7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

পূজা পদ্ধতি

পূজা পদ্ধতি 

পূজা অর্থ কি

    এখন পূজার তাৎপর্য বর্ণনা করা যাক। “গৌরবিত-প্রীতি হেতু ক্রিয়া পূজা” অর্থাৎ গৌরবিতের (মহান) প্রীতির জন্য যে সকল কর্ম করা হয় তাকে পূজা বলে। বর্তমান সময়ে বৈদিক-যজ্ঞের প্রচলন নেই বললেই চলে। যজ্ঞের স্থলে প্রচলিত হয়েছে পূজা। তবে এখনও ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু যজ্ঞের প্রচলন রয়েছে। যাগ-যজ্ঞ মূলত বেদের কর্মকাণ্ডের অন্তর্গত।বেদে ভক্তিবাদের প্রাধান্য ছিল না। পরবর্তিতে ভক্তিবাদের সূচনার ফলে পূজার প্রচলন হয়েছে। বেদ অনুসারে যজ্ঞ এবং তন্ত্র অনুসারে পূজা সৃষ্টি হয়েছে। তবে পূজায় কিছু বৈদিক মন্ত্র ও রীতিনীতিরও প্রতিফলন রয়েছে। 

পূজা কত প্রকার

    পূজা প্রধানত দুই প্রকার, যথা বাহ্য পূজা এবং অন্তর পূজা বা মানস পূজা। খড়-মাটির প্রতীমা গড়ে গন্ধ, ফুল, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য প্রভৃতি উপকরণের মাধ্যমে পূজাকে বাহ্য পূজা বলে। হৃদয়-আসনে দেবতাকে বসিয়ে মনের মধ্যেই পূজার সব উপাচার আছে এই রকম চিন্তা করে মনোময় উপাচারের মাধ্যমে যে পূজা, তাকে মানস পূজা বলে। পূজার সময় দেবতার ঐশ্বর্য ও রূপ-গুণ চিন্তা করার জন্য প্রতীমা গড়া হয় ঠিকই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অন্তরের দেবতাকেই পূজা করা হয়। অন্তরেই স্বর্গ এবং সেখানেই দেবতাদের বাস। কিন্তু মনে সব সময় দেবতার চিন্তা আসে না। তাই ভক্তি উৎপাদনের জন্য দেবতার সাকার রূপ কল্পনা করা আবশ্যক। বস্তুত দেবতার মূর্তিতে বাহ্য উপকরণে পূজার ছলে মূলত অন্তরের দেবতাকেই পূজা করা হয়। পূজার প্রতিটি অংশের অন্তরালে রয়েছে এক গভীর দর্শন। পূজার বিধান, মন্ত্র এবং পূজার বিভিন্ন অঙ্গের তাৎপর্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই পূজার দর্শন বোঝা সম্ভব হবে। নিচে পূজার বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।

পূূজা

নিত্য পূজা পদ্ধতি

পূজা পদ্ধতি : আচমন ও সূর্যার্ঘ্য দান

    পূজার প্রথমেই পূজককে পরিশুদ্ধ হতে হবে। বাহ্য ও অন্তর উভয়েরই শুদ্ধতা আবশ্যক। আচমনের মাধ্যমে মূলত দেহ-শুদ্ধি করা হয়। ডানহাতে একটিমাত্র মাষকলাই ডুবতে পারে এমন পরিমান জল গ্রহণ করে “ওঁ শ্রী বিষ্ণু” তিন বার বলে ঐ জল তিন বার পান করতে হয়। তারপর এই বৈদিক মন্ত্র পাঠ করতে হয়, যথা “ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম” অর্থাৎ আকাশে বিস্তৃত দিক্শক্তির ন্যায় বিষ্ণুর পরম পদ জ্ঞানি গণ সর্বদা দর্শন করেন। শুদ্ধির জন্য প্রথমেই বিষ্ণুকে স্মরণ করতে হয় কেন? বেদে বিষ্ণু ও সূর্য একই দেবতা। বিষ্ণুর পরম পদ বলতে মূলত বিষ্ণু বা সূর্যের তিনটি স্থানকে বোঝায়। সূর্য উদয়ের সময়, মধ্যাহ্নের সময় এবং অস্ত যাওয়ার সময় তিনটি স্থানে থাকেন এবং এই তিনটি স্থানকেই তিনটি পদ রূপে কল্পনা করা হয়েছে। বিষ্ণু বা সূর্য আলো দিয়ে অন্ধকার দূর করেন বলে সূর্য জ্ঞান স্বরূপ। মনে জ্ঞানের আলো প্রবেশ করলে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর হয় এবং মন নির্মল বা শুদ্ধ হয়। তাই মনের আকাশে যদি সূর্য বা বিষ্ণুর পদ ধারণ করা যায় তবে মনে আর অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা আসতে পারবে না। তাছাড়া বিষ্ণু হলেন পালনকর্তা, তাই শুরুতেই দেহ ও মন শুদ্ধ করার জন্য বিষ্ণুকে স্মরণ করা একান্ত আবশ্যক। পূর্বে উল্লেখিত মন্ত্রের পরিবর্তে নিম্নোক্ত মন্ত্রও পাঠ করা যায়, যথা

অপবিত্রঃ পবিত্রা বা সর্ববস্থাং গতোহপি বা।

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তর শুচিঃ।।

অর্থাৎ মানুষ পবিত্র বা অপবিত্র যে অবস্থায় থাকুক না কেন সর্ব অবস্থায়ই পদ্মলোচন বিষ্ণুকে স্মরণ করলে দেহ ও মন শুদ্ধ হয়। এরপর সূর্যার্ঘ্য দিতে হয়। গন্ধ, পুষ্প, আতপ তণ্ডুল (চাল), যব, তিল, শ্বেত সর্ষপ (সরিষা) এবং দূর্বার সমাবেশকে অর্ঘ্য বলে। তবে অন্যান্য দ্রব্যের অভাবে কেবল আতপ তণ্ডুল ও দূর্বা দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করা যায়। সূর্যার্ঘ্য প্রদানের জন্য কুশীর অগ্রভাদে দূর্বা, আতপ তণ্ডুল, রক্তচন্দন ও রক্তজবা অভাবে যে কোন লালবর্ণের ফুল সাজিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে সূর্যকে অর্ঘ্য প্রদান করতে হয়

নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে।

জগৎসবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িনে ।।

ইদমর্ঘ্য ওঁ নমো শ্রীসূর্যায় নমঃ।

অর্থাৎ হে বিবস্বান, তুমি জগৎ প্রকাশক, বিষ্ণুর তেজঃ সরূপ, জগৎ সৃষ্টিকারী, জগতের সকল বস্তুর প্রাণ স্বরূপ, প্রাণিজগতের কর্মে প্ররোচক সূর্যকে নমস্কার। ভগবান সূর্যকে এই অর্ঘ্য প্রদানপূর্বক নমস্কার করি। তারপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে সূর্যকে প্রণাম করতে হয়।

ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।

ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতৌহস্মি দিবাকরম্ ।।

অর্থাৎ জবা কুসুমের মত রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, মহাদ্যুতি সম্পন্ন, অন্ধকারের শত্রু, সকল পাপনাশক দিবাকরকে আমি প্রণাম করি।

পূজা পদ্ধতি : গন্ধাদির অর্চনা

    গন্ধাদ্রব্যের অর্চনার জন্য প্রথমে “বং এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ” এই মন্ত্রে গন্ধাদির উপর তিন বার জল ছিটাতে হয়। গন্ধ বলতে মূলত চন্দনকেই বোঝায়। “বং” বীজ মন্ত্রটি মূলত জলকে নির্দেশ করে। তাই জল ছিটানোর সময় যে মন্ত্র পাঠ করা হয় তার শুরুতেই বং রয়েছে। তারপর গন্ধপুষ্প (চন্দন মাখানো পুষ্প) দ্বারা নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে অর্চনা করতে হয়।

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ এতৎ অধিপতয়ে ওঁ শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ

ওঁ এতৎ সম্প্রাদানায় পূজণীয় দেবতাভ্যো নমঃ।

অর্থাৎ এই গন্ধপুষ্প সহকারে গন্ধাদিকে প্রণাম, এসবের অধিপতি বিষ্ণুকে প্রণাম এবং এসব যাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হবে সে পূজনীয় দেবতাকে প্রণাম। প্রতিবার নমঃ বলার পরে একটি গন্ধপুষ্প পূজাপাত্রে রাখতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : গণেশাদির অর্চনা

যে কোন দেবতার পূজার পূর্বে গণেশের পূজা করা বিধেয়। গণেশ, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা ও সূর্য এই পাঁচ জন দেবতাকে একত্রে পঞ্চদেবতা বলে। ক্রমে ক্রমে গণেশ, শিবাদি পঞ্চ দেবতা, নবগ্রহ, ইন্দ্র আদি দশদিকপালগণ, মৎস্য, কূর্ম, বরাহ আদি দশ অবতারগণ, কালী, তারা, ভুবনেশ্বরী প্রভৃতি দশমহাবিদ্যাগণ, গুরু, নারায়ণ এবং সর্ব দেবদেবীর অর্চনা করতে হয়। “এতে গন্ধপুস্পে ওঁ গণেশায় নম, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শিবদি পঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শ্রীগুরবে নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নারায়ণায় নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্বেভ্যো দেবীভ্যো নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অমুক দেবতায়ৈ নমঃ” এই মন্ত্রে একেক দেবতার উদ্দেশ্যে একেকটি গন্ধপুষ্প পূজাপাত্রে অর্পণ করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : স্বস্তিবাচন

    হাতে চন্দন মিশ্রিত আতপ চাল নিয়ে “ওঁ কর্তব্যেহস্মিন পূজনকর্মনি পুণ্যাহং ভবন্তো ব্রবন্তু” এই মন্ত্র তিন বার পাঠ করে ওঁ পুণ্যাহং তিন বার বলে তিন বার ঐ আতপ চাল ছিটাতে হয়। এরপর পূর্বোক্ত মন্ত্রের পূণ্যাহং এর স্থলে “ঋদ্ধিং” পাঠ করে “ওঁ ঋদ্ধ্যতাং” তিনবার বলে তিনবার আতপ চাল ছড়াতে হয়। পুনরায় আতপ চাল নিয়ে প্রথমোক্ত মন্ত্রের পূণ্যাহং এর স্থলে “স্বস্তি” পাঠ করে “ওঁ স্বস্তি” তিন বার বলে তিন বার আতপ চাল ছড়াতে হয়। এ নিয়ম যজুর্বেদীয়দের জন্য। তবে ঋক্ ও সামবেদীয়রা প্রথমে পূণ্যাহং পরে স্বস্তি এবং শেষে ঋদ্ধিং বলে। উপরি-উক্ত মন্ত্রের অর্থ করলে এমন হয় এই কর্তব্যকর্মে এই পূজায় আপনারা প্রথমবার স্বস্তি বলুন, স্বস্তি বলুন, স্বস্তি বলুন। দ্বিতীয়বার সমৃদ্ধি বলুন, সমৃদ্ধি বলুন, সমৃদ্ধি বলুন। পরিশেষে পূণ্যদিন বলুন, পূণ্যদিন বলুন, পূণ্যদিন বলুন। এরপর সামবেদীয় পূজকের ক্ষেত্রে যে মন্ত্র পাঠ করতে হয় তা নিম্নরূপ।

ওঁ সোমং রাজনং বরুণম্ অগ্নিমন্বারভামহে।

আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্যং ব্রহ্মাণঞ্চ বৃহস্পতিম্।।

সাম-বেদ পূর্বার্চিক (১/১০/১)

অর্থাৎ আমাদের রক্ষার জন্য আমরা সোমরাজা, বরুণ, অগ্নি, আদিত্য বিষ্ণু, সূর্য, ব্রহ্মা ও বৃহস্পতিকে আহ্বান করি। মন্ত্রটির ভাবার্থ এরকম আমরা সেই শান্তিদায়ক, প্রকাশমান, পাপনাশক, জ্ঞানস্বরূপ, অখণ্ড, সর্বব্যাপক, সর্বপ্রকাশক এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পালক পরমাত্মাকে নিত্য স্মরণ করি। পরে ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি বলে তিন বার আতপ চাল ছিটাতে হয়। তারপর নিমোক্ত স্বস্তি-সূক্ত পাঠ করতে হয়।

ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।

স্বস্তি ন স্তার্ক্ষ অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু ।।

সাম-বেদ উত্তরার্চিক (২১/৯/৩)

অর্থাৎ বৃদ্ধশ্রবা (মহাকীর্তি) ইন্দ্র আমাদের মঙ্গল করুন, বিশ্ববেদা (সর্বজ্ঞ) পূষা আমাদের মঙ্গল করুন, অরিষ্টনেমি তাক্ষর্ (বিষ্ণু) আমাদের মঙ্গল করুন, বৃহস্পতি আমাদের মঙ্গল করুন। এরপর সর্ববেদীয় পূজকগণকে কৃতাঞ্জলি পুটে নিম্নোক্ত সাক্ষ্য-মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহক্ষপা

পবনো দিক্পতিভূর্মিরাকাশং খচরামরাঃ।

ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।

ওঁ তৎসৎ অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু ।।

অর্থাৎ সূর্য, সোম (চন্দ্র), যম, কাল, উভয় সন্ধ্যা, পঞ্চভূত, দিন-রাত্রি, পবন (বায়ু), ইন্দ্রাদি দিক্পাল, পৃথিবী, আকাশ, আকাশচর ও অমরগণ, ব্রহ্মের শাসন স্বীকার করে এখন এই স্থানে অবস্থান করুন। এই কার্য শুভ হোক।

পূজা পদ্ধতি : সঙ্কল্প

    প্রত্যেক পূজার একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে যা সঙ্কল্প নামে পরিচিত। তবে নিত্য পূজায় সঙ্কল্প প্রয়োজন হয় না। পূর্বমুখে বা উত্তরমুখে দক্ষিণ জানু দ্বারা ভূমি স্পর্শ করে কুশ, তিল, হরীতকী, পুষ্প ও জল তামার পাত্রে নিয়ে “বিষ্ণুঃ ওঁ তৎসৎ অদ্য অমুকে মাসি, অমুকে পক্ষে, অমুক তিথৌ, অমুক গোত্র, শ্রী অমুক দেবশর্মা, অমুক ফলপ্রাপ্তি কামনায় অমুককর্ম (পূজনং, ব্রতং) অহং করিষ্যামি” এই মন্ত্র পাঠ করতে হয়। তারপর কুশের জল ঈশানকোণে ভূমিতে ফেলে তা তাম্রপাত্রের উপর উপুড় করে সামবেদীয়দের নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

ওঁ দেবো বো দ্রসাম-বেদবিণোদাঃ পূর্ণাং বিবষ্টবাসিচম্।

উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে।।

 সাম-বেদ পূর্বার্চিক (১/৬/১)

অর্থাৎ দ্রবিণোদা দেব (অগ্নিদেব) তোমাদের পূর্ণ ভক্তি কামনা করেন। তাঁকে প্রীত কর, ভক্তি কর, তিনি তোমাদের ভার বহন করবেন।

পূজা পদ্ধতি : আসন শুদ্ধি

    আসন আধারশক্তি স্বরূপ কারণ আসনই পূজককে ধারণ করে অর্থাৎ আসনের উপরেই পূজক অধিষ্ঠান করেন। তাই আসনের বন্দনা করা একান্ত আবশ্যক। পূজকের বসার আসনের উপর প্রথমে একটি ত্রিকোণ-মণ্ডল অঙ্কিত করে “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ হ্রীং আধারশক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ” বলে একটি গন্ধপুষ্প আসনে অঙ্কিত ত্রিকোণ-মণ্ডলের উপর অর্পণ করতে হয়। তারপর আসন স্পর্শপূর্বক নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে হয়

ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবী ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।

ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চ আসনম্।।

অর্থাৎ হে ধরিত্রীদেবী, তুমি সর্বলোককে ধারণ করে আছো। আবার তোমাকে স্বয়ং বিষ্ণু ধারণ করে আছে। তুমি নিয়ত আমাকে ধারণ করে থাক। আমি যেন কখনও তোমার কোল থেকে বিচ্যুৎ না হই। তুমি আমার আসনকে পবিত্র কর। পৃথিবী কত কষ্ট সহ্য করে প্রাণিকুলের ভার বহন করেন। পূজক আসনে বসলে আসন পূজকের ভার এবং পৃথিবী পূজক ও আসন উভয়ের ভার বহন করে। তাই পৃথিবী আসনে বসার পর পৃথিবী মাতাকে বন্দনা করা আবশ্যক। পূজার এরকম বিধি-বিধান সত্যিই মহৎ ও উদার। কাউকে অসন্তুষ্ট রেখে পূজা করলে দেবতাও অসন্তুষ্ট হন। তাই আসন, মাটি থেকে শুরু করে পূজা-সংশ্লিষ্ট সকলকে তুষ্ট করলে দেবতাও তুষ্ট হন।

পূজা পদ্ধতি : ঘট স্থাপন

   পূজার সময় ঘটে দেবতারা এসে অবস্থান করবেন এরকম মনে করা হয়। মূর্তি না থাকলে শুধু ঘটে বা কলসে পূজা করা সম্ভব। মূর্তি থাকলেও ঘট প্রয়োজন। শুধু পূজনীয় দেবতাকেই মূর্তিতে পূজা করা হয়। কিন্তু পূজনীয় দেবতাকে পূজা করার সময় ঐ দেবতা ছাড়াও অন্যান্য দেবদেবীর পূজা করতে হয়। সব দেবদেবীর মূর্তি গড়া দুঃসাধ্য বলে পূজনীয় দেবতা ব্যতীত অবশিষ্ট দেবদেবীর পূজা ঘটে করা হয়। প্রথমে পঞ্চবর্ণের গুড়ি দ্বারা অষ্টদল পদ্ম অঙ্কন করে ঐ পদ্মের উপর মাটি এবং পঞ্চশস্য (ধান, মাষকলাই, তিল, শেতসরিষা এবং যব) ছড়িয়ে তার উপর ঘট স্থাপন করতে হয়। পঞ্চবর্ণের গুড়ি দ্বারা মূলত স্থান-শুদ্ধি করা হয়। পঞ্চশস্য ও পঞ্চবর্ণের গুড়ি না থাকলে কেবল ধান ছড়িয়ে তার উপর ঘট স্থাপন করা যায়। ঘট জল দ্বারা পূর্ণ করে ঘটের মুখে পঞ্চপল্লব (আম, অশ্বত্থ, বট, পাকুড় ও যজ্ঞডুমুরের পাতা) দিতে হয়। ঘটের মধ্যে নবরত্ন বা পঞ্চরত্ন দেয়া বিধেয়। ঘটের উপর ফুল, একটি ফল  (যেমন সশীষ ডাব) ও বস্ত্র দেয়ার পর ঘটের বক্ষস্থলে সিন্দুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন অঙ্কিত করতে হয়। ঐ স্বস্তিক চিহ্ন মূলত জীবাত্মার প্রতীক। তারপর ভূমি, ঘট, জল, পল্লব, ফল, সিন্দুর, ফুল ও বস্ত্র স্পর্শ করে মন্ত্রপাঠ করতে হয়। উক্ত কার্য শেষে দুই হাত দিয়ে ঘট স্পর্শ করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ঘট স্থিরীকরণ করা হয়।

ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম্ ।

ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবগণৈঃসহ।।

অর্থাৎ হে দেব, আপনি সর্বতীর্থ থেকে উৎপন্ন জলপূর্ণ এবং সর্বদেবসমন্বিত ঘটে সহচরগণসহ এসে স্থিরভাবে বিরাজ করুন।

    যে ঘটে সর্ব দেবদেবীর অধিষ্ঠান, সে ঘট মূলত হৃদয়-গুহারই প্রতীক। ঘটে বসিয়ে দেবতাকে পূজা করা হয় ঠিকই কিন্তু পূজক মনে মনে এই চিন্তা করে যে, তিনি হৃদয়-আসনে দেবতাকে বসিয়ে পূজা করছেন। ঘটের জল ভাব বা রসের, ফল বুদ্ধি বা জ্ঞানের, পঞ্চপল্লব পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয়ের, পঞ্চরত্ন পঞ্চ-জ্ঞানেদ্রিয়ের এবং পঞ্চশস্য পঞ্চ-তন্মাত্রের প্রতীক। ঘটের ঐ সিন্দুর দারা অঙ্কিত স্বস্তিক চিহ্ন সূক্ষদেহের অনুকল্প। সুতরাং ঘটে বাহ্যপূজার পশ্চাতে মনের মাঝেই দেবতার পূজা সম্পন্ন হয় যা পূজক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে উপলব্ধি করা দুষ্কর। ঘট ও দেবতার মূর্তিকে পূর্ব বা উত্তর দিকে স্থাপন করা হয়। কারণ পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হয় এবং উত্তর দিকে ব্রহ্মলোক অবস্থিত বলে পূর্ব ও উত্তর দিক অতি পবিত্র।

পূজা পদ্ধতি : পঞ্চশুদ্ধি

   পূজায় শুদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অশুদ্ধভাবে পূজা করলে দেবতা অসন্তুষ্ট হয় এবং পূজার ফলও মঙ্গলজনক হয় না। আত্মা বা পূজক, স্থান, মন্ত্র, দ্রব্য ও দেবতা এই পঞ্চ পদার্থের শুদ্ধিকে পঞ্চশুদ্ধি বলে। ভূতশূদ্ধি, প্রাণায়াম, ন্যাস প্রভৃতির দ্বারা আত্মা-শুদ্ধি করা হয়। ফুল, মালা প্রভৃতি সাজিয়ে ধূপ-দীপ জ্বেলে স্থান-শুদ্ধি করা হয়। যথাবিহিত উপায়ে অনুলোম, বিলোম প্রভৃতি ক্রমে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মন্ত্র-শুদ্ধি করা হয়। মন্ত্রোচ্চারণ ও বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে দ্রব্য-শুদ্ধি করা হয়। পূজাদ্রব্য, নৈবেদ্য, যথাবিধি মন্ত্র প্রভৃতি দ্বারা দেবতাকে শুদ্ধ করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : সামান্যার্ঘ্য স্থাপন ও জলশুদ্ধি

    প্রথমে ভূমিতে জল দ্বারা ত্রিকোণ-মণ্ডল অঙ্কন করে গন্ধপুষ্প দ্বারা কূর্ম ও অনন্তরূপী পৃথিবী বা ভূমির পূজা করতে হয়। যথা “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ, ওঁ কূর্মায় নমঃ, ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ” বলে চারাবার গন্ধপুষ্প অর্পণ করতে হয়। সকলের আধার বা আশ্রয়দাত্রী বলে ভূমিকে আধারশক্তি বলা হয়। যেহেতু ভূমি সকলকে ধারণ করেন সেহেতু কৃতজ্ঞতাবশত তাঁর পূজা করা আবশ্যক। যা হোক, এরপর “অস্ত্রায় ফট” মন্ত্রে কোশাটি ঐ ত্রিকোণ-মণ্ডলের উপর রেখে “ওঁ” মন্ত্র উচ্চারণ করে তিন বার জল দ্বারা কোশা পূর্ণ করতে হয়। কোশা জলপূর্ণ করার পর এর অগ্রভাগে একটি অর্ঘ্য স্থাপন করে “মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ, অং অর্কমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে, উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ”। “ওঁ” মন্ত্রকে বিশ্লেষণ করলে হয় অ + উ + ম। তাই “মং” বীজ মন্ত্রে দশকলাত্মক অগ্নিমণ্ডল, “অং” বীজমন্ত্রে দ্বাদশকলাত্মক সূর্যমণ্ডল এবং “উং” বীজমন্ত্রে ষোড়শকলাত্মক চন্দ্রমণ্ডলের পূজা করা হয়। সোম বা চন্দ্রের ষোড়শ-কলার নাম অমৃতা, মানদা, পূজা, তুষ্টি, পুষ্টি, রতি, ধৃতি, শশিনী, চন্দ্রিমা, কান্তি, জ্যোৎস্না, শ্রী, প্রীতি, অঙ্গদা, পূর্ণা ও পূর্ণামৃতা। বহ্নি বা অগ্নির দশ-কলার নাম ধুম্র, অর্চিঃ, জ্বলিনী, সূক্ষ্ণা, জ্বালিনী, বিস্ফুলিঙ্গিনী, সুশ্রী, সুরূপা, কপিলা ও হব্যকব্যবহা। অর্ক বা সূর্যের দ্বাদশ-কলার নাম তপিনী, তাপিনী, ধুম্রা, মরীচি, জ্বালিনী, রুচি, সুধুম্রা, ভাগদা, বিশ্বা, বোধিনী, ধারিণী ও যম। মূলত চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি এই তিন মণ্ডলকে বোঝাতেই ত্রিকোণ-মণ্ডল অঙ্কন করা হয় এবং এই ত্রিকোণ-মণ্ডলেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব অবস্থান করেন এরকম কল্পনা করতে হয়। জলশুদ্ধির জন্য প্রথমে কোশার জলে গন্ধ, পুষ্প ও দূর্বা প্রদান করে ধেনু-মুদ্রা দ্বারা অমৃতীকরণ, মৎস্য-মুদ্রা দ্বারা আচ্ছাদন এবং অঙ্কুশ-মুদ্রা দ্বারা তীর্থসমূহ আবাহন করা হয়। তীর্থ আবাহন মন্ত্রটি নিম্নরূপ।

ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।

নর্মদে সিন্ধুকাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।।

অর্থাৎ হে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরি, সরস্বতি, নমর্দা, সিন্ধু ও কাবেরি, আপনারা এই জলে অধিষ্ঠান করুন। এভাবে মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা জল-শুদ্ধি করলে জল আর জল থাকে না, তা অমৃতে পরিণত হয়।

পূজা পদ্ধতি : করশুদ্ধি

    পূজক মূলত কর বা হাতের মাধ্যমেই পূজার সব কার্য করেন। তাই তাঁর হাত শুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। গন্ধপুষ্প নিয়ে “ঐং বং অস্ত্রায় ফট্” মন্ত্রে ঐ গন্ধপুষ্প দুই হাতে পেষণ (চূর্ণন) করে তা বামদিকে নিক্ষেপ করে জল ছিটাতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : পুষ্পশুদ্ধি

    পুষ্পপাত্রের সব পুষ্প স্পর্শ করে “ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে। পুষ্পপ্রচয়াবকীর্ণে হূং ফট্ স্বাহা” মন্ত্রে শুদ্ধ করতে হয়। উক্ত মন্ত্রের অর্থ এরকম হে পুষ্প, হে পুষ্প, হে মহাপুষ্প, হে সুপুষ্প, তোমরা পূজায় নিজেকে নিবেদন কর।

পূজা পদ্ধতি : ভূতাপসারণ

    ভূত-প্রেত যাতে পূজায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্য ভূতাপসারণ করা প্রয়োজন। মূলত ষড়-ঋপু নামক ভূতকে দূর করে চিত্তকে পরিশুদ্ধ করাই ভূতাপসারণের প্রকৃত উদ্ধেশ্য। ভূতাপসারণের জন্য সাদা সরিষা হাতে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হয়।

ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতা যে ভূতা ভূবি সংস্থিতা

যে ভূতা বিঘ্নে কর্তরস্তে নশ্যন্তু শিবাজ্ঞয়া।

অর্থাৎ পৃথিবীতে অবস্থানকারী যেসব ভূত বিঘ্ন সৃষ্টি করে শিবের নির্দেশে তাদের বিনাশ হোক। তারপর ভূমিতে তিন বার পদাঘাত করে এবং মাথার উপর তিন বার ফট্ মন্ত্রে করতালি দিয়ে ভূতাপসারণ ও তুড়ি দ্বারা দশদিক বন্ধন করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : ভূতশুদ্ধি

    ভূতশুদ্ধি বলতে মূলত দেহের পঞ্চভূতকে (মাটি, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ) শুদ্ধ করা বোঝায়। প্রথমে “রং” মন্ত্রে পূজককে তাঁর চারিদিকে জলধারা ছড়িয়ে দিতে হয়। তখন তিনি যেন অগ্নিপ্রাচীরের মধ্যবর্তী রয়েছেন এমন চিন্তা করতে হয়। বস্তুত মন্ত্রবলে পূজকের চারদিকের ছিটানো জলধারাই বহ্নি-প্রাচীরে পরিণত হয়, যে প্রাচীর ভেদ করে কোন অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে পারে না। অগ্নি সব কিছু দহন করে শুদ্ধ করে। তাই পূজক মনে করবে যেন তাঁর পঞ্চভূত এবং অশুভ চেতনাগুলো অগ্নিতে পুড়ে শুদ্ধ হয়ে গেছে। তারপর একাগ্র মনে “ওঁ মূলশৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্না পথেন জীবশিবং পরমশিব পদে যোজয়ামি স্বাহা। ওঁ যং লিঙ্গশরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা।। ওঁ রং সঙ্কোচশরীরং দহ দহ স্বাহা। ওঁ পরমশিবং সুষুম্না পথেন মূলশৃঙ্গাটমুল্লসোল্লাস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল সোহহং হংসঃ স্বাহা।।” এই মন্ত্র পাঠ করতে হয়। উক্ত মন্ত্রের অর্থ এরকম মূলাধারের চতুর্দল পদ্মে অবস্থানরত জীবাত্মারূপী শিবকে সুষুম্না পথে জাগ্রত করে পরমাত্মারূপী শিবের সাথে মিলিত করছি। হে বায়ু, আমার লিঙ্গ-শরীরকে শোষিত কর। হে অগ্নি, আমার সূক্ষ্ম-শরীরকে দগ্ধ কর। হে অগ্নি, তুমি মূলাধারের চতুর্দল পদ্মে আনন্দের সাথে জ্বলে ওঠ, উত্তমরূপে জ্বলে ওঠ যেন ঘুমন্ত কুণ্ডলিনী (জীবাত্মা) জাগ্রত হয় এবং পরমাত্মা শিবের সাথে যুক্ত হয়ে আমিই সেই হংস (পরমাত্মা) এমন বোধ উৎপন্ন হয়।

পূজা পদ্ধতি : মাতৃকান্যাস

    মাতৃকা বলতে মূলত বাক্দেবী সরস্বতীকে বোঝায়। কোন বস্তুকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে ঐ স্থানে অন্য বস্তু স্থাপন করাই হল ন্যাস। মাতৃকা ন্যাসের মাধ্যমে মাতৃকা-সরস্বতী কতৃর্ক সৃষ্ট অ থেকে ক্ষ পর্যন্ত এই পঞ্চাশ বর্ণ দেহের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়। দেবী সরস্বতীর কৃপা ব্যতীত মন্ত্র উচ্চারণ এবং দেবতার স্তবস্তুতি অসম্ভব। তাই মাতৃকা ন্যাসের মাধ্যমে সরস্বতী দেবীকে পূজকের দেহে স্থাপন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ন্যাসের মাধ্যমে পূজকের জীব-ভাবকে সরিয়ে দেবত্বকে স্থাপন করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : ব্যাপক ন্যাস

    ওঁ অথবা মূল মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক হৃদয় হতে আরম্ভ করে পদযুগল পর্যন্ত এবং পদযুগল থেকে হৃদয় পর্যন্ত দুই হাত প্রসারিত করে গাত্রের নিকট সাতবার সঞ্চালন করতে হয়। এরকম সঞ্চালনই ব্যাপক ন্যাস। ব্যাপক ন্যাসের মাধ্যমে মন্ত্রসমূহ পূজকের সমস্ত শরীরে ব্যাপ্ত হয় বা ছড়িয়ে পড়ে অথার্ৎ পূজকের দেহ মন্ত্রময় হয়ে ওঠে।

পূজা পদ্ধতি : করন্যাস

    করের বিভিন্ন অংশে বীজ মন্ত্র স্থাপন করে তা শুদ্ধ করাই করন্যাসের উদ্দেশ্য। যেমন চণ্ডী-পূজার ক্ষেত্রে করন্যাসের জন্য অঙ্গুষ্ঠ (বৃদ্ধাঙ্গুলি) স্পর্শ করে “হ্রাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ”, তর্জনী স্পর্শ করে “হ্রীং তর্জনীভ্যাং স্বাহা”, মধ্যমা স্পর্শ করে “হ্রূং মধ্যমাভ্যাং বষট্”, অনামিকা স্পর্শ করে “হ্রৈং অনামিকাভ্যাং হুং”, কনিষ্ঠা স্পর্শ করে “হ্রৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্” এবং করতল স্পর্শ করে “করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্” মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : অঙ্গন্যাস

    হৃদয়, শির (মস্তক), শিখা (টিকী), কবচ (বাহু), নেত্র এবং করতল-পৃষ্ঠে বীজ-মন্ত্র স্থাপন করাই হল অঙ্গন্যাস। যেমন চণ্ডী পূজার ক্ষেত্রে “হ্রাং হৃদয়ায় নমঃ”, “হ্রীং শিরসে স্বাহা”, “হ্রূং শিখায়ৈ বষট্”, “হ্রৈং কবচায় হুং”, “হ্রৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্” এবং “হ্রং করতলপৃষ্ঠভ্যাং অস্ত্রায় ফট্” মন্ত্র দ্বারা যথাক্রমে হৃদয়, শির, শিখা, বাহু, নেত্র এবং করতল-পৃষ্ঠে স্পর্শ করে অঙ্গন্যাস করা হয়। সাধারণত দেবতার নামের প্রথম অক্ষর থেকেই এসব বীজ-মন্ত্র তৈরী হয়েছে। যেমন শিব-পূজায় কর ও অঙ্গন্যাসের সময় শ্রাং, শ্রীং, শ্রূং, শ্রৈং এবং শ্রৌং মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : দ্বারদেবতাদির পূজা

    যে দেবতাগণ দ্বার-রক্ষা করেন অর্থাৎ কোন অশুভ শুক্তিকে গৃহের মধ্যে প্রবেশ করতে দেন না, সেসব দ্বার-দেবতাগণের এবং বাস্তুপুরুষের পূজাও কর্তব্য। এজন্য পুষ্প নিয়ে “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যো নমঃ” এই মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক পুষ্পটি পূজাগৃহের দ্বারদেশে নিক্ষেপ করতে হয়। পরে “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বাস্তুপুরুষায় নমঃ” মন্ত্রে পূজা করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : গুরুপঙ্ক্তি প্রণাম

    করজোড়ে (বামে) ওঁ গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরম গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরাপর গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরমেষ্ঠি গুরুভ্যো নমঃ, (দক্ষিণে) ওঁ গণেশায় নমঃ, (ঊর্ধে) ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ, (অধঃদিকে) ওঁ অনন্তায় নমঃ, (মধ্যে) ওঁ অমুক দেবতায়ৈ নমঃ এই মন্ত্র পাঠ করে স্থান স্পর্শ করে প্রণাম করতে হয়।

পূজা পদ্ধতি : প্রাণায়াম

    পূরক, কুম্ভক ও রেচকের মাধ্যমে প্রাণবায়ুকে নিয়ন্ত্রন করাকে প্রাণায়াম বলে। প্রাণায়ামের সময় “হংস” প্রভৃতি মন্ত্র দ্বারা  শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন করতে হয়। প্রাণায়াম ধ্যানের সহায়ক অঙ্গ। 

পূজা পদ্ধতি : আবাহন

    দেবতাকে আহবান করাই হল আবাহন। ওঁ ভূভূর্বস্বঃ অমুকদেব বা দেবী (আবাহনী মুদ্রা দ্বারা) ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ, (স্থাপনী মুদ্রা দ্বারা) ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ, (সন্নিধাপনী মুদ্রা দ্বারা) ইহ সন্নিরুধ্যস্ব, (সম্মুখীকরণী মুদ্রা দ্বারা) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু এবং (কৃতাঞ্জলি পুটে) মম পূজা গৃহাণ বলে দেবতাকে আবাহন করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : চক্ষু-দান ও প্রাণ-প্রতিষ্ঠা

    চক্ষু-দান ও প্রাণ-প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত দেবতার মূর্তি জড় পদার্থ ছাড়া অন্য কিছু নয়। কিন্তু চক্ষু-দান ও প্রাণ-প্রতিষ্ঠার পরে মূর্তি চৈতন্যময় হয়ে ওঠে। প্রাণ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূজকের নিজের আত্মসত্ত্বা বা প্রাণকে প্রতীমায় স্থাপন করতে হয়। পূজক নিজের প্রাণকে প্রতীমায় অর্পণ করলে প্রতীমা যেমন চৈত্যন্যময় হয় তেমনি পূজকের দেহও হয়ে ওঠে দেবময়। প্রাণ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মূলত পূজকের অন্তরের দেবতাকেই প্রতীমায় আরোপিত করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : মানস-পূজা

    শাস্ত্রমতে বাহ্য-পূজা ও মানস-পূজার মধ্যে মানস পূজাই শ্রেষ্ঠ। মানস-পূজার সময় বক্ষঃস্থলে বামহস্তের উপর দক্ষিণ হস্ত স্থাপন করে বাক্য, মন ও হৃদয় দ্বারা দেবতার পূজা করা হয়। মানস-পূজার সময় পূজককে চিন্তা করতে হয় যেন দেহের মধ্যেই পূজার সব উপকরণ আছে। মানস-পূজায় আসন হৃদপদ্ম, পাদ্য সহস্রদল থেকে গলিত সোমরস বা অমৃত, অর্ঘ্য মন, আচমনীয় পূর্বোক্ত অমৃত, স্নানীয় উক্ত অমৃত, বস্ত্র দেহ মধ্যস্থ আকাশতত্ত্ব, গন্ধ ক্ষিতিতত্ত্ব, পুষ্প বুদ্ধি, ধূপ প্রাণবায়ু, দীপ দেহস্থ অগ্নিতত্ত্ব, নৈবেদ্য হৃদয়ে কল্পিত সুধামৃত, বাদ্য বক্ষ স্থলের শব্দ (অনাহত ধ্বনি), চামর বায়ুতত্ত্ব, ছত্র সহস্রদল পদ্ম, গীত শব্দতত্ত্ব এবং নৃত্য ইন্দ্রিয় কর্ম।

পূজা পদ্ধতি : ধ্যান

    সকল ব্যাহ্যচিন্তা মন থেকে সরিয়ে কেবলমাত্র দেবতার রূপ চিন্তা করাই ধ্যান। প্রতীমা নয় মূলত অন্তরের কল্পিত দেবতাকেই পূজা করা হয়। বাইরের ঐ প্রতীমা ধ্যানে সহায়ক। প্রতীমার দর্শনে মনের মধ্যে দেবতার রূপ ভেসে ওঠে। তাই প্রতীমারও বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। তবে যে পূজক অন্তরে সহজেই দেবতার রূপ কল্পনা করতে পারে তার বাহ্য-প্রতীমার প্রয়োজন হয় না। কূর্ম (কচ্ছপ) তার মস্তককে ভিতরের দিকে প্রবেশ করাতে পারে। ইন্দ্রিয়গণ মস্তকেই অবস্থান করে। তাই মস্তককে অন্তরমুখী করলে ইন্দ্রিয়গণকেই অন্তরমুখী করা হয়। যোগ-ধ্যান করার সময় বহির্মুখী ইন্দ্রিয়গণকে অন্তরমুখী করতে হয়। তাছাড়া কূর্ম শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন করে অনেকদিন বেঁচে থাকে। তাই কূর্ম হল যোগধ্যানের প্রতীক। এজন্য কূর্ম-মুদ্রায় ফুল নিয়ে ধ্যান করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : উপাচার

    পঞ্চোপচার, দশোপচার, ষোড়শোপচার এবং অষ্টাদশোপচারে সাধারণত পূজা করা হয়। পঞ্চোপচার হল ১) গন্ধ (চন্দন), ২) পুষ্প, ৩) ধূপ, ৪) দীপ ও ৫) নৈবেদ্য। দশোপচার হল ১) পাদ্য, ২) অর্ঘ্য, ৩) আচমনীয়, ৪) পুনরাচমনীয়, ৫) গন্ধ, ৬) পুষ্প, ৭) বসন, ৮) ধূপ, ৯) দীপ ও ১০) নৈবেদ্য। ষোড়শোপচার হল ১) আসন, ২) স্বাগত, ৩) পাদ্য, ৪) অর্ঘ্য, ৫) আচমনীয়, ৬) মধুপর্ক ৭) স্নানীয়, ৮) বসন, ৯) আভরণ, ১০) গন্ধ, ১১) পুষ্প, ১২) ধূপ, ১৩) দীপ, ১৪) নৈবেদ্য, ১৫) পুনরাচমনীয়, ও ১৬) তাম্বুল (পান)। অষ্টাদশোপচার হল ১) আসন, ২) স্বাগত, ৩) পাদ্য, ৪) অর্ঘ্য, ৫) আচমনীয়, ৬) মধুপর্ক ৭) স্নানীয়, ৮) যজ্ঞোপবীত, ৯) আভরণ, ১০) গন্ধ, ১১) পুষ্প, ১২) ধূপ, ১৩) দীপ, ১৪) অন্ন, ১৫) দর্পণ, ১৬) মাল্য, ১৭) অনুলেপন (গন্ধদ্রব্য) এবং ১৮) নমস্কার ও বিসর্জন। ধূপ প্রতীমার ডানদিকে এবং দীপ প্রতীমার বামদিকে রাখতে হয়। 

    পূজায় উপাচার অর্পণের বিষয়টি এসেছে অতিথি-সৎকারের প্রথা থেকে। প্রাচীনকালে গৃহে কোন অতিথি এলে তাকে স্বাগতম জানানো হত, পাদ্য (পা ধোয়ার জল), এবং আচমনীয় (হাত-মুখ ধোয়ার জল) দেয়া হত। তারপর তাঁকে আসনে বসিয়ে জ্যেষ্ঠ হলে পায়ে এবং কনিষ্ঠ হলে মস্তকে অর্ঘ্য প্রদান করা হত। অর্ঘ্য-প্রদান শেষে তার জন্য মধুপর্ক (দধি, ঘৃত, মধু, শর্করা ও জলের মিশ্রণ) নামক এক ধরনের জল খাবার দেয়া হত। তারপর তার স্নানের জন্য স্নানীয় জল এবং পরিধেয় বস্ত্র প্রদান করা হত। স্নানশেষে অতিথির আহারের ব্যবস্থা করা হত। আহার শেষে অতিথিকে পুনরায় আচমন করার জন্য পুনরাচমনীয় দেয়া হত। পূজনীয় দেবতাও যেন অতিথি। তাই তাঁকে ভক্তিপূর্ণ সেবা-যত্ন করা একান্ত কর্তব্য। দেবতাকে সেবা-যত্ন করে নৈবেদ্য (দেবতার ভোজ) নিবেদন করে পরিশেষে প্রণামের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়। উপাচার দান করারও একটি নিদিষ্ট বিধান রয়েছে। উপাচার পুংলিঙ্গবাচক শব্দ হলে তার পূর্বে “এষ” হয়, যেমন এষ ধূপ এবং স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ হলে তার পূর্বে এষা ব্যবহৃত হয়, যেমন এষা দূর্বা। উপাচার ক্লীব-লিঙ্গ হলে তার পূর্বে এতৎ বা ইদং ব্যবহার করতে হয়, যেমন এতৎ পাদ্যং, ইদম্ আচমনীয়ম্। যেমন গণেশ-পূজার ক্ষেত্রে উপাচার দান করতে হয় এভাবে “এতৎ পাদ্যং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, ইদম্ অর্ঘ্যং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, এতৎ পুষ্পং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, এতৎ সচন্দন বিল্বপত্রং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, এষ ধূপঃ ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, এষ দীপ ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, এতৎ সোপকরণ নৈবেদ্যং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ, ইদম্ আচমনীয়ং ওঁ গণেশায়ঃ নমঃ।

পূজা পদ্ধতি : উপাচার দানের তাৎপর্য 

   পূজক পূজায় দেবতাকে পঞ্চ-উপাচার প্রদানের মাধ্যমে মূলত পঞ্চভূতকেই প্রদান করেন। যেমন গন্ধদ্রব্য ক্ষিতি বা মাটির, পুষ্প ব্যোম বা আকাশের, ধূপ মরুৎ বা বায়ুর, দীপ অগ্নির এবং নৈবেদ্য অপ বা জলের প্রতীক। দেহের উপাদান পঞ্চভূতকে দেবতার চরণে উৎসর্গ করলে পূজকের মনে দৈহিক বা বৈষায়িক চিন্তার পরিবর্তে আত্মার চিন্তা আসে। দেহ আত্মা নয় এবং আত্মাও দেহ নয় এই বোধ জাগ্রত করার মধ্যেই পূজার স্বার্থকতা।

পূজা পদ্ধতি : প্রণাম

    প্রণামের মাধ্যমে পূজক দেবতার নিকট নিজেকে সমর্পণ বা আত্ম-নিবেদন করেন। প্রণামের মধ্যে অষ্টাঙ্গ প্রণামই শ্রেষ্ঠ। বিষ্ণুকে নিজের বামে, মহাদেব ও শক্তিকে (দুর্গা, কালী প্রভৃতি) ডানে এবং অন্যান্য দেবতাকে বামে বা সম্মুখে রেখে প্রণাম করতে হয়। 

পূজা পদ্ধতি : হোম

    পূজা শেষে বৈদিক হোম করা আবশ্যক। বৈদিক রীতিনীতিকে ধরে রাখার জন্য হোমকে পূজার একটি অঙ্গ হিসেবে স্থান দেয়া হয়েছে। হোম ত্রিবিধ, যথা স্থুল, সূক্ষ্ম ও পর। স্থুল-হোম বাহ্য এবং সূক্ষ্ম ও পর হোম আন্তর। তবে প্রতীমা না থাকলে হোমের প্রয়োজন হয় না। হোম শেষে ছাই-ভস্ম ললাটে কণ্ঠে, বাহুমুলদ্বয়ে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। 

পূজা পদ্ধতি : আরত্রিক

    আরত্রিককে নীরাজন বা দীপাবর্তন বা আরতি বলা হয়। তবে আরতি শব্দটিই বেশি প্রচলিত। ‘আ’ অর্থ বিস্তৃতি ‘রতি’ অর্থ প্রেম বা প্রীতি। তাই দেবতার প্রীতিলাভের জন্য যে অনুষ্ঠান, তাই আরতি। দেবপূজায় যদি কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে, তা আরত্রিকের দ্বারা পূর্ণ হয়। আরত্রিকের সময় প্রদীপ, কপূর্র, দীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ, ধৌত বস্ত্র, বিল্বপত্র, পুষ্প এবং চামর দেবতার চরণে চার বার, নাভিদেশে দুই বার, মুখমণ্ডলে তিন বার এবং সর্বাঙ্গে সাত বার ঘুরাতে হয়। ধূপ বলতে ষড়ঙ্গ ধূপ বোঝায়। চিনি, মধু, গব্যঘৃত, শ্বেত-চন্দন কাষ্ঠ, অগুরু কাষ্ঠ এবং গুগ্গুল একত্রে বেটে রোদে শুকালে ষড়ঙ্গ ধূপ তৈরি হয়। আরত্রিকে পাঁচতি সলতে যুক্ত পঞ্চ-প্রদীপ ব্যবহার করা হয়। আরত্রিকের সময় ঘণ্টা, কাঁসর, ঢাক প্রভৃতি বাদ্য বাজাতে হয়। আরত্রিকের পশ্চাতে রয়েছে এক সূক্ষ্ম দর্শন। আরত্রিকের পঞ্চপ্রদীপ রূপের, জলপূর্ণ-শঙ্খ রসের, ধূপ ও পুষ্প গন্ধের, চামর স্পর্শের এবং ঘন্টা-ধ্বনি শব্দের প্রতীক। আরত্রিকের ছলে মূলত পঞ্চভূতের গুণ অর্থাৎ শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধকে দেবতার উদ্দেশ্যে সমর্পণ করা হয়। পঞ্চভূত দ্বারা জীবের দেহ গঠিত। তাই পঞ্চভূত সমর্পণ করার অর্থ দেবতাকে সর্বস্য দান করা। সুতরাং আরত্রিক শুধুমাত্র দৈহিক অঙ্গভঙ্গি নয়, আরত্রিক আত্ম-নিবেদনের বহিপ্রর্কাশও বটে। আরত্রিকের সময় ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের শব্দে নৃত্য করলে পূজকের কুলকুণ্ডলিনী শক্তি জেগে ওঠে এবং পূজক সকল বাহ্য-চেতনা ভূলে গিয়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ করেন। সাধারণত গায়ত্রী-পাঠ ও মন্ত্রজপের পরেই আরত্রিক করা হয়।

পূজা পদ্ধতি : বিসর্জন

   বিসর্জন অর্থ দেবতার প্রস্থান এবং মূর্তিকে জলে ভাসানো নয়। প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করে যে দেবতাকে পূজা করা হয়েছে, সে দেবতাকে হৃদয়ে স্থান দেয়াই হল বিসর্জন। প্রাণ-প্রতিষ্ঠার সময় পূজক হৃদয়ের যে দেবতাকে নিষ্প্রাণ প্রতীমায় স্থাপন করে প্রতীমাকে চৈতন্যময় করেছিলেন। বিসর্জনের সময় সেই দেবতাকেই পুনরায় হৃদয়ে স্থান দেয়া হয়। তাই বিসর্জনের পরে ঐ মৃন্মময় মূর্তি চিন্ময় হয়ে পূজকের হৃদয়ে স্থানান্তরিত হয়। ফলে ঐ বাহ্য-মূর্তি জড় পদার্থে পরিণত হয়। চৈতন্যহীন ঐ জড় মূর্তি জলে ভাসিয়ে দেয়াই শ্রেয়।

পূজা পদ্ধতি : প্রদক্ষিণ

    দেবতাকে নিজের দক্ষিণে রেখে প্রদক্ষিণ করতে হয়। শক্তি দেবতাকে এক বার, শিবকে অর্ধচন্দ্রবৎ (দক্ষিণদিক থেকে বায়ুকোণ পর্যন্ত গমন করে পুনরায় পিছন দিক থেকে দক্ষিণে ফিরে আসা), সূর্যকে ছয় বার এবং অন্যান্য দেবদেবীকে তিন বার প্রদক্ষিণ করতে হয়। 

    পূজাশেষে নির্মাল্য পূষ্প) গ্রহণ ও নৈবেদ্য ভক্ষণ করতে হয়। নৈবেদ্য ভক্ষণে অনেক পূণ্য অর্জিত হয়। নৈবেদ্যকে প্রসাদও বলা হয়। প্রসাদ অর্থ কৃপা। নৈবেদ্য ভক্ষণে দেবতার প্রসাদ বা কৃপা লাভ হয় বলে নৈবেদ্যকে প্রসাদ বলা হয়।

পূজা পদ্ধতি : মুদ্রা

    যা দেবতাদের প্রীতি উৎপাদন করে এবং পাপসমূহ দূর করে তাকেই মুদ্রা বলে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মুদ্রা প্রদর্শন করতে হয়। উভয় হাতের করতল চিৎভাবে সংযুক্ত করে দুই হাতের অনামিকার মূলপর্বে বৃদ্ধাঙ্গুলি আবদ্ধ করলে আবাহনী মুদ্রা হয়। উক্ত আবাহনী মুদ্রা উভয় হাতের করতল অধোমুখভাবে রাখলে স্থাপনী মুদ্রা হয়। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় উচু করে সংযুক্ত করলে সন্নিধাপনী মুদ্রা হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়কে ঐভাবে করতলের মধ্যে রেখে হাত দুইটি মুষ্টিবদ্ধ করলে সন্নিরোধনী মুদ্রা হয়। সন্নিরোধনী মুদ্রা কৃত মুষ্টিদ্বয় চিৎ করলে সম্মুখীকরণ মুদ্রা হয়। মধ্যমাঙ্গুলি সরলভাবে প্রসারিত করে তর্জনী ইষ্যৎ বক্র করে মধ্যমার মধ্যপর্বে সংযুক্ত করে অনামিকা ও কনিষ্ঠা বক্র করে করতল স্পর্শ করলে অঙ্কুশ মুদ্রা হয়। ডানহাত অধোমুখ করে তার পিঠে বাম করতল স্থাপন করে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিচালিত করলে মৎস্য মুদ্রা হয়। উভয় হাতের অঙ্গুলিসমূহকে পরস্পরের সন্ধি মধ্যগত করে কনিষ্ঠার সাথে অনামিকা সংযুক্ত করে তর্জনীর অগ্রভাগের সাথে মধ্যমার অগ্রভাগ সংযুক্ত করলে ধেনু মুদ্রা হয়। বামহাতের তর্জনীতে ডানহাতের কনিষ্ঠা এবং ডানহাতের তর্জনীতে বামহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি সংযুক্ত করে ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উন্নতভাবে স্থাপন করে বামহাতের মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা ডানহাতের পীঠে সংযুক্ত করে বামহাতের তর্জনী ও বৃদ্ধঙ্গুলির মধ্যভাগে ডানহাতের মধ্যমা ও অনামিকা অধোমুখে সংলগ্ন করলে কূর্ম মুদ্রা হয়।

    দেব-পূজায় নিষিদ্ধ দ্রব্যঃ পুরুষ দেবতাকে রক্তবর্ণ পুষ্প, সূর্যকে ধুতুরা, মহাদেবকে শ্বেতজবা এবং উগ্র গন্ধযুক্ত পুষ্প দ্বারা সবদেবতাকেই পূজা নিষিদ্ধ। অর্কপুষ্প, ধুতুরা, বৃহতী, শ্মশানজাত বৃক্ষের পুষ্প এবং শেফালিকা (শিউলি) ভিন্ন অন্যান্য ভূপাতিত পুষ্প দ্বারা দেবদবীর পূজা নিষিদ্ধ। সূর্যকে বিল্বপত্র ও গণেশকে তুলসীপত্র নিবেদন নিষিদ্ধ। শিব ও সূর্য-পূজায় অর্ঘে্য শঙ্খ নিষিদ্ধ। বিল্বপত্র তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা গ্রহণ করে উপুড় করে, তুলসীপত্র অনামিকা, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা ধরে চিৎ করে এবং পুষ্প যেভাবে বৃক্ষে উৎপন্ন হয় সেভাবে ধরে দেবতাকে নিবেদন করা উচিত এবং এর বিপরীত করা অকর্তব্য। বিল্বপত্র অধোমুখ করে দেবতাকে নিবেদন করতে হয় অর্থাৎ বিল্বপত্র চিৎ করে দেয়া নিষিদ্ধ। শ্রাদ্ধাদি কার্যে দূর্বার গর্ভ বা কোক না ফেলে প্রদান নিষিদ্ধ। বামহস্তে পুষ্পপত্র নিয়ে দেবপূজা অনুচিত। দুর্গার নিকট বাঁশি, শিবের নিকট করতাল, ব্রহ্মার নিকট ঢক্কা (ঢাক) এবং লক্ষ্মীর নিকট ঘণ্টা বাদ্য নিষিদ্ধ। মনসা পূজায় ধূনা দেওয়া বিধিসম্মত নয়। দেবতাকে উৎসর্গকৃত পুষ্প দ্বারা পূজা, পূজা শেষ হওয়ার পূর্বে নৈবেদ্য বিতরণ, নির্মাল্যপুষ্প (দেবতাকে নিবেদিত পুষ্প) পদদলিত অথবা ডিঙ্গানো নিষিদ্ধ। নির্মাল্য ও আশীর্বাদী পুষ্প মস্তকে ধারণ শেষে জলে বা বৃক্ষমূল নিক্ষেপ করা উচিত। পুষ্পের অভাবে পত্র, পত্রের অভাবে ফল এবং ফলের অভাবে কুশ দ্বারা দেবতা পূজা করার বিধান আছে। কুশের অভাব হলে গুল্ম এবং ওষধি দ্বারা পূজা করা যায় এবং যদি গুল্ম ও ওষধির অভাব হয়, তবে কেবল জল দ্বারাই পূজা করা বিধেয়। যদি জলেরও অভাব হয়, তবে কেবল মানসিক উপাচারে দেবতা পূজা করা কর্তব্য।

(আমা কর্তৃক লিখিত “হিন্দুধর্মের সারকথা” পুস্তক থেকে সঙ্কলিত)

এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

ঈশ্বরতত্ত্ব










 হিন্দু দেবতা





 

 

বৈদিক যজ্ঞ

যজ্ঞ কি

    দেবতার উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তু দান বা উৎসর্গ করাকে যজ্ঞ বলে। স্বর্গলাভ, পুণ্য-অর্জন, ধনলাভ, রোগমুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে যজ্ঞ করা হয়। তবে প্রাচীনকালে আর্য ঋষিগণ শুধুমাত্র স্বর্গপ্রাপ্তির আশায় যজ্ঞ করতেন না। যজ্ঞ করার আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল। মূলত যজ্ঞের মাধ্যমেই তাঁরা দেবতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। তাঁরা দেবতাদের সন্তুষ্টি-বিধানের জন্য নিজেদের প্রিয়বস্তুকে যজ্ঞের মাধ্যমে উৎসর্গ করতেন। যা হোক, যজমান ও পুরোহিতের মাধ্যমে যজ্ঞকর্ম সম্পাদিত হয়ে থাকে। যাঁর কল্যাণ কামনায় যজ্ঞ করা হয় তাকে যজমান বলে। যিনি মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক সমগ্র যজ্ঞ সম্পাদন করেন তাঁকে ঋত্বিক বা পুরোহিত বলে। 

বৈদিক যজ্ঞের উপকরণ

   যজ্ঞের প্রধান উপকরণের মধ্যে রয়েছে অগ্নি, বেদি, সমিধ (কাষ্ঠ), ঘৃত, সোম-রস, পুরোডাশ (শস্যচূর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত রুটি), দর্বী (হাতা) প্রভৃতি। 

বৈদিক যজ্ঞের অগ্নি

প্রথমেই অগ্নি প্রসঙ্গে আসা যাক। অধিকাংশ দেবতা অন্তরীক্ষে বাস করেন এবং তাঁদেরকে কাছে পাওয়া দুষ্কর। তাই মর্তে্যর সহজলভ্য দেবতা অগ্নিকে সর্ব দেবতার প্রতিনিধি কল্পনা করে অগ্নিতেই ঘৃত, সোমরস প্রভৃতি উৎসর্গ করা হয়। অগ্নি যেন দেবতাদের মুখ স্বরূপ। অগ্নি হব্য (ঘৃত প্রভৃতি দ্রব্য) দেবতাদের নিকট পৌঁছে দেন। অগ্নির তিনটি রূপ, যথা গার্হপত্য, আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি। সর্বদা প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকে গার্হপত্য অগ্নি বলে। গার্হপত্য অগ্নি থেকে চয়নকৃত বা গৃহীত হব্যভোজী অগ্নিকে আহবনীয় অগ্নি বলে। যজ্ঞবেদির দক্ষিণে স্থাপিত অগ্নিকে দক্ষিণাগ্নি বলে। দক্ষিণাগ্নিও গার্হপত্য অগ্নি থেকে চয়ন করা হয়। গার্হপত্য অগ্নিতে হব্য বস্তু প্রস্তুত করা হয়, আহবনীয় অগ্নিতে হব্য আহুতি দেয়া হয় এবং দক্ষিণাগ্নিতে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কব্য আহুতি দেয়া হয়। আহবনীয় অগ্নি পূর্বদিকে স্থাপন করলে গার্হপত্য অগ্নি পশ্চিমদিকে এবং দক্ষিণাগ্নি দক্ষিণদিকে স্থাপন করতে হয়। গার্হপত্য অগ্নির বেদি গোলাকার, আবহনীয় অগ্নির বেদি চতুষ্কোণ আকৃতির এবং দক্ষিণাগ্নির বেদি অর্ধচন্দ্রাকৃতির হয়ে থাকে। গার্হপত্য মূলত অগ্নি গৃহস্থের প্রতিনিধি স্বরূপ এবং এই অগ্নি সব সময় প্রজ্জ্বলিত রাখতে হয়।

যজ্ঞ

     অগ্নি প্রজ্জ্বলন করার জন্য মাটি খনন করে বেদি বা কুণ্ড (অগ্নিস্থান) নির্মাণ করা হয়। যজমানের চিবুক থেকে মুখ পর্যন্ত যতটুকু হয় ততটুকু মাটি খনন করা বিধেয়। বেদির পাঁচটি স্তর থাকে। যজ্ঞবেদির একটি গভীর তৎপর্য রয়েছে। যজ্ঞবেদি অন্তরিক্ষলোক, উখা (পাক করার চুলা) নির্মাণ জগৎসৃষ্টি এবং ইষ্টক (ইট) নিমার্ণ প্রজা সৃষ্টির সাথে তুল্য। অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করার কাষ্ঠকে সমিধ বলে। সমিধ লম্বায় এক বিঘত এবং বুড়ো আঙ্গুলের মত মোটা হতে হয়। যজ্ঞের সমিধ হিসেবে পলাশ, অশ্বত্থ, যজ্ঞডুমুর প্রভৃতি বৃক্ষের কাষ্ঠ প্রসিদ্ধ।

বৈদিক যজ্ঞের হবি

    যজ্ঞীয় দ্রব্যের সারবস্তুই ঘৃত। “ঘৃত” শব্দের আক্ষরিক অর্থ উজ্জ্বল জ্যোতি। তাই ঘৃত হৃদয়ের উজ্জ্বল জ্যোতির প্রতীক স্বরূপ। অগ্নিতে ঘৃত প্রদান করলে যজ্ঞকারীর হৃদয়ের উজ্জ্বল জ্যোতি যেন অগ্নির উজ্জ্বল জ্যোতিতে মিলিয়ে যায় এবং এই জ্যোতির দ্বারা অসুরদের বিনাশ হয়। শুধু যজ্ঞে বিঘ্ন উৎপাদনকারী অসুর নয় অন্তরের ষড়-রিপু নামক অসুরও বিনাশপ্রাপ্ত হয়। তাই অগ্নিতে ঘৃত উৎসর্গ করলে দেবতাগণও সন্তুষ্ট হন এবং সেই সাথে মনও নির্মল হয়। প্রাচীনকালে সোমরস ছিল যজ্ঞের মুখ্য উপকরণ। সোম নামক এক প্রকার লতাকে পেষণ করে যে রস প্রস্তুত করা হত, তাই সোমরস। চন্দ্র দেবতার অপর নাম সোম। চন্দ্র বা সোম দেবতা হলেন মনের অধিপতি। বস্তুত সোমরসকে বিশুদ্ধ মনের প্রতীক কল্পনা করা হয়। তাই অগ্নিতে সোমরস প্রদান করার অর্থ বিশুদ্ধ মনকে দেবতার উদ্দেশ্যে সমার্পণ করা। শুদ্ধ মনে যজ্ঞ করা একান্ত আবশ্যক। কারণ শুদ্ধ মনে যজ্ঞ না করলে সে যজ্ঞ সুফলের পরিবর্তে কুফল প্রদান করে। সোমরস মনের পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

বৈদিক যজ্ঞে আহুতি

    ঘৃত, সোমরস প্রভৃতি আহুতি দেওয়ার জন্য যে হাতা ব্যবহার করা হয়, তাকে দর্বী বলে। চরু এবং শস্যচূর্ণ দ্বারা তৈরী পুরোডাশ (পিঠা বা পরোটা) আর্যদের খুব প্রিয় ছিল বলে ঐসব দ্রব্যও অগ্নিতে উৎসর্গ করা হত। পশুযাগে দেবতাদের অজ (ছাগ), অশ্ব, মহিষ প্রভৃতি পশু উৎসর্গ করা হয়। যজ্ঞীয় দ্রব্য উৎসর্গ করার পূর্বে ঐ দ্রব্য মন্ত্র দ্বারা শোধন করতে হয়। মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক অগ্নিতে হব্য প্রদান করাকে আহুতি বলে। আহুতি বলতে আত্মাহুতি বা আত্ম-বলিদান বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে দেবতাদের উদ্দেশ্যে আত্মা বা মনকে সমাপর্ণ করাই যজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য।

বৈদিক যজ্ঞের পুরোহিত    

    এবার যজ্ঞের পুরোহিত প্রসঙ্গে আসা যাক। যে ব্রাহ্মণ দ্বারা যজ্ঞ পরিচালিত হয় সে ব্রাহ্মণকে পুরোহিত বলে। যজ্ঞের পুরোহিতকে ঋত্বিকও বলা হয়। “ঋতু” থেকে ঋত্বিক শব্দ গঠিত। যিনি ঋতু সম্পর্কে জানেন, তিনিই ঋত্বিক। প্রাচীনকালে ঋতু অনুসারে যজ্ঞ আরম্ভ হত। তাই যজ্ঞ সম্পাদনকারী পুরোহিতের ঋতু সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যজ্ঞের মূল পুরোহিত চার জন, যথা হোতা, উদ্গাতা, অধ্বযুর্ এবং ব্রহ্মা। হোতা হলেন ঋগ্বেদীয় পুরোহিত এবং তিনি ঋগ্বেদ সংহিতার মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক দেবতাগণকে আহবান করেন। সামবেদীয় পুরোহিত উদ্গাতা সামবেদ সংহিতার মন্ত্র সুর করে পাঠ করেন। এরকম সুর করে পাঠ করাকে উদ্গান বা সামগান বলে। যজুর্বেদীয় পুরোহিত অধ্বযুর্ যজ্ঞের বেদি নির্মাণ, ঘৃতাদি যজ্ঞীয় দ্রব্য প্রস্তুত, আহুতি প্রদান প্রভৃতি যজ্ঞ সংশ্লিষ্ট সকল কার্য সম্পাদন করেন। ব্রহ্মা নামক পুরোহিত ত্রিবেদীয় অর্থাৎ ঋক্, সাম ও যজুঃ এই তিন বেদ সম্পর্কেই তাঁর জ্ঞান রয়েছে। ব্রহ্মা সমস্ত যজ্ঞকর্মটি পরিচালনা করেন এবং সব কিছু তত্ত্বাবধান করেন। ব্রহ্মা যজ্ঞকর্মের প্রধান পুরোহিত এবং হোতা উদ্গাতা ও অধ্বযুর্ থেকে অধিক সম্মানিত পুরোহিতও বটে। যজ্ঞকর্মে কোন ভুলত্রুটি বা বৈগুণ্য ঘটলে তার জন্য তিনিই দায়ী হবেন। মৈত্রাবরুণ, অচ্ছাবাক ও গ্রাবস্তুৎ এই তিনজন হলেন হোতার সহকারী পুরোহিত। উদগাতার সহকারী পুরোহিতগণ হলেন প্রস্ত্যেতা, পতিহর্তা ও সুব্রহ্মণ্য। অধ্বযুর্র সহকারী পুরোহিতগণ হলেন প্রতিপ্রস্থতা, নেষ্টা ও উন্নেতা। ব্রহ্মার সহকারী পুরোহিতগণ হলেন ব্রহ্মণাচ্ছংসী, অগ্নীদ্র ও পোতা। মূল চার জন্য পুরোহিত এবং তাদের সহকারী বার জন পুরোহিত নিয়ে মোট ষোল জন পুরোহিতের মাধ্যমে যজ্ঞ সম্পাদিত হয়। তবে কৌষীতকি ব্রাহ্মণ অনুসারে ঐ ষোলজন পুরোহিত ছাড়াও সদস্য নামে একজন পুরোহিত থাকে। যজ্ঞ শুরুর পূর্বে যজমানকে ঋত্বিক-বরণ করতে হয় এবং যজ্ঞের শেষে ঋত্বিকগণকে যথাসাধ্য দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। দক্ষিণা প্রদান না করলে যজ্ঞকর্ম সম্পূর্ণ হয় না। দক্ষিণা প্রধানত চার প্রকার, যথা স্বর্ণ, গো, বস্ত্র এবং অশ্ব। তবে পুরুষমেদ যজ্ঞে যজমান সর্বস্ব দান করে যজ্ঞ শেষে বনে গমন করতেন। যজ্ঞের সময় যজমানের জলপান করে ক্ষুধা নিবারণ করাই শ্রেয়। কারণ শস্য দ্বারা তৈরি অন্ন ভোজনে ইন্দ্রিয় তৃপ্তি ঘটে এবং উপবাসে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। জলপান করলে ভোজনও হয় না আবার ক্ষুধাও নিবৃত্ত হয়। তাই যজ্ঞের সময় উপবাস করে দেহকে কষ্ট না দিয়ে জলপান করা আবশ্যক।

বৈদিকযজ্ঞ কত প্রকার

   যজ্ঞ প্রধানত পাঁচ প্রকার, যথা হোম, ইষ্টি, পশু, সোম ও সত্র। যজ্ঞ বিকৃত বা রূপান্তরিত হয়ে যে সব যজ্ঞ সৃষ্টি হয়, তাকে বিকৃতি বা অঙ্গযাগ বলে এবং যে যজ্ঞ প্রধান বা যে যজ্ঞের বিকৃতি বা রূপান্তর ঘটে বিকৃতি যাগ সৃষ্টি হয়, তাকে প্রকৃতি বা প্রধান যাগ বলে। হোমের প্রকৃতি অগ্নিহোত্র, ইষ্টির প্রকৃতি দর্শপূর্ণমাস, পশুযাগের প্রকৃতি দক্ষ প্রাজাপত্য পশু, সোমযাগের প্রকৃতি অগ্নিষ্টোম এবং সত্রযাগের প্রকৃতি গবাময়ন। নিচে পাঁচ প্রকার যজ্ঞের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল।

হোম যজ্ঞ

   এই যাগে দর্বী বা হাতার মাধ্যমে ঘৃত আহুতি দেয়া হয় বলে এ যাগকে দর্বী হোমও বলা হয়। প্রতিদিন প্রাতঃকালে এবং সন্ধ্যাকালে অগ্নিতে দুধ, ঘৃত, দধি, পুরোডাশ প্রভৃতি উৎসর্গ করে এই যাগ করা হয়। প্রাতঃকালে সূর্যের উদ্দেশ্য এবং সন্ধ্যাকালে অগ্নির উদ্দেশ্যে যজ্ঞীয় দ্রব্য প্রদান করা হয়। অগ্নিহোত্র নামক যজ্ঞ থেকে হোম যজ্ঞের উৎপত্তি। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বশ্যের অর্থাৎ দ্বিজাতির প্রতিদিন হোম যজ্ঞ করা কর্তব্য। তবে ব্রাহ্মণের জন্য হোম-যাগ বাধ্যতামূলক। হোম যজ্ঞ স্বয়ং যজমানকে করতে হয় অর্থাৎ এই যাগে পুরোহিতের প্রয়োজন নেই। তবে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ নিজে করতে অসমর্থ হলে পুরোহিত দ্বারা এ যাগ সম্পাদন করতে পারেন। হোম যজ্ঞ সস্ত্রিক করা বিধেয়। এজন্য কুমার ও বিপত্নীকদের এই যাগে অধিকার নেই। এই যাগে প্রাতেঃ “সূর্যঃ জ্যোতিঃ জ্যোতিঃ সূর্যঃ” এবং সন্ধ্যায় “অগ্নির্জে্যাতিঃ জ্যোতিরাগ্নিঃ” প্রভৃতি মন্ত্র পাঠ করতে হয়। তবে সূর্য অগ্নির সাথে প্রজাপতির উদ্দেশ্যেও হোম করা বিধেয়। হোম যজ্ঞের প্রকৃতি অগ্নিহোত্র যজ্ঞ অগ্নিহোত্র যজ্ঞে দুধ সংগহের জন্য একটি গাভী পালন করা হয়। ঐ গাভীকে অগ্নিহোত্রী গাভী বলে। অগ্নিহোত্র যজ্ঞের হাতার নাম অগ্নিহোত্রবনী। প্রাতেঃ হোম করার ক্ষেত্রে দুটি মত প্রচলিত। বহবৃচ শাখার ব্রহ্মাণগণ সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং তৈত্তিরীয় শাখার ব্রাহ্মণগণ সর্যোদয়ের পরে হোম করেন। সূর্যোদয়ের পূর্বে গার্হপত্য অগ্নি হতে অগ্নি চয়ন করে অগ্নিহোত্রের হোমকুণ্ড প্রজ্জ্বলিত করা আবশ্যক। যজমান ব্রাহ্মণ অসুস্থ থকলে পুত্র বা অন্য পুরোহিতের মাধ্যমে হোম করাতে পারবেন। তবে পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার দিন যজমান ব্রাহ্মণ অসুস্থ থাকলেও তাঁকে হোম করতে হবে।

ইষ্টি যজ্ঞ

    ইষ্টি যজ্ঞের প্রকৃতি-যাগের নাম দর্শপৌর্ণমাস। দর্শ অর্থ সূর্য ও চন্দ্রের সঙ্গম অর্থাৎ অমাবস্যা। পৌর্ণমাসী অর্থ পূর্ণিমা। আমাবস্যা ও পূর্ণিমায় যে যজ্ঞ করা হয়, তাকে দর্শপৌর্ণমাস বলে। অবিবাহিত ও বিপত্নীকগণ এ যজ্ঞ সম্পাদন করতে পারবেন না। অমাবস্যায় দুই দিন এবং পূর্ণিমার দুই দিন এই ইষ্টি যজ্ঞ করতে হয়। পূর্ণিমা থেকে এই যজ্ঞের শুরু করতে হয় অর্থাৎ অমাবস্যা থেকে যজ্ঞ শুরু করা যায় না। এই যজ্ঞে ষোল জন পুরোহিতই প্রয়োজন। এ যজ্ঞে প্রধানত তিনটি আহুতি প্রদান করা হয়। অগ্নি দেবতার উদ্দেশ্যে পুরোডাশ দ্বারা প্রথম আহুতি দেয়া হয়। বিষ্ণু প্রজাপতি, অগ্নি ও সোম এই চার দেবতার যে কোন একজন দেবতার উদ্দেশ্যে দধি দ্বারা দ্বিতীয় আহুতি দেয়া হয়। অগ্নি ও সোম দেবতাকে একত্রে দুগ্ধ দ্বারা তৃতীয় আহুতি দেয়া হয়। ইষ্টি যজ্ঞের শেষ সময়ে অগ্নি দেবতার উদ্দেশ্যে অগ্নিস্বিষ্টকৃৎ নামক আহুতি দিতে হয়। তারপর যজ্ঞের আহুতি-কার্য সম্পন্ন করার পর যে দুগ্ধ, দধি, পুরোডাশ প্রভৃতি হব্য-দ্রব্য থেকে যায়, তা একত্রে মিশ্রিত করে ভক্ষণ করা হয়। এই অবশিষ্ট হব্য-দ্রব্য ভক্ষণকে ইড়া-ভক্ষণ বলে। ইড়া-ভক্ষণের পর একটি কুশপ্রস্তর নামক কুশ নির্মিত মূর্তি যজ্ঞাগ্নিতে নিক্ষেপ করা হয়। ঐ কুশ নির্মিত মূর্তি মূলত যজমানের প্রতীক। মূর্তিটি অগ্নিতে পুড়ে যখন ভস্মে পরিণত হয়, তখন যজমান মনে করেন যে, তাঁর নশ্বর দেহ দগ্ধ হয়েছে এবং যজ্ঞের মাধ্যমে তাঁর আত্মা দেবতার সাযুজ্য লাভ করেছে অর্থাৎ দেবতার সাথে একাত্ম হয়ে গেছে। ইষ্টি যজ্ঞ দুই ধরণের, যথা নিত্য এবং কাম্য। কোনও কিছু কামনা করে যে ইষ্ট যজ্ঞ করা হয়, তাকে কাম্য ইষ্টি যজ্ঞ বলে। এবং কোন কামনা না করে নিয়মিত পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় যে ইষ্টি-যজ্ঞ করা হয় তাকে নিত্য ইষ্ট যজ্ঞ বলে। এছাড়াও পুত্র কামনায় পুত্রেষ্টি, অনাবৃষ্টির সময় বৃষ্টি আনার জন্য কারীরি-ইষ্টি, শস্যক্ষেত্রের প্রথম শস্য বা বৃক্ষের প্রথম ফল দেবতাকে অপর্ণ করার জন্য আগ্রায়ণ ইষ্টি প্রভৃতি যজ্ঞ প্রচলিত রয়েছে।

পশু যজ্ঞ

   পশু যজ্ঞকে নিরূঢ় পশুবন্ধও বলা হয়। পশু-যাগের প্রকৃতি দৈক্ষ বা প্রাজাপত্য পশু। পশু যজ্ঞ বছরে দুই থেকে ছয় বার পর্যন্ত করা যায়। পশু যজ্ঞ এক বার করলে বর্ষাকালে, দুই বার করলে দক্ষিণায়ণ ও উত্তরায়ণের সময় এবং ছয় বার করলে ছয় ঋতুর প্রত্যেক ঋতুতে এক বার করতে হয়। পশু যজ্ঞে সাধারণত ছাগকেই আহুতি দিতে হয়। ছাগের হৃদপিণ্ড, বপা (মেদ বা চর্বি) প্রভৃতি অগ্নিতে আহুতি দেয়া হয়। পশু যজ্ঞে যে ছয় জন পুরোহিতের প্রয়োজন, যথা অধ্বযুর্, প্রতিপ্রস্থাতা, হোতা, মৈত্রাবরুণ, অগ্নি ও ব্রহ্মা। পশু যজ্ঞে পশুবন্ধন করার জন্য পলাশ, খদির, বিল্ব ও রোহিতক এই চার প্রকার বৃক্ষের যে কোন একটি বৃক্ষের কাষ্ঠ দিয়ে যুপ নির্মাণ করা হয়। যজ্ঞ বেদির পূর্ব প্রান্তে যূপকাষ্ঠ স্থাপন করতে হয়। দৈহিক ত্রুটি বর্জিত পুরুষ ছাগ অর্থাৎ পাঠাই যজ্ঞের জন্য প্রয়োজন। ছাগটিকে বধের পূর্বে উপকারণ করা হয়। মন্ত্রপূত ছাগকে প্লক্ষবৃক্ষের শাখা দ্বারা ষ্পর্শ করে “অগ্নয়ে ত্বা জুষ্ট মুপাকরোমি” মন্ত্র পাঠ করাকে উপকারণ বলে। বলির পশুটিকে শ্বাসরোধ করে বধ করতে হয়। যজ্ঞ বেদির উত্তরপূর্ব দিকে শামিত্র স্থানে পশুর ব্যবচ্ছেদ এবং হাড় থেকে মাংস পৃথক প্রভৃতি কার্য করা হয়। একটি মাটির পাত্রে পশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শামিত্র নামক বহ্নিকুণ্ডে (চুলায়) পাক করা হয়। পাককার্য চলাকলে যজ্ঞের অগ্নিতে পুরোডাশ আহুতি দেয়া হয়। পাক শেষে অধ্বযুর্ আমক পুরোহিত আহবনীয় অগ্নিতে আহুতি দেন। পশু যজ্ঞে পশুকে আহুতি দিলে সে পশুর আত্মা দেবতার সাথে লীন হয়ে যায়। আহুতির পর অবশিষ্ট পশুর মাংস কেউ কেউ ভক্ষণ করে আবার কেউ কেউ ভক্ষণ করে না। যারা ভক্ষণ করেন না, তাদের মতে পশু যজমানের প্রতীক। যজমান পশুর মাধ্যমে নিজেকেই আহুতি দিয়ে দেবত্ব লাভ করেন। তাই পশু-মাংস ভক্ষণ করলে তা যজমানের নিজের মাংস ভক্ষণতুল্য হবে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য পশু যজ্ঞের অধিকারী অর্থাৎ শুদ্রের পশু যজ্ঞের অধিকার নেই।

 সোম যজ্ঞ

    সোম যজ্ঞের প্রকৃতি অগ্নিষ্টোম বা জ্যোতিষ্টোম। সোম যজ্ঞের বারটি স্তোত্র-গীতের শেষ স্তোত্রটির নাম অগ্নিষ্টোম এবং এই শেষ স্তোত্রটির নাম অনুসারে সত্র যজ্ঞের নাম অগ্নিষ্টোম হয়েছে। সোম যজ্ঞে ষোল জন ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত প্রয়োজন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সোম যাগের অধিকার রয়েছে। বর্তমানে সোমলতা পাওয়া যায় না। সে কালেই সোমলতা দুষ্পাপ্য ছিল। সেজন্য সোমলতার অভাবে পূতিকা নামক লতার রস আহুতি দেয়ার বিধান ছিল। যজ্ঞের প্রথম দিন পুরোহিতদের অভিনন্দন জানিয়ে এবং দক্ষিণার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋত্বিক-বরণ করা হত। দ্বিতীয় দিন প্রাতেঃ প্রায়ণীয় ইষ্টির মাধ্যমে যজ্ঞ শুরু করা হত। যে ইষ্টি দ্বারা যজ্ঞ আরম্ভ হয়, তাই প্রায়ণীয় ইষ্ট। প্রায়ণীয়েষ্টিতে পথ্যাস্বস্তি, অগ্নি, সোম, সবিতা ও অদিতি এই পাঁচ জন দেবতাকে আবাহন করা হত। অদিতির উদ্দেশ্যে পুরোডাশ এবং অপর চারজন দেবতার উদ্দেশ্যে আজ্য আহুতি দেয়া হত। আজ্য বলতে গলিত ঘৃত বোঝায় এবং ঘৃত বলতে মূলত ঘনীভূত ঘৃতই বোঝায়। এক বছর বয়স্ক বাছুর, স্বর্ণ, ছাগী, বাছুর সহ গাভী, ষাঢ়, বলদ, এঁড়ে ও বকনা বাছুর এবং এই দশ দ্রব্যের মাধ্যমে শুদ্রের নিকট সোমলতা ক্রয় করা হত। পুরোহিতগণ বলদ-বাহিত শকটে করে সোমলতা যজ্ঞস্থলে নিয়ে আসত। অতিথি সোমলতার উদ্দেশ্যে আতিথ্যেষ্টি নামক যজ্ঞ করা হত। তৃতীয় দিন যজ্ঞস্থলের পূর্বদিকে প্রাগবংশ বা প্রাচীনবংশ নামক একটি মহাবেদি নির্মাণ করা হত। চতুর্থ দিনে অগ্নি ও সোম দেবতার উদ্দেশ্যে একটি পশু-যাগ করা হত। তারপর সোমকে দক্ষিণদিকে নির্মিত হবির্ধান নামক বেদিতে নিয়ে যাওয়া হত। পঞ্চম দিনে অর্থাৎ শেষ দিনে সোমরস নিষ্কাশন করতে হত। সোমরস নিষ্কাশনকে সোম অভিষব বা সোম-সবন বলে। সূর্যোদয়ের পূর্বে পুরোহিতগণ সোমলতাকে একটি প্রস্তর-খণ্ডের উপর রেখে বসতীবারী নামক জল ছিটাতেন। অপর একটি প্রস্তর-খণ্ড দ্বারা সোমলতা থেঁতলিয়ে রস বের করে গ্রহ নামক পাত্রে ঐ সোমরস রাখা হত। পরে সোমরস, মেষলোম বা ছাগচর্ম নির্মিত দশাপবিত্র নামক ছাঁকনীর সাহায্যে ছেকে দ্রোণ-কলস নামক পাত্রে ঐ রস রাখা হত। প্রত্যেক দিন প্রাতেঃ, মধ্যাহ্নে ও সন্ধ্যায় সোমরস নিষ্কাশন করা হত এবং এই তিন সবনকে যথাক্রমে প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিন-সবন এবং তৃতীয় সবন বলা হত। আহুতি দেয়ার পর অবশিষ্ট সোমরস যজমান ও পুরোহিত চামস বা হাতার সাহায্যে পান করতেন। মাধ্যন্দিন সবনের পর পুরোহিতকে দক্ষিণা স্বরূপ গরু, অশ্ব, গাধা, ছাগল, মেষ, তিল, মসুর, মাষকলাই, ধান, যব প্রভৃতি দেয়া হত। তৃতীয় সবনের পর অবভূথ স্নান করা হত। অবভূত স্নানের সময় জলাশয়ে বরুণ দেবতার উদ্দেশ্যে জলে পুরোডাশ অর্পণ করা হত। স্নান শেষে যজমান ও তাঁর পত্নী ব্রাহ্মণ প্রদত্ত নতুন বস্ত্র পরিধান করতেন। তারপর উদয়নীয় নামক এক প্রকার ইষ্টির মাধ্যমে যজ্ঞ শেষ হত। উদয়নীতে দুধ, মধু, দধি, শর্করা প্রভৃতির মিশ্রণে তৈরি চরু আহুতি দেয়া হত।

সত্র যজ্ঞ 

    যে যজ্ঞ একদিনে সম্পন্ন হয় তাকে একাহ, যে যজ্ঞ সম্পন্ন করতে একদিনের অধিক কিন্তু দ্বাদশ দিনের কম সময় লাগে তাকে অহীন এবং যে যজ্ঞ সম্পন্ন করতে দ্বাদশ দিনের অধিক সময় লাগে তাকে সত্র যজ্ঞ বলে। সত্র যজ্ঞের কোনটি একবর্ষব্যাপী, কোনটি দশবর্ষব্যাপী, কোনটি একশতবর্ষব্যাপী এবং কোনটি সহস্র-বর্ষব্যাপীও করা হত। সত্র যজ্ঞের প্রকৃতি গবাময়ন নামক যজ্ঞ। কথিত আছে, পুরাকালে গরুরা শৃঙ্গবিহীন ছিল। তারা শৃঙ্গ লাভের আশায় গবাময়ন-যজ্ঞ করেছিল। দশমাস পরে তাদের মস্তকে শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়েছিল। গরু কতৃর্ক সম্পাদিত যজ্ঞই গবাময়ন-যজ্ঞ। গবাময়ন-যজ্ঞ করতে একবৎসর (৩৬১ দিন) সময় লাগত। সত্র যজ্ঞের সম্পাদন কালকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা প্রথমার্ধে ১৮০ দিন, দ্বিতীয়ার্ধে ১৮০ দিন এবং উভয় অর্ধের মধ্যে বিষয় নামক এক দিন। সত্র-যাগেও সোমলতার রস আহুতি দেয়া হত। সত্র যজ্ঞের মধ্যে ষড়হ (ছয় দিনে নিষ্পন্ন যাগ) রয়েছে। ষড়হের প্রথমদিনে জগতিষ্টোম, দ্বিতীয় দিনে গোষ্টোম, তৃতীয় দিনে আয়ুষ্টোম, চতুর্থ দিনে গোষ্টোম পঞ্চমদিনে আয়ুষ্টোম এবং ষষ্ঠ দিনে জ্যোতিষ্টোম পাঠ করা হত। ৩৬০ দিনের কম কিন্তু একাদশ দিনের অধিক কালব্যাপী যে যজ্ঞ সম্পাদিত হয়, তাকে দ্বাদশাহ বলে। সত্রের মত দ্বাদশাহ যজ্ঞেও প্রথম ও শেষ দিনে অতিরাত্র যাগ অনুষ্ঠিত হত। দ্বাদশাহ সম্পাদিত হতে ছত্রিশ দিন লাগত। প্রথম দ্বাদশ দিনে দীক্ষা, তার পরবর্তী দ্বাদশ দিনে উপসদ্ এবং শেষ দ্বাদশ দিনে সুত্যা অনুষ্ঠিত হত। দ্বাদশাহ প্রধানত দুই প্রকার, যথা ভরত-দ্বাদশাহ এবং ব্যূঢ়-দ্বাদশাহ। ভরত-দ্বাদশাহে প্রথম ও দ্বাদশ দিনে অতিরাত্র, দ্বিতীয় ও একদাশ দিনে অগ্নিষ্টোম এবং অবশিষ্ট দিন গুলোতে উকথ্য অনুষ্ঠিত হত। শেষ অতিরাত্রের আগের দিনকে মহাব্রত বলা হত। ব্যূঢ়-দ্বাদশাহে প্রথম ও শেষ দিন অতিরাত্র এবং দ্বিতীয় থেকে সপ্তম দিন পৃষ্ঠ-ষড়হ অনুষ্ঠিত হত। দশম দিনে অবিবাক্যম এবং অষ্টম, নবম ও একাদশ দিনে ছন্দোম অনুষ্ঠিত হত।

    পূবোক্ত পাঁচ প্রকার যজ্ঞ ছাড়াও রাজতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু যজ্ঞ রয়েছে, যথা রাজসূয়, বাজপেয়, অশ্বমেদ, বৃহস্পতিসব প্রভৃতি। রাজাসূয় যজ্ঞ করে রাজা, বাজপেয় যজ্ঞ করে সম্রাট এবং অশ্বমেদ যজ্ঞ করে সার্বভৌম নৃপতি হওয়া যায়। নিচে এসব যজ্ঞের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল।

রাজসূয় যজ্ঞ

রাজসূয় যজ্ঞ তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হত। প্রথম পর্যয়ে প্রারম্ভিক যাগ-যজ্ঞ, দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ-অভিষেক এবং তৃতীয় পর্যায়ে অভিষেকোত্তর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হত। পবিত্র নামক অনুষ্ঠানের দ্বারা রাজসূয় যজ্ঞ শুরু হয়ে একবছর ব্যাপী বিভিন্ন যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হত। রাজসূয় যজ্ঞে ষষ্ঠী থেকে আটটি যাগ সম্পাদন করতে হত। ঐ সব যাগে অনুমিতি, নিঋর্তি, গার্হপত্য অগ্নি, অদিতি, বিষ্ণু, ইন্দ্র, সোম ও সরস্বতীর উদ্দেশ্যে হবি দিতে হত। রাজাকে ঋত্বিক, রাজন্য, রাজমহিষী, সেনাপতি, সারথি, গ্রাম্য নেতা, মন্ত্রী, কোষাধ্যক্ষ, কর আদায়কারী, দ্যুতকর এবং যজমানের গৃহে গিয়ে আহুতি প্রদান করতে হত। এসব যাগ সম্পন্ন হওয়ার পর রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান আরম্ভ করতে হত। অভিষেক অর্থ জল দ্বারা সিঞ্চন স্নান করানো। অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হতে পাঁচ দিন লাগত। অনুষ্ঠানের শুরুতে অগ্নি, সোম, সবিতা, রুদ্র, বৃহস্পতি, ইন্দ্র, মিত্র এবং বরুণ এই আট জন দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতি দেয়া হত। রাজার অভিষেক বা স্নান করানোর জন্য নদীর জল, কূপের জল, স্থাবর জল, নীহার জল প্রভৃতি সংগ্রহ করা হত। অধ্বযুর্ রাজাকে একটি ধনুক ও তিনটি শর বা তির প্রদান করতেন। ধনুক মূলত রাজশক্তি ও শাসনকার্যের প্রতীক। তারপর রাজা রথ আহরণের পর পট্টবস্ত্র ও স্বর্ণমুকুট পরিধান করে ব্যঘ্রচর্মে ঢাকা সিংহাসনে বসতেন। রাজার মাথার উপর এবং পায়ের নিচে সোনার থালা রাখা হত। রাজা তিন বার পা ফেলে মর্ত্য, অন্তরিক্ষ ও স্বর্গ জয় করেছেন এরকম মনে করতেন। অভিষেকের পর দশম দিনে দশপেয় নামক একটি সোমযাগ অনুষ্ঠিত হত। এক বৎসর পর্যন্ত রাজাকে নানা ব্রত পালন করতে হয় এবং তাঁকে ক্ষৌরকর্ম থেকে বিরত থাকতে হত। রাজসূয় যজ্ঞে পুরোহিতকে দক্ষিণা স্বরূপ গরু, স্বর্ণ, দর্পণ, স্বর্ণমাল্য, স্বর্ণালঙ্কার, বস্ত্র, যবপূর্ণ শকট (রথ), বলদ, অশ্ব, বৎসতরী (দু-বছরের গাভী) প্রভৃতি দেয়া হত।

অশ্বমেধ যজ্ঞ

    শক্তিশালী ক্ষত্রিয় রাজাগণ বিভিন্ন রাজ্য জয় করে দিগ্বিজয়ী হয়ে এই যজ্ঞ করার অধিকার অর্জন করতেন। এ যজ্ঞকে ক্ষত্রিয় যজ্ঞও বলা হয়। ফাল্গুন মাসের অষ্টমী অথবা নবমী তিথিতে অশ্বমেদ যজ্ঞ শুরু করতে হত। দেবতার উদ্দেশ্যে পশু যজ্ঞ করার পর একটি অশ্বকে পবিত্র জলে স্নান করিয়ে এক বৎসরের জন্য বিভিন্ন রাজ্য পরিক্রমার জন্য প্রেরণ করা হত। ঐ এক বৎসরব্যাপী যজমানকে কতগুলো হোম যজ্ঞ সম্পন্ন করতে হত। এক বৎসর পর যজ্ঞীয় অশ্বটি প্রত্যাবর্তন করলে প্রথমে অগ্নিষ্টোম করতে হত। তারপর যজ্ঞভূমিতে অশ্বকে বেঁধে রাখার জন্য ছয়টি বিল্ব, ছয়টি খদির, ছয়টি পলাশ, দুইটি দেবদারু এবং একটি শ্লেষ্মাতক বৃক্ষ দ্বারা তৈরি যূপ স্থাপন করা হত। ঋতিকগণ বিভিন্ন পশুপক্ষী ও জলচর প্রাণীর সাথে ঐ যজ্ঞীয় অশ্বটিকেও যূপকাষ্ঠের সাথে বেঁধে রাখা হত। একেক দেবতার উদ্দেশ্যে একেক প্রকার প্রাণী উৎসর্গ করা হত। যেমন ইন্দ্রকে বরাহ, সূর্যকে বলাকা, বায়ুকে হংস, হিমালয়কে হস্তী, সমুদ্রকে মকর উৎসর্গ করা বিধেয় ছিল। অশ্বটিকে বধ করে তার দেহের বিভিন্ন অংশ পাক করে দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। অশ্বমেদ যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা হিসেবে গো, অশ্ব, স্বর্ণ, রৌপ্য, বস্ত্র, অলঙ্কার, রত্ন, স্ত্রী প্রভৃতি প্রদান করা হত।

বাজপেয় যজ্ঞ

    বাজপেয যজ্ঞের প্রভৃতি সোম-যাগ। বাজপেয় যজ্ঞ সম্পন্ন করতে সতের থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগত। সতের দিনের তের দিন দীক্ষা, একদিন সুত্য ও তিনদিন উপসদ্-যাগ অনুষ্ঠিত হত। যজ্ঞের শেষ দিন যজমান রাজা রথে আহরণ করতেন এবং তাঁর সাথে আরও ষোল জন রথী ষোলটি রথে আরোহন করতেন। তারপর শুরু হত রথ-চালনা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার সময় সতেরটি বাদ্য-যন্ত্র বাজোনো হয় এবং ঐ সময় বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে আহুতি দেয়া হত। তারপর যজমান সবার অগ্রে রথে চেপে বেদির নিকটে আগমন করতেন। বাজ, প্রসব, অপিজ, ক্রতু, বসু, মূর্ধা, ব্যশ্নিয়, আন্ত্যায়ন, আন্ত্য, ভৌবন, ভূবন ও অধিপতি এই দ্বাদশ প্রজপতির উদ্দেশ্য দ্বাদশ হোম করতে হত।

    উপরি-উক্ত যাগ-যজ্ঞ ছাড়াও প্রাচীনকালে পশুপক্ষীর মঙ্গল কামনায় চিত্রা-যাগ, প্রবাস গমনকালে কার্যসিদ্ধি কামনায় বাস্তোষ্পতীয় যাগ, আয়ু বৃদ্ধি ও রোক্তমুক্তি কামনায় চক্ষুষ্কাম যাগ, পুত্র সন্তান কামনায় পুত্রেষ্টি-যাগ, ধন ও ঐশ্বর্য কামনায় শ্রীযাগ প্রভৃতির প্রচলন ছিল। 

    গীতা অনুসারে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভেদে যজ্ঞ তিন প্রকার। ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে যজ্ঞ করতে হয় তাই করি, এই অবশ্য-কর্তব্যবোধে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শান্ত চিত্তে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে সাত্ত্বিক যজ্ঞ বলে। ফল লাভের উদ্দেশ্যে এবং দম্ভ সহকারে ঐশ্বর্য, মহত্ব বা ধামির্কতা প্রকাশার্থ যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে রাজসিক যজ্ঞ বলে। শাস্ত্রোক্ত বিধিশূন্য, অন্নাদানবিহীন, শাস্ত্রোক্ত মন্ত্রহীন, দক্ষিণাহীন ও শ্রদ্ধাশূন্য যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলে। ঋক্-বেদ সংহিতার ১০ম মণ্ডলের ৯০ নং সূক্তের ৭ নং ঋকে পুরষ-যজ্ঞের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আছে “যিনি সকলের অগ্রে জন্মেছিলেন, সে পুরুষকে যজ্ঞীয় পশুরূপে অগ্নিতে আহুতি দেয়া হল। দেবতগণ, সাধ্যবর্গ এবং ঋষিগণ তা দ্বারা যজ্ঞ করলেন”। ঐ পুরষ যজ্ঞে নিজেকেই আহুতি দিলেন অর্থাৎ পুরুষের আত্মাহুতির ফলে সৃষ্টিকার্য সম্পাদিত হয়েছে। শাস্ত্রে ব্রহ্ম যজ্ঞ বা ঋষি যজ্ঞ, পিতৃ যজ্ঞ, দৈব যজ্ঞ, ভূত যজ্ঞ এবং নৃ-যজ্ঞ এই পঞ্চযজ্ঞের কথার উল্লেখ আছে। ঋষি যজ্ঞ বা ব্রহ্ম যজ্ঞ বলতে সন্ধ্যা-উপাসনা, শাস্ত্র অধ্যয়ন, অধ্যাপনা প্রভৃতি বোঝায়। পিতৃ যজ্ঞ বলতে তর্পণ, শ্রাদ্ধ প্রভৃতি বোঝায়। দৈব যজ্ঞ বলতে হোম, সোম, সত্র যজ্ঞ প্রভৃতি বোঝায়। ভূত যজ্ঞ বলতে কাক আদি জীবজন্তুকে খাদ্য প্রদান এবং নৃ-যজ্ঞ বলতে অতিথি সৎকার বোঝায়। শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার জ্ঞানযোগে দ্রব্যযজ্ঞ, তপোযজ্ঞ, যোগযজ্ঞ, স্বাধ্যায়-যজ্ঞ এবং বেদজ্ঞান যজ্ঞ এই পঞ্চ মহা যজ্ঞের উল্লেখ আছে। দ্রব্য-যোগ্য বলতে পূজা-অর্চনা, দেবমন্দির প্রতিষ্ঠা, দান, শ্রৌতকর্ম (বৈদিক যাগ-যজ্ঞ) প্রভৃতি বোঝায়। তপোযজ্ঞ কৃচ্ছ্রতাসাধন পূর্বক উপবাস, ব্রত পালন প্রভৃতি বোঝায়। অষ্টঙ্গযোগ, লয়যোগ, হটযোগ প্রভৃতিকে যোগ-যজ্ঞ বলে। ব্রহ্মচর্য অবলম্বন পূর্বক শ্রদ্ধার সাথে যথাবিধি বেদ-বেদান্ত পাঠই স্বাধ্যায় যজ্ঞ। যুক্তি দ্বারা বেদের অর্থ নিশ্চয় করার নাম বেদজ্ঞান যজ্ঞ।

 (আমা কর্তৃক লিখিত “হিন্দুধর্মের সারকথা” পুস্তক থেকে সঙ্কলিত)

এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

ঈশ্বরতত্ত্ব










 হিন্দু দেবতা