রহণ করেন না। সূর্য দেবতার প্রচলিত ধ্যান-মন্ত্র নিম্নরূপ- 
ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুণৈক সিন্ধুং
                                                               ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি
                                                               পদ্মাদ্বয়াভয়বরান্ দধতং করাজৈ
                                                               মাণিক্যমৌলিমরুণাঙ্গ রুচিং ত্রিনেত্রম্।
-যিনি রক্তকমলে সমাসীন, সকল গুণের আকর, বিশ্বজগতের অধিপতি, করপদ্মে যার দুটি পদ্ম, বর ও অভয় মুদ্রা, যিনি রত্নশোভিত মুকুটধারী, অঙ্গকান্তি যার লোহিত, সে ত্রিনেত্রবিশিষ্ট সূর্যকে অর্চনা করি। সূর্য প্রণাম-মন্ত্রটি নিম্নরূপ-
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম ।
                                                       ধান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম।।
-জবা ফুলের মত রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, মহাদ্যুতি সম্পন্ন অন্ধকারের শত্রু, সকল পাপনাশক দিবাকরকে আমি প্রণাম করি। এখন গাণপত্য মত সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
গাণপত্য

গাণপত্য

গণপতি বা গণেশের উপসনা যারা করেন, তাঁরা গাণপত্য নামে খ্যাত। সর্বপূজার পূর্বেই গণেশের পূজা বিধেয়। তবে গাণপত্যরা গণেশকে পৃথক উপাস্য দেবতা হিসবে পূজা করে থাকেন। ভারতের মহারাষ্ট্রে সর্বপ্রথম গণেশ-পূজার প্রধান্য বিসত্মার করে। বর্তমানে দক্ষিণ-ভারতে এই মতের প্রচলন রয়েছে। গাণপত্যরা কপালে লাল ফোঁটা এবং কাঁধে গণেশের মু- ও দ- অঙ্কন করেন। গণেশের ধ্যান মন্ত্রটি নিম্নরূপ।
        ওঁ খর্বং স্থুলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরম্।
   প্রস্যন্দনমদগন্ধলব্ধ-মধুপ-ব্যালোল গণ্ডস্থলম্।।
                                                          দন্তাঘাত বিদারিতারি রুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরং।
                                                          বন্দে শৈলসূতা সূতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।
-যিনি খর্ব ও স্থুলকায়, গজেন্দ্রবদন, লম্বোদর, সুন্দর বদন হতে ক্ষরিত মদের গন্ধে লুব্দ অলিকুল যার গণ্ডস্থলে ব্যাকুল করেছে। যিনি দন্তের আঘাতে শত্রুদের বিদীর্ণ করে তার রক্তে সিদুরশোভা ধারণ করেছেন, সেই সর্বসিদ্ধিদাতা এবং অভীষ্টপ্রদানকারী হিমালয়-কন্যা পার্বতীর পুত্র গণপতিকে প্রণাম করি। গণেশের প্রণাম মন্ত্রটি নিমণ রূপ।
 ওঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননম্।
                                                          বিঘ্ন বিনাশকং দেবং হেরম্বং প্রণমম্যহং।।
-একদন্ত, মহাকায়, লম্বা উদরবিশিষ্ট, বিঘ্ননাশকারী, দীনপালক গজাননকে প্রণাম করি।

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

চতুরাশ্রম

চতুরাশ্রম 

ব্রহ্মসূত্রে বলা হয়েছে ‘‘বিহিতত্বচ্চাশ্রম কর্মাপি’’ অর্থাৎ আশ্রম বিহিত কর্ম সকলেরই করণীয়। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস এই চার প্রকার আশ্রমক চতুরাশ্রম বলে। ছান্দোগ্য উপনিষদের ৬২৮ নং মন্ত্রে চতুরাশ্রম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘‘ব্রহ্মা প্রজাপতিকে, প্রজাপতি মনুকে এবং মনু মানবগণকে এই তত্ত্ব বলেছিলেন। যিনি আচার্য্যকুলে গুরুসেবা করে অবসর সময়ে যথাবিধি অধ্যয়ন করেন, তারপর গার্হস্থ্য আশ্রমে ফিরে পবিত্রস্থানে বেদ পাঠ করেন, ধার্মিক পুত্রের পিতা হন, সমস্ত ইন্দ্রিয়কে আত্মাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, তীর্থ ভিন্ন অন্যত্র হিংসা ত্যাগ করেন এবং যাবজ্জীবন এই রকম আচরণ করেন, তিনি মৃত্যুর পর ব্রহ্মলোকে যান, তাঁকে আর ফিরে আসতে হয় না’’।
চতুরাশ্রম

আশ্রম বলতে মূলত কোন আশ্রয়-স্থলকে বোঝায়, যেমন- ব্রহ্মচারীর আশ্রয় গুরুগৃহ, গৃহীর আশ্রয় গৃহ, বানপ্রস্থীর আশ্রয় বন এবং সন্ন্যাসীর আশ্রয় বন, মঠ, মন্দির বা সর্বত্র। ধর্মশাস্ত্রে সমগ্র মানব-জীবনকে চারটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্য। জন্মের পর থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করা সকলের কর্তব্য। পঁচিশ বছর পর ব্রহ্মচর্যাশ্রম শেষে বিবাহ-পূর্বক গার্হস্থ্য আশ্রমে প্রবেশ করে পঞ্চাশ বৎসর পর্যন্ত সংসারধর্ম পালন করা আবশ্যক। তারপর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলে বনে গিয়ে বানপ্রস্থ অবলম্বন এবং পঁচাত্তর বছর হতে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সন্ন্যাস অবলম্বন কতর্ব্য। তবে যুগের সাথে অনেক ধর্মীয় আচার, রীতি-নীতি, বিধান প্রভৃতি পরিবর্তিত হয় কিন্তু ধর্মের পরিবর্তন ঘটে না। বর্তমান যুগে বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস অবলম্বন করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ যুগে ব্রহ্মচর্য ও গার্হস্থ্য আশ্রম অবলম্বন করাই সকলের অবশ্য কর্তব্য কিন্তু যারা মুমুক্ষু অর্থাৎ যাদের মুক্তিলাভের তীব্র ইচ্ছা রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই সন্ন্যাস অবলম্বন করতে হবে। নীচে চারটি আশ্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।

ব্রহ্মচর্য

যিনি ব্রহ্মে বিচরণ করেন, তিনিই ব্রহ্মচারী। বীর্যধারণ, গুরুগৃহে গিয়ে শিক্ষালাভ এবং গুরুসেবাই ব্রহ্মচারীর প্রধান কর্তব্য। ব্রহ্মচারীকে ঊর্ধরেতা হতে হবে। যার রেতঃ (বীর্য) ঊর্ধগামী তিনিই ঊর্ধরেতা। ব্রহ্মচারীর বীর্য নীম্নগামী করা অনুচিত। কিন্তু কেন বীর্যকে ধারণ করতে হবে? জ্ঞানসঙ্কলিনীতন্ত্রে বলা হয়েছে- ব্রহ্মচর্যই তপস্যার মধ্যে উৎকৃষ্ট। যিনি এই তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে ঊর্ধরেতা হয়েছেন, তিনিই মনুষরূপী দেবতা। পতঞ্জল যোগসূত্রে বলা হয়েছে, ‘‘ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠায়াং বীর্যলাভঃ’’ অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করলে শক্তি লাভ হয়। আমাদের শরীরে রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা, শুক্র (বীর্য) ও ত্বক এই সাতটি ধাতু রয়েছে। রস থেকে রক্ত, রক্ত থেকে মাংস, মাংস থেকে মেদ, মেদ থেকে অস্থি, অস্থি থেকে মজ্জা এবং মজ্জা থেকে শুক্র উৎপন্ন হয়। এই সপ্তধাতুর তেজই ওজঃশক্তি বা ব্রহ্মতেজ। শুক্র নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজঃশক্তিও নষ্ট হয়। তাই কখনই ব্রহ্মচারীর এই ব্রহ্মতেজ ক্ষয় করা উচিত নয়।

ব্রহ্মচারীদের সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পূর্বে অর্থাৎ ব্রহ্মমূর্হুতে শয্যাত্যাগ করে শুচি হয়ে জপ-ধ্যান করা বিধেয়। তাঁদের প্রাতঃকাল, মধ্যাহ্নকাল এবং সন্ধ্যাকাল এই তিন সময়ে সণান করতে হয়। তাঁদের কৃষ্ণাজিন অর্থাৎ কৃষ্ণসার মৃগের চামড়া দ্বারা নিমির্ত উত্তরীয় এবং শাণ অর্থাৎ শণনির্মিত অধোবসন পরা কর্তব্য। তাঁরা মুঞ্জা নামক এক প্রকার তৃণ নির্মিত মেখলা (কটিসূত্র অর্থাৎ কটিতে বাঁধার রজ্জু) ধারণ করেন। তিনটি গুণবিশিষ্ট মেখলা সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণকে প্রকাশ করে। তবে মুঞ্জাতৃণের অভাবে কুশ দ্বারা মেখলা প্রস্ত্তত করা যায়। তাঁরা কার্পাস সূত্র দ্বারা নির্মিত উপবীত বা পৈতা ধারণ করেন। ব্রহ্মচারীগণ কাষ্ঠ নির্মিত দণ্ড ধারণ করেন। বিল্ব, পলাশ প্রভৃতি কাষ্ঠ দ্বারা ব্রহ্মচারীর দণ্ড নির্মাণ করতে হয়। দণ্ডের উচ্চতা পা হতে মাথা পর্যন্ত হওয়া আবশ্যক। উপবীত বা উত্তরীয় বাম কাঁধে অবস্থিত এবং ডান কাঁধে অবলম্বিত করা অবস্থায় ব্রহ্মচারীকে উপবীতী বলে। আবার উপবিত বা উত্তরীয় ডান কাঁধে অবস্থিত এবং বাম কাঁধে অবলম্বিত করা অবস্থায় ব্রহ্মচারীকে প্রাচীনাবীতী বলে। কণ্ঠে সরলভাবে মালার মত অবলম্বিত উপবীত বা বস্ত্রবিশিষ্ট ব্রহ্মচারীকে নিবীতী বলে।

ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে দণ্ড, মেখলা (কটিসূত্র) ও জটাধারণ বা শিখা-সূত্র (টিকী) ধারণ, ভূমিতে শয়ন, গুরু-শুশ্রূষা, ভিক্ষা প্রভৃতি ব্রহ্মচারীর ধর্ম। কূর্ম পুরাণে বলা হয়েছে, ভিক্ষাচারণ, গুরু-শুশ্রূষা, বেদপাঠ, সন্ধ্যাকার্য ও অগ্নিকার্য এই সমুদয় ব্রহ্মাচারীর ধর্ম। কূর্ম পুরাণের অন্যত্র বলা হয়েছে, ব্রহ্মচারী দুই প্রকার, যথা- উপকুর্বাণ এবং নৈষ্ঠিক। যিনি যথাবিধি বেদ অধ্যয়ন করে গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ করেন, তিনি উপকুর্বাণ ব্রহ্মচারী। আর যিনি ব্রহ্মচর্য আশ্রম শেষে গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ করেন না অর্থা সারা জীবন ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করেন, তিনি নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী। মনুসংসহিতায় ব্রহ্মচারীর যে দ্বায়িত্ব-কর্তব্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তা নিচে সংক্ষিপ্তাকারে দেয়া হল-
§    - প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে দেবতা ও পিতৃ-পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ বা জলদান করা।
§    - দেবতাদের পূজা করা।
§    -সকাল ও সন্ধ্যায় সমিধ দ্বারা হোম করা।
§   -মধু, মদ, মাংস, কর্পূর-চন্দন প্রভৃতি চিত্তে উন্মাদনা সৃষ্টিকারী গন্ধদ্রব্য, পুষ্পমাল্য, গুড়, স্ত্রীসঙ্গ, দধি জাতীয় খাদ্য এবং প্রাণিহিংসা বর্জন করা।
§    -অভ্যঙ্গ রূপ তেল, চোখের কাজল, চামড়ার পাদুকা (জুতা), ছাতা, বিষয়-বাসনা এবং নৃত্য-গীত পরিত্যাগ করা।
§    -একাকী ভূমিতে শয়ন করা।
§    -রেতঃপাত (শুক্রপাত) না করা।
§    -অনিচ্ছাবশত স্বপ্নাবস্থায় শুক্রপাত হলে স্নান করে গন্ধপুষ্পের দ্বারা সূর্যদেবের অর্চনা করে ‘‘পুনর্মামৈতু ইন্দ্রিয়ম্’’ (আমার বীর্য পুনরায়-আমাতে ফিরে আসুক) এই মন্ত্র তিন বার জপ করা
§    -আচার্যের জন্য কলসপূর্ণ জল, ফুল, গোবর, মাটি, কুশ প্রভৃতি সংগ্রহ করা।
§    -প্রতিদিন ভিক্ষা করে অন্ন সংগ্রহ করা।
§    -গুরুকুলে, পিতৃকুলে এবং মাতৃকুলে ভিক্ষা না করা।
§    -কেবল একজন ব্যক্তির নিকট ভিক্ষা না করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বহু লোকের নিকট ভিক্ষা করা।
§    -প্রতিনিয়ত বেদ অধ্যয়ন করা।
§    -স্ত্রী বিষয়ে চিন্তা না করা এবং স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করা।
§    -মাতা, পিতা ও আচার্যকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করা এবং তাদের যথাসাধ্য সেবা-শুশ্রূষা করা।

উপনয়ন হওয়ার পরে গুরুর নির্দেশমত কর্ম করাই ব্রচারীর কতর্ব্য। মনুসংহিতায় গুরুর প্রতি ব্রহ্মচারীর যে দায়িত্ব-কর্তব্য বর্ণিত আছে, তা এরকম-
§     -ব্রহ্মচারী গুরুর মুখের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে বা হাত জোড় করে দাড়িয়ে থাকবে। গুরু বসতে না বলা পর্যন্ত ব্রহ্মচারী বসতে পারবে না।
§     -গুরু খেতে না বলা পর্যন্ত ব্রহ্মাচারী খেতে পারবে না।
§     -ব্রহ্মচারী গুরুর তুলনায় নিম্নস্তরের খাদ্য গ্রহণ এবং নিম্নস্তরের বস্ত্র পরিধান করবে।
§    - গুরু নিদ্রা যাওয়ার পর ব্রহ্মচারী নিদ্রা যাবে এবং গুরুর নিদ্রাভঙ্গের পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করবে।
§     -ব্রহ্মচারী গুরুর নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করবে।

মনুসংহিতায় ব্রহ্মচারীকে মস্তক মুণ্ডন করার অথবা জটা রাখার অথবা মস্তকের মধ্যস্থলে শিখা রেখে অবশিষ্ট কেশ মুণ্ডন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুরাণে ব্রহ্মচারীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্রহ্মচারী প্রাতঃকলে সূর্য এবং সন্ধ্যাকালে অগ্নির উপাসনা করবে এবং উপাসনার পর গুরম্নকে অভিবাদন করবে। গুরু অবস্থান করলে শিষ্যও অবস্থান করবে, গুরু গমন করলে শিষ্য গমন করবে এবং গুরু বসলে থাকলে শিষ্যও বসবে। ব্রহ্মচারী গুরুর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। গুরুর আজ্ঞায় বেদ অধ্যয়ন করবে, পরে গুরুর আজ্ঞা অনুসারে ভিক্ষা করে সংগ্রহ করা অন্ন ভোজন করবে। গুরু স্নান করার পর শিষ্য স্নান করবে এবং প্রতিদিন প্রাতঃকালে ব্রহ্মচারী গুরুর জন্য কুশ, জল ও পুষ্প সংগ্রহ করবে। ব্রহ্মচারীদের অবশ্যই স্বত্ত্বগুণের অধিকারী হতে হবে। শুভ্র বা সাদা রং মূলত স্বত্ত্বগুণের প্রতীক। তাই ব্রহ্মচারীদের সাদা বস্ত্র এবং সাদা উত্তরীয় পরিধান করা কর্তব্য। তাদের সব সময় সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করতে হবে। গুরুগৃহে বেদ অধ্যয়ন সম্পন্ন করার পর ব্রহ্মচারীকে স্নাতক বলে। সণাতক ব্রহ্মচারীকে গুরুদক্ষিণা প্রদান করতে হয়। তারপর সণাতক ব্রহ্মচারীর উদ্দেশ্যে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গুরু ব্রহ্মচারীকে নানা উপদেশ দিয়ে গৃহস্থ আশ্রমে প্রবেশের অনুমতি দান করেন। সমাবর্তন শেষে ব্রহ্মচারী বিবাহকার্য সম্পন্ন করে গার্হস্থ্য আশ্রমে প্রবেশ করে।

জীবনের শুরুতেই এত কঠোর ব্রত কেন? শুরুতেই যদি কঠোর ব্রত না করা হয় তবে গার্হস্থ্য জীবনে খুব সহজেই দেহটা পাপবিদ্ধ হরে পড়বে। তাই ব্রহ্মচারী কঠোর ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে সংসারে প্রবেশ করলে কোন পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না এবং ভবিষ্যতে সন্ন্যাস নেয়ার পথ সুগম হবে।

গার্হস্থ্য আশ্রম 

ব্রহ্মচর্য আশ্রমে সত্ত্বগুণের প্রাধান্য থাকলেও গার্হস্থ্য আশ্রমে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনগুণের সমন্বয় সাধিত হয়। ব্রহ্মা- পুরাণে আছে, বিবাহ, অগ্নিস্থাপন, অতিথি-সৎকার, যজ্ঞ, শ্রাদ্ধ এবং সমত্মান উৎপাদন গৃহস্থের ধর্ম । কূর্মপুরাণে বলা হয়েছে, গৃহস্থ-আশ্রমই শ্রেষ্ঠ এবং অন্যত্র বলা হয়েছে, অগ্নিরক্ষা (হোম), অতিথিসেবা, যজ্ঞ, দান ও দেবপূজা হল গৃহস্থের ধর্ম। গৃহস্থ বা গৃহী দুই প্রকার, যথা- উদাসীন ও সাধক। যিনি ঋণত্রয় হতে মুক্ত হয়ে, ধন সম্পদ ও স্ত্রী-পুত্র পরিহার করে মোক্ষলাভের আশায় একাকী বিচরণ করেন, তিনি উদসীন গৃহী এবং যিনি অতিথি সেবায় নিযুক্ত, তিনিই সাধক গৃহী। গৃহস্থের যে ধর্ম মনুসংহিতার বর্ণনা করা হয়েছে তা এরকম-
                                                                                                                            
§     -পিতা-মাতা, ঋষি ও পিতৃপুরুষদের পুজা ও স্তব-স্তুতি করা।
§     -অতিথিসেবা, পিতৃপুরুষদের শ্রাদ্ধকার্য এবং জীবসেবা করা।
§     -পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন তর্পণ বা জলদান করা।
§     -‘‘অগ্নয়ে স্বাহা’’ মন্ত্রে অগ্নি দেবতার উদ্দেশ্যে এবং ‘‘সোমায় স্বাহা’’ মন্ত্রে সোমদেবতার উদ্দেশ্যে হোম করা এবং পরে ‘‘অগ্নি সোমাভ্যং স্বাহা’’ মন্ত্রে একত্রে ঐ দুই দেবতার উদ্দেশ্যে হোম করা।
§     -বিশ্বদেবগণ, ধন্বন্তরি, কুহু, অনুমতি, প্রজাপতি ব্রহ্ম, দ্যাবাপৃথিবী এবং শেষে স্বিষ্ঠকৃৎ নামক অগ্নির উদ্দেশ্যে হোম করা।
§    - দশদিক প্রদক্ষিণ করে দশদিকপালগণকে প্রণাম করা।
§     -ব্রাহ্মণ সেবা করা।
§     -সূর্যাস্তের পর গৃহে কোন অতিথি আসলে তাকে ফিরিয়ে না দিয়ে তার সেবা-যত্ন করা।
§     -দেবগণ, ঋষিগণ, পিতৃপুরুষগণ এবং পরিচালকবর্গের ভোজন শেষে যে অন্ন অবশিষ্ট থাকবে, তা ভোজন করা ।
§     -দেবগণ, ঋষিগণ, পিতৃপুরুষগণ এবং গৃহদেতাকে পূজা করার পর সস্ত্রীক ভোজন করা। 
§     -ঋতুকালে স্ত্রীগমন করা।
§     -মাতা, পিতা ও গুরুর সেবা করা।
§     -সন্তান প্রতিপালন করা।

মহানির্বাণতন্ত্রে গৃহস্থের প্রতি যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা এরকম- গৃহস্থ ব্রহ্মনিষ্ঠ ও ব্রহ্মজ্ঞানপরায়ণ হবে, সর্বকর্ম ব্রহ্মে সমার্পণ করবে, কখনও মিথ্যা কথা বলবে না, সর্বদা কপট-আচরণ পরিত্যাগ করবে, দেবতা ও অতিথি পূজায় নিয়োজিত হবে, পিতা-মাতা ও দেবতাকে রক্ষনাবেক্ষণ করবে, পুত্রগণকে বিদ্যা-শিক্ষা অর্জন করাবে, স্বজন ও বন্ধুবান্ধবগণকে ভরণপোষণ করবে এবং গুরুজন ও আত্মীয়বর্গের সেবা করবে। বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে- গৃহস্থগণ পিণ্ডদানাদি দ্বারা পিতৃগণের, যজ্ঞ দ্বারা দেবগণের, অন্ন দ্বারা অতিথিগণের, বেদ অধ্যয়ন দ্বারা ঋষিগণের, পুত্র উৎপাদনের দ্বারা প্রজাপতি ব্রহ্মার, বলি-কর্ম দ্বারা প্রাণিগণের এবং সত্যবাক্য দ্বারা সমগ্র পৃথিবীর অর্চনা করে উত্তমলোক গমন করেন। বিষ্ণু পুরাণে আরো বলা হয়েছে, ব্রহ্মচারী এবং সন্ন্যাসীদের ভিক্ষা দেওয়া গৃহস্থের একান্ত কর্তব্য কারণ গৃহস্থই তাঁদের আশ্রয়। সন্ধ্যাকালে কোন অতিথি বা সন্ন্যাসী আসলে তাঁকে অবশ্যই আশ্রয় দেওয়া কর্তব্য। অতিথির প্রতি অবজ্ঞা, কোন কিছু দান করে পরিতাপ, প্রত্যাখ্যান ও নিষ্ঠুরতা- এসব গৃহস্থের জন্য বর্জনীয়। ব্রহ্মচর্য অবলম্বনকালে মস্তক-মুণ্ডন, জটা রাখা, টিকি রাখা প্রভৃতির নির্দেশ থাকলেও গৃহস্থ আশ্রমে গৃহী চুল রাখতে ও অঙ্গসজ্জা করতে পারবে। ব্রহ্মচর্য অবলম্বনকালে সাদা বস্ত্র পরিধানের নির্দেশ থাকলেও গৃহস্থ আশ্রমে রঙ্গীন বস্ত্র পরিধান করা যাবে। এছাড়াও মাছ-মাংস ভক্ষণ করা যাবে। তেল ও গন্ধদ্রব্য সহ সকল ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার এবং গীত-বাদ্য শ্রবণ করা যাবে।

বানপ্রস্থ

বিষ্ণুপুরাণে আছে- বানপ্রস্থ আশ্রমী বনে বাস করে কেশ, শ্মশ্রু (দাড়ি) ও জটা ধারণপূর্বক ফল-মূল ও বৃক্ষের পত্র আহার করবেন। তিনি ভূমিতে শয়ন করবেন এবং সকল প্রকার অতিথি পূজা করবেন। তিনি চর্ম, কাশ ও কুশ দ্বারা পরিধেয় বস্ত্র ও উত্তরীয় তৈরি করবেন। প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা, দেবপূজা, হোম, অতিথি-সৎকার, ভিক্ষুককে ভিক্ষা দান প্রভৃতি বনবাসীর কর্তব্যকর্ম। গায়ে বনজ তৈল মাখবেন এবং শীত-গ্রীষ্ম সহ্য করে তপস্যা করবেন। কূর্ম পুরাণে আছে, হোম, ফল-মূল আহার, বেদপাঠ, তপস্যা এবং যথাবিধি সংবিভাগ (সম্পদ বিভাগ) বানপ্রস্থীর ধর্ম।

যখন গৃহস্তের নিজ দেহে বলি (চর্মে শিথিলতা) ও পলিত (চুলের পক্কতা) উপস্থিত হবে এবং যখন পৌত্র (নাতি) ভূমিষ্ঠ হবে, তখন বনে গমন করা কর্তব্য। বনে গমনের পূর্বে বনে যেতে অনিচ্ছুক পত্নীকে পুত্রের হাতে সমর্পণ করা কর্তব্য। বানপ্রস্থীদের শাক-ফল-মূল আহার এবং পঞ্চমহাযজ্ঞের (ব্রহ্মযজ্ঞ, দেবযজ্ঞ, পিতৃযজ্ঞ, ভূতযজ্ঞ ও নৃযজ্ঞ) অনুষ্ঠান করা কর্তব্য। বানপ্রস্থী নিজে যা ভক্ষণ করবেন তা থেকে সাধ্যমত ভূতবলি দেবেন, ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেবেন, আশ্রমে আগত অতিথিদের জল-ফল-মূলাদির দ্বারা অর্চনা করবেন এবং বেদ অধ্যয়ন ও যাগ-যজ্ঞ সম্পাদন করবেন। ফলমূল ছাড়াও তাঁরা বন্যশস্য পাক করে ভোজন করতে পারবেন। তাঁদের শুধু রাত্রিবেলা ভোজন করা কর্তব্য। মনুসংহিতায় বানপ্রস্থ-আশ্রমীর কর্তব্য-কর্ম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল। 
§     -ধান, যব, গম প্রভৃতি শস্য আহার করবে এবং গরু-ঘোড়া, বস্ত্র, আসন-শয্যা পভৃতি পরিচ্ছদ ত্যাগ করে বনে গমন করবে।
§     -স্ত্রী বনে যেতে চাইলে তাকে সঙ্গে নিতে পারবে কিন্তু যেতে না চাইলে তাকে পুত্রের হাতে অর্পণ করে বনে যাবে।
§     -মুনিগণের ব্যবহার্য পবিত্র অন্ন অথবা শাকসবজি, ফল প্রভৃতি ভোজন করবে।
§     - শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে পঞ্চমহাযজ্ঞ করবে।
§     -বানপ্রস্থাশ্রমী মৃগ বা হরিণের চর্ম অথবা বস্ত্রখণ্ড পরিধান করবে।        
§     -ঊষাকালে এবং সন্ধ্যাকালে সণান করবে।
§     -জটা শ্মশ্রু (দাড়ি), লোম ও নঁখ ধারণ করবে।
§     -ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেবে এবং অতিথি-সেবা করবে।
§     -স্বাধ্যায় (বেদ অধ্যয়ন) করবে।
§     -সকল জীবে দয়া করবে।
§     -প্রিয়ভাষী হবে।
§     -আশ্রমীদের নিকট দান গ্রহণ করবে না।
§     -দানধর্ম পালন করবে।
§     -অগ্নিত্রয় নিয়ে শ্রৌতকর্ম, যজ্ঞ ও হোম করবে।
§     -মধু ও মাংস বর্জন করবে।
§     -পিতৃতর্পণ ও দেবতপর্ণ করবে।
§     -মৌনতা অবলম্বন করবে
§     -শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা জয় করার জন্য নানা কঠোর তপস্যা করবে।

সন্ন্যাস

‘ন্যাস’ শব্দের অর্থ হল ত্যাগ। সম্যক রূপে যে ত্যাগ, তাই সন্ন্যাস। মলত বিষয়-বাসনা বা সংসারচিন্তা ত্যাগের নামই সন্ন্যাস। শাস্ত্রে বানপ্রস্থের পর পঁচাত্তর বছর বয়সে সন্ন্যাস নেয়ার কথা বলা হলেও যে কোন বয়সেই সন্ন্যাস নেয়া যায়। যদি যৌবনেই কারও বিষয়-বাসনা ও কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি না থাকে এবং মুক্তিলাভের তীব্র ইচ্ছা থাকে, তবে তিনি ব্রহ্মচর্যের পরই সন্ন্যাস আশ্রম আলম্বন করতে পারবেন। সন্ন্যাস গ্রহণের একমাত্র উদ্দেশ্য মুক্তিলাভ। ব্রহ্মা- পুরাণে বলা হয়েছে, স্বস্তিকাদি আসন অভ্যাস, বস্ত্রে ভিক্ষা গ্রহণ, চৌর্য পরিত্যাগ, শুচিতা, অপ্রমাদ, স্ত্রীসম্ভোগ পরিহার, ক্রোধত্যাগ, সর্বজীবে দয়া, গুরু-শুশ্রূষা ও সত্য বাক্য বলা এই কয়েকটি ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীর ধর্ম। এছাড়াও সন্ন্যাসীদের আচার শুদ্ধি, নিয়ম, প্রতিকর্ম ও সর্বভূতে সমদর্শন এই পাঁচটি উপব্রত রয়েছে। মহানির্বাণতন্ত্রে বলা হয়েছে, সন্ন্যাসী পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, গ্রামবাসী সকলের অনুমতি নিয়ে দেবতাকে প্রণাম করে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে গৃহ ত্যাগ করবেন। পিতৃঋণ, দেবঋণ ও ঋষি ঋণ হতে মৃক্তিলাভের জন্য তিনি পিতৃগণ, দেবগণ ও ঋষিগণের পূজা করবেন। তিনি আবাস-গৃহশূন্য, ক্ষমাশীল, মায়া-মমতাশূন্য, অহঙ্কারশূন্য, ধীর, জিতেন্দ্রিয়, সুখে-দুঃখে সমজ্ঞানী হবেন। তিনি অর্জিত বস্তু রক্ষা এবং অলব্ধ বস্ত্ত লাভ করতে চেষ্টা করবেন না। তাঁকে শীত-গ্রীষ্ম সহিষ্ণু হতে হবে। তিনি শুভ ও অশুভ সকল বিষয় সমানভাবে দেখবেন। সন্ন্যাসী ধাতুদ্রব্য, পরনিন্দা, মিথ্যা ব্যবহার, স্ত্রীসঙ্গ, হিংসা, ক্রোধ প্রভৃতি পরিত্যাগ করবেন। সন্ন্যাসী ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল সকলের অন্ন স্থান-কাল-পাত্র বিবেজনা না করেই ভোজন করবেন। তিনি বেদ-শাস্ত্র যথাবিধি অধ্যয়ন করবেন। মনুসংহিতায় সন্ন্যাসীর যে কর্তব্য-কর্মের কথা উলেস্নখ আছে তার সংক্ষিপ্তকারে নিচে দেয়া হল। 
§     -সন্ন্যাসি দণ্ড, কমুণ্ডলু, কৃষ্ণাজিন (কৃষ্ণমৃগের চামড়া) প্রভৃতি ধারণ করবেন।
§     -কোন কামনার বস্তু সামনে এসে পড়লেও তাতে আকৃষ্ট হবেন না।
§     -সকলের সঙ্গ ত্যাগ করে মমতাশূন্য হয়ে একাকী বিচরণ করবেন।
§     -সব সময় নির্জন স্থানে বাস করবেন। কেবলমাত্র অন্ন সংগ্রহের জন্য লোকালয়ে গৃহস্থের নিকট যাবেন।
§     -মাটির তৈরী ভাঙা শরা প্রভৃতি ভিক্ষা-পাত্রে ভিক্ষা করবেন, বাসের জন্য গাছতলায় আশ্রয় নিবেন এবং ছেড়া ও মোটা কৌপিনাদি বস্ত্র পরিধান করবেন।
§     -মৌনতা অবলম্বন করবেন এবং কথা বলার প্রয়োজন হলে সত্য বাক্য বলবেন।
§     -মৃত্যুকে অভিনন্দন জানাবেন না আবার জীবনকেও প্রশংসা করবেন না।
§     -হাটার সময় এমন ভাবে পা ফেলবেন যাতে কোন কীট না মারা যায়। কাপড় দিয়ে ছেকে জল পান করবেন যাতে পেটে গিয়ে জলের কীট না মারা যায়।
§     -কেউ যদি অপ্রিয় কথা বলে বা আশোভনীয় আচরণ করে তা সহ্য করবেন এবং কারো সাথে শক্রতা করবেন না।
§     -কেউ যদি তাঁর উপর ক্রোধান্বিত হয়, তবু্ও তার প্রতি ক্রোধান্বিত হবেন না।
§     -সন্ন্যাসী কেশ মুণ্ডিত করবেন এবং নখ ও শ্মশ্রু কেটে ফেলবেন।
§     -সন্ন্যাসী ভিক্ষা করে একবার ভোজন করবেন। অতিরিক্ত ভিক্ষা করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করবেন না।
§    -সন্ন্যাসী তপস্যা-ধানে অধিকাংশ সময় ব্যয় করবেন। সন্ন্যাসী কর্তৃক কোন প্রাণী নিহত হলে পাপমুক্তির জন্য স্নান করে ছয়বার প্রাণায়াম করবেন।

সন্ন্যাসীরা জীবন্মুক্ত অর্থাৎ তাঁরা জীবিত হয়েও মুক্ত স্বভাবের। তাই সন্ন্যাসীদের মৃত্যুর পর দাহ করা অনুচিত। তাঁদের মৃত্যুতে কারও অশৌচও হয় না। যা হোক, কালের বিবর্তনে অনেক বিধি-বিধানই পরিবর্তিত হচ্ছে। গুরুগৃহে গমনপূর্বক শিক্ষা অর্জনের প্রথা ইদানিং নেই বললেই চলে, বনে গমনেরও সুব্যবস্থা নেই এবং সন্ন্যাসও বাধ্যতামূলক নয়। ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকলে গৃহে থেকেও ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করা যায়।