7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

    আনন্দের সংবাদ এই যে, আমা কর্তৃক লিখিত "হিন্দুধর্মের সারকথা" নামক গ্রন্থখানি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি ১৬টি অধ্যায় এবং ৫৪৪ পৃষ্ঠা সংবলিত। আশা করছি বইটি পাঠ করে পাঠক হিন্দুধর্মের মৌলিক বিষয় ছাড়াও অনেক গভীর দর্শন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারবেন। ধর্ম কি?, ধর্মের উৎপত্তি কোথায়?, ঈশ্বর কে?, দেবদেবীগণ কে? এবং দেবদেবীগণের পরিচয় কি?, অবতার কি?, আত্মা-পরমাত্মা ও ব্রহ্ম কি? ধর্মশাস্ত্র কি ও কত প্রকার?, মন্ত্র কি? শ্লোক কি? তন্ত্র কি? একজন হিন্দুর প্রতিদিন কি করা উচিত?, একজন হিন্দুর কার সাথে কেমন ব্যবহার বা আচরণ করা উচিত?, যজ্ঞ ও পূজা কি ও কত প্রকার?, উপাসনা কি ও কত প্রকার?, কিভাবে উপাসনা করতে হয়?, কর্ম-ভক্তি-জ্ঞান ও অষ্টাঙ্গ যোগ কি?, মূর্তি-পূজা কি এবং এর তাপর্য কি? কিভাবে নিজের পূজা নিজেকেই করতে হয়? বারো মাসে তের পার্বন কি? তন্ত্র-সাধনার রহস্য কি?, ষট-চক্র কি?, কিভাবে কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করতে হয়?, কিভাবে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হলো এবং কখন ধ্বংস হবে?, পরলোক কি?, পুনর্জন্ম কি?, কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?, কিসে পাপ কিসে পুণ্য এবং কোন পাপে কোন শাস্তি?, দশটি সংস্কার কি? চতুর্বর্ণ এবং চতুরাশ্রম বা আশ্রম-ধর্ম কি?, সাংখ্য প্রভৃতি ছয়টি দর্শন কি এবং তাপর্য কি? হিন্দুধর্মে কতটি মত-পথ রয়েছে? এবং কোন মতে কিভাবে সাধনা করতে হয়? জ্যোতিষ বিদ্যা কি? এবং কোন তিথিতে কি করণীয়? এসব মৌলিক বিষয়সমূহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহকারে পাওয়া যাবে বইটিতে।

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

    বইটি সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হয়েছে। হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত গ্রন্থ অসংখ্য কিন্তু আজকাল এত গ্রন্থ পাঠ করার সময় ও সাধ্য অনেকেরই নেই। এই বইটি বেদ, উপনিষদ, গীতা, পুরাণ, মনুসংহিতা আদি স্মৃতি-শাস্ত্র সহ হিন্দুধর্মের সকল মৌলিক শাস্ত্রের উপাদান নিয়ে রচিত ফলে এক বই পড়েই অসংখ্য ধর্মশাস্ত্র পাঠের স্বাদ পাবেন বলে আশা রাখি। এছাড়াও পুরাণের বিভিন্ন রূপক গল্প-উপাখ্যানের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দর্শনকে তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুধর্মের প্রায় সবদিকই সংক্ষেপে, ক্ষেত্র বিশেষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মচর্চা করতে গিয়ে অথবা দৈনন্দিন জীবনে যাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়, তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদানে বইটি সক্ষম হবে বলে মনে করি।

    এ পুস্তকে বেদ-উপনিষদ, পুরাণ ও স্মৃতিশাস্ত্রের বিভিন্ন মন্ত্রের বাংলা অনুবাদ সহ চয়ন করা হয়েছে। নিত্যকর্ম ও পূজা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রেরও অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যাতে নারী-পুরুষ, যুব-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই সহজে এবং ভালভাবে বুঝে পূজা ও নিত্যকর্ম সম্পাদন করতে পারে। হিন্দুধর্মে বহু মত-পথ রয়েছে কিন্তু বইটিতে কোন বিশেষ মতকে প্রাধান্য দেয়া বা কোন মতকে ছোট করা হয়নি। সর্ব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে নিরপেক্ষ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বইটি রচনা করা হয়েছে, ফলে বইটি যে কোন সম্প্রদায় তথা যে কোন ধর্মের পাঠক পাঠ করতে পারবেন। দিন দিন মানুষ শাস্ত্রবিমুখ তথা জ্ঞানবিমুখ হয়ে পড়ছে। এই জ্ঞানবিমুখ জাতিকে সহজ সরল পন্থায় জ্ঞানের সন্ধান এই বইটি দেবে বলে আশা রাখি। "হিন্দুধর্মের সারকথা" গ্রন্থটি নিম্নোক্ত ষোড়শ অধ্যায়ে লিখিত:-

১) হিন্দুধর্ম, সৃষ্টিতত্ত্ব ও ঈশ্বরতত্ত্ব।

২) ধর্মশাস্ত্র।

৩) দেবদেবী।

৪) হিন্দুধর্মের বিভিন্ন মত ও পথ।

৫) যজ্ঞ ও পূজা।

৬) নিত্যকর্ম।

৭) দশবিধ সংস্কার ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া।

৮) কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি ও অষ্টাঙ্গ যোগ।

৯) দৈত, দৈতাদৈত ও অদৈতবাদ।

১০) চতুরাশ্রম ও চতুর্বর্ণ।

১১) ষড় দর্শন।

১২) কিছু হিন্দুধর্মীয় আচার ও ক্রিয়া কর্মের তাৎপর্য।

১৩) ধর্ম সংশ্লিষ্ট কতিপয় জ্ঞাতব্য।

১৪) অবতার তত্ত্ব।

১৫) জ্যোতিষবিদ্যা।

১৬) মৃত্যু, পুনর্জন্ম, পরলোক ও মুক্তি।

সংগ্রহের মাধ্যম

“হিন্দুধর্মের সারকথা” বইটি সরাসরি ক্রয় করতে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পেতে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন

আনন্দ পাবলিসার্স

৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা

ফোন- 01712-777304 অথবা 01680-919111


লেখক পরিচিতি

আকাশ বৈরাগী
বিসিএস (কৃষি)
ফোন- +8801971041753

"হিন্দুধর্মের সারকথা" বইয়ের সূচিপত্র

হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের সূচীপত্র

হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের সূচীপত্র

হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের সূচীপত্র

হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের সূচীপত্র

হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের সূচীপত্র 

"হিন্দুধর্মের সারকথা" বইয়ের মুখবন্ধ

    ক্ষুদ্র পক্ষবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও চটকপক্ষীর যেমন গগনবিহারী হওয়ার সাদ জাগে, বিকৃত পদযুক্ত খঞ্জের যেমন গিরিলঙ্ঘনের সাদ জাগে, ক্ষুদ্র তরণী আর ছিন্ন পাল নিয়ে কোন উদাসী নাবিকের যেমন সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সাদ জাগে, তেমনি স্বল্পজ্ঞানী ও সম্বলহীন হয়েও আমার সাদ জেগেছিল একটি গ্রন্থ রচনা করার। অক্ষমতা ও বাধা-বিঘ্ন থাকা সত্ত্বেও সাহস করে রচনাকার্য শুরু করেছিলাম ঐ ঈশ্বরেরই ভরসায়। ঈশ্বর বিমুখ হননি বলেই গ্রন্থখানি প্রকাশ করতে পেরেছি। আমি রচনা করেছি এমন কথা বলার স্পর্ধা আমি করি না। কারণ ঈশ্বরইতো জ্ঞান দিয়েছেন, ভাষা দিয়েছেন, সেই সাথে আশাও দিয়েছেন, আমিতো উপলক্ষ মাত্র। প্রত্যেক সৃষ্টিকর্মের পশ্চাতে থাকে কিছু কথা, থাকে কিছু কাহিনী। কিন্তু কজনই বা ঐ ইতিহাস জানতে চায়? সবাই মৌচাকের সঞ্চিত মধু পান করেই তৃপ্ত হয় কিন্তু মৌমাছীর মধুসঞ্চয়ের ইতিহাস ও শ্রমের কথা অন্তরালেই থেকে যায়। এই পুস্তকটি রচনার পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। এ বিষয়ে কিছু কথা না বলে পারছি না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সনাতন সংঘ নামক এক হিন্দু ছাত্র-সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পার্শ্বে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির মন্দির ছিল। আমি প্রত্যহ সন্ধ্যাকালে ঐ মন্দিরে যেতাম। মন্দিরে গিয়ে যে খুব ধর্মকর্ম করতাম, তা নয়। সেখানে মূলত গান-বাদ্য ও গ্রন্থপাঠ করেই সময়টা কেটে যেত। মন্দির ও সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে আমার সাথে অনেক হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীর পরিচয় ঘটেছিল। হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীগণের মধ্যে আমি যথেষ্ট জ্ঞান-ভক্তির অভাব লক্ষ করতাম। তাদের অনেকেই সনাতন ধর্মের মূল দর্শন থেকে বিচ্যুত ছিল। শাস্ত্রপাঠ ও প্রার্থনা-উপাসনার প্রতি অধিকাংশেরই অনাগ্রহ ছিল। তাছাড়া ধর্মগ্রন্থের দুবোর্ধ্যতা ও দুষ্প্রাপ্যতা যেমন ছিল, তেমনি পাঠের সুযোগও ছিল কম। আমি তখন মনে মনে ভাবতাম, সমগ্র হিন্দুধর্মের মূলনীতি বর্ণিত আছে, এমন একটি পুস্তক যদি থাকত, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীগণ সহজেই ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারত। তবে আমি নিজে কিছু গ্রন্থ পড়তে থাকলাম। কিছুকাল পর যখন গ্রন্থের প্রতি গভীর প্রেম জন্মাতে শুরু করে তখন আমি বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কতিপয় ভ্রাতার সহযোগিতায় হিন্দুধর্মের বেশ কিছু প্রামাণিক শাস্ত্র ক্রয় করি এবং মন্দিরে একটি পাঠাগার স্থাপন করি। ঐ পাঠাগার স্থাপনের পর আমার শাস্ত্র অধ্যয়নে মনোযোগ ও গতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন কিছু ছাত্র-ছাত্রী মন্দিরে বসে এবং কিছু ছাত্র=ছাত্রী পাঠাগার থেকে গ্রন্থ নিয়ে পাঠ করত।

    হিন্দুধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করতে থাকায় আমার জ্ঞান-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকে। মাঝে মাঝে একটা ধর্ম বিষয়ক পুস্তক লিখার ইচ্ছা জাগত। কিন্তু নিজের অক্ষমতার কথা ভেবে ইচ্ছাকে অবদমিত করে রাখতাম। অবশ্য পাঁচটি ধর্মীয় নাটক রচনা করেছিলাম যার মধ্যে চারটি নাটক বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরের অনুষ্ঠানে মঞ্চায়িত হয়েছিল। উচ্চচিন্তার জগতে পদচারণ করতে করতে একদিন আমার জীবনে ঘটে যায় এক মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। স্নাতক শেষ বর্ষে অধ্যয়নকালে আমার পিতা পরলোক গমন করেন। পিতার মৃত্যুতে আমি শোকাবিভূত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। পিতার অবর্তমানেও যে পুত্রকে জীবন-ধারণ করতে হয়, পূর্বে সেকথা ভাবিনি বলে তাঁর মৃত্যকে আমি সহজে মেনে নিতে পারিনি। পিতার মৃত্যুর পর বৈদিক রীতিনীতি অনুসরণ করে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করি এবং এগার দিন যাবৎ ব্রহ্মচারীর বেশে কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করার পর তাঁর শ্রাদ্ধকার্য সম্পন্ন করি। ঐ এগার দিনের ব্রহ্মচর্য ব্রত আমাকে বিশেষভাবে ভাবাতে শুরু করে। সেই সাথে আমার মনে আধ্যাত্মিকতা ও হিন্দুধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূলত আমি ঐ সময়েই জীবনের প্রকৃত অর্থ খুজে পেয়েছিলাম। আর এটাও উপলদ্ধি করেছিলাম যে, মানুষের জীবনে ব্রহ্মচর্যের কেন প্রয়োজন।

    পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পরেই ধর্ম সম্পর্কে একটি ক্ষুদ্র আকৃতির পুস্তক লেখার ইচ্ছা জাগে আমার। সেজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে বসে একটি খাতায় বেদ, উপনিষদ, মনুসংহিতা ও গীতার বিভিন্ন মন্ত্র চয়ন করতে থাকি। সেই সাথে চণ্ডী ও পুরাণের বিভিন্ন অংশ এবং কিছু ধর্ম বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ থেকেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। স্নাতক শেষে আমার উপর সনাতন সংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার অর্পিত হয়। সেই সাথে প্রকৃতিও আমার সম্মুখে জীবনের এক চরম সত্য উন্মোচন করে। প্রকৃতি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় পিতার অবর্তমানে আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে এবং জীবিকা-নির্বাহের জন্য কর্মের অনুসন্ধান করতে হবে। তাছাড়া পিতার মৃত্যুর পর আমার কুমারী ভগিনীদ্বয়কে পাত্রস্থ করাও আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। একদিকে সনাতন সংঘের গুরুভার অন্যদিকে অর্থকষ্ট ও কর্ম-অন্বেষণ এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাৎ করতে থাকি। সব কিছু জীবনটাকে বিভীষিকাময় করে তোলে। নিষ্ঠুর প্রকৃতি আমাকে জাতাকলে পিষ্ট করে যে অট্টহাস্য করত তা আজও আমার কানে বাজে।

    দুঃখ আমাকে কাঁদিয়েছে বটে কিন্তু তারপরও দুঃখকে আমি কখনও পর ভাবিনি কারণ দুঃখই আমাকে জীবনের অর্থ খুজতে সাহায্য করেছিল। দুঃখই আমার মনের সুষুপ্ত-রাগিনীকে জাগিয়েছিল। সে আমার অতি-ইচ্ছাকে দমন করে নিজের অক্ষমতাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। সে ভোগ-বিলাসকে ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে অতৃপ্ত আত্মাকে গরল পান করিয়ে শীতল রেখেছিল। সে মদন-বান পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়ে কামনা-বৃত্তিকে নিষ্প্রাণ ভূধরের মত নিশ্চল করে রেখেছিল। একমাত্র দুঃখই সেদিন আমার হৃদয়-সাগরে ডুব দিয়ে ঘুমন্তপ্রায় ভাষাকে জাগিয়েছিল। যা হোক, ঐ যাতনাময় দিনগুলোতে মন্দিরে গিয়েই একটু শান্তির পরশ পেতাম। সংঘ পরিচালনার সাথে সাথে আমার কর্ম অন্বেষণও চলতে থাকে। কিন্তু বিধিবাম, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রাথমিক পরীক্ষার প্রাক্কালে আমি শিরঃপীড়া ও চক্ষু সমস্যায় আক্রান্ত হই। সেই সাথে কটি দেশেও পীড়া অনুভব করি। হয়তো মন্দিরের শক্ত মেঝেতে বসে অনেকক্ষণ ধরে পাঠ করার ফলেই ঐসব রোগ সৃষ্টি হয়েছিল। অসুস্থতা নিয়েই কর্ম অনুসন্ধান করতে করতে দয়াময়ী মায়ের কৃপায় আর স্বর্গত পিতৃদেবের বরে একটি সরকারী কর্মের সুযোগ আসে। আমি যশোরে তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে যোগদান করি। তখন মনে হয়েছিল যেন শূন্যে উড্ডীয়মান আশ্রয়হীন এক কপোত আশ্রয়ের সন্ধান পেয়েছে।

    যশোরে কর্মরত থাকাকালে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে ধর্ম-সংক্রান্ত বিভিন্ন পুস্তক ক্রয় করি এবং বিশদাকারে একটি ধর্মীয় পুস্তক রচনার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু তখন দেখলাম যে, পূর্বের সে বেশ কিছু কাগজপত্র ও আমার রচিত সে পাঁচটি নাটকের পাণ্ডুলিপি অলৌকিক উপায়ে হারিয়ে গেছে। অগত্যা নতুন করে আবার শুরু করি। কিন্তু লেখা শুরু করার পর আবার পূর্বের কটিপীড়া, শিরঃপীড়া ও চক্ষু-সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়াও আরও কিছু নতুন রোগে আক্রান্ত হয়ে কখনও কখনও শয্যাগতও হতে হয়েছিল। মায়ের কৃপায় পাণ্ডুলিপি লেখা যখন শেষের দিকে তখন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে ভোলায় যোগদান করি। নতুন কর্মে যোগদানের জন্য বেশ কিছুদিন পুস্তক রচনাকার্য ব্যহত হয়। তারপর একদিন সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপির কার্য সমাপ্ত করে যশোরের সৌরভ নামক এক যুবকের নিকট টাইপ করতে দেই। ঐ যুবক বেশ যত্ন করেই টাইপ করেছিল। তাই তার কাছে আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। টাইপের কাজ শেষ হতে না হতেই আমি ছয় মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার জন্য বগুড়া যাই। সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর টাইপের কাজ সমাপ্ত হয় এবং আমি ব্যস্ততার ফাকে ফাকে একটু একটু করে সম্পাদনা করতে থাকি। কিন্তু বিঘ্ন যেন চিরকাল আমাকেই বন্ধু রূপে পেতে চায়। প্রশিক্ষণের শেষপর্যায়ে এক মারাত্মক সড়ক-দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমাকে প্রায় দুই মাস শয্যাগত থাকতে হয়। ঐ দুর্ঘটনায় আমি মৃত্যুবরণও করতে পারতাম। জগজ্জননী হয়তো পুস্তকটি রচনা করার জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। অবশেষে সুস্থ হওয়ার পর প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করি এবং মায়ের কৃপায় পুস্তকটি প্রকাশ করতে সক্ষম হই।

    কালের বিবর্তনে কর্মক্ষেত্রে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। সময়ের সাথে সাথে মানুষের কর্মব্যস্ততাও বেড়েছে। তাছাড়া ইদানিং মানব-জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করতে হয় লৌকিক শিক্ষা অর্জন করতে। ফলে দিনদিন আধ্যাত্মিক পুস্তক পড়ার সময় কমে আসছে। হিন্দুধর্মের রয়েছে কাব্যিক, মহাকাব্যিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও দার্শনিক গ্রন্থ সহ অগণিত গ্রন্থ যা পাঠ করার সময় ও সাধ্য সবার হয়ে ওঠে না। তাছাড়া সংস্কৃতে লেখা অধিকাংশ গ্রন্থই দুর্বোধ্য বলে তা সর্ব-সাধারণের নিকট অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। এসব কথা বিবেচনা করেই “হিন্দুধর্মের সার কথা” গ্রন্থটি রচনা করলাম যা পাঠ করে পাঠক সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিন্তু খুব সহজে সমগ্র হিন্দুধর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন। তাছাড়া এই পুস্তকে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ এবং মনুসংহিতা আদি স্মৃতিশাস্ত্রের আলোকে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ফলে পাঠক এক পুস্তক পাঠ করেই বিভিন্ন পুস্তকের স্বাদ পাবেন বলে আশা রাখি।

    বাংলা ভাষায় হিন্দুধর্ম সংক্রান্ত অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। অধিকাংশ গ্রন্থপ্রণেতাগণই হিন্দুধর্মের কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু একই পুস্তকের মধ্যে সমগ্র হিন্দুধর্মের সারবস্তু আছে এমন পুস্তক বিরল। তাই আমি সাধারণ হিন্দুজাতিকে সমগ্র হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় এই পুস্তকটি রচনা করেছি। এ পুস্তকে সাহিত্য-অলঙ্কারযুক্ত, অতি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ, দুর্বোধ্য ও সংস্কৃতবহুল বাংলা ভাষার ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে এই পুস্তক সব বাংলা-ভাষাভাষীর নিকট সহজবোধ্য হবে বলে আশা করছি। এ পুস্তকে বেদ-উপনিষদ, পুরাণ ও স্মৃতিশাস্ত্রের বিভিন্ন মন্ত্রের বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে। নিত্যকর্ম ও পূজা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রেরও অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যাতে নারী-পুরুষ, যুব-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই সহজে এবং ভালভাবে বুঝে পূজা ও নিত্যকর্ম সম্পাদন করতে পারে। এ পুস্তকে আধুনিক বাংলা বানান রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরাতন রীতিও অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম অর্থাৎ মুনিদেরও ভুল হতে পারে, আমিতো কোন ক্ষুদ্র মনুষ্য। এ পুস্তকে অনিচ্ছাকৃতভাবে বানানজনিত কিছু ভুল রয়ে গেছে। পাঠক যদি তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন তবে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

    পুস্তকে আমি কোন সম্প্রদায় বা কোন ধর্মকে ছোট বা বড় করার চেষ্টা করিনি। শুধু সত্যকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। যখন বৈষ্ণব মত সম্পর্কে লিখেছি তখন নিজেকে একজন বৈষ্ণবই মনে করেছি, যখন শাক্ত সম্পর্কে লিখেছি তখন যেন মাতৃভক্ত পুত্রই হয়ে গেছি আর যখন শৈবদের সম্পর্কে লিখেছি তখন হৃদয়-শ্মশানে যেন ঐ নটরাজ শিবেরই নৃত্য দেখেছি। সব মতকেই নিজের মত ভেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। আমি বিদ্বেষে নয়, সমন্বয়ে বিশ্বাসী। তাই স্বামী বিবেকানন্দের সুরে সুর মিলিয়ে আজও আমি বলি, সম্প্রদায় থাকুক যেন সাম্প্রদায়িকতা না থাকে।

    হিন্দুদের গ্রন্থসমূহ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। কোন সংস্কৃত পণ্ডিত আমি নই। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে স্বপ্রণোদিত হয়ে একবার দেবভাষা সংস্কৃত শেখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সময় ও যথার্থ গুরুর অভাবে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারিনি। অবশ্য সংস্কৃত ভাষা চর্চাকালে সহজবোধ্য সংস্কৃত-শ্লোকের অর্থ করতে খুব বেশি কষ্ট হত না। কিন্তু অনভ্যাস ও অনধ্যায়ের ফলে ঐ বিদ্যার অনেকটাই আজ হ্রাস পেয়েছে। কৃত্তিবাস ওঝা, কাশীদাস, রমেশ চন্দ্র দত্ত, রসিকমোহন, পঞ্চানন তর্করত্ন আদি যেসব সংস্কৃত-পণ্ডিত সংস্কৃত ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থগুলোর বঙ্গানুবাদ করে গেছেন তাদের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞ। ঐসব মনিষীকৃত বঙ্গানুবাদ ও টীকা-ভাষ্যে আমি অন্ধবিশ্বাস করেছি। কারণ তাঁরা আমাদের মত সাধারণ মানুষের জ্ঞানার্জনের জন্য দুর্বোধ্য সংস্কৃত-গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ করে গেছেন। নিজ মত প্রতিষ্ঠা বা পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করে যশ-খ্যাতি লাভ করার ইচ্ছা তাঁদের ছিল না। তাছাড়া তাঁদের বঙ্গানুবাদে এমন কিছু ছিল না যা ধর্মবিরুদ্ধ। তাই আমি পুস্তক রচনাকালে তাঁদের কৃত বঙ্গানুবাদের সাহায্য নিয়েছি। দর্শনের মত উচ্চ-চিন্তা রাজ্যে বিচরণ করা কি সাধারণ মানুষের কার্য? স্বামী বিবেকানন্দ, নিগমানন্দ সরস্বতী, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী আদি সিদ্ধ পুরুষগণ হিন্দু-দর্শনকে সহজ-সরলভাবে সাধারণ মানুষের নিকট উপস্থাপন করেছেন। তাঁদের বক্তৃতা ও রচিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করেই জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহনের সাহস ও শক্তি পেয়েছি। বিশেষ করে স্বামী বিবেকানন্দের কথা না বললেই নয়। আমি স্বামীজীর দর্শন সংক্রান্ত বক্তৃতা পড়ার পর উপনিষদ পড়েছি। ফলে আমার উপনিষদের গুঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করা সহজ হয়েছে।

 

আমি ধর্মের বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করার সময় বেদ-বেদান্ত ও পুরাণ উভয়কেই আশ্রয় করেছি। তাই একই বিষয় বেদ-বেদান্তে যেমন আছে পুরাণে তা ভিন্নতর মনে হতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু বিষয় স্ববিরোধীও মনে হতে পারে। যেমন বেদে সূর্য ও বিষ্ণু এক হলেও পুরাণে সূর্য ও বিষ্ণুকে ভিন্ন দেবতা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রেও বেদ ও পুরাণে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি একটি কথা বলতে চাই যে, বেদ ও পুরাণ ভিন্ন স্বাদের বা ভিন্ন রসের গ্রন্থ। বেদে যে বীজ রোপিত হয়েছিল পুরাণে তা শাখা-প্রশাখা সমেত বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বেদের আধ্যাত্মিক বিষয়সমূহ পুরাণে কাব্যের ভনিতায়, রূপকের ছলে, কল্পনার আশ্রয়ে এবং গল্প-দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বেদ ও পুরাণ ভিন্ন ভিন্ন রসের গ্রন্থ হলেও পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে তা আর বেদ থেকে ভিন্ন মনে হয় না। আবার একই বিষয় বিভিন্ন পুরাণের মধ্যে বিভিন্ন রকমভাবে বর্ণনা করা আছে। যেমন কার্তিক ও গণেশের জন্ম-বিবরণ একেক পুরাণে একেক রকম। এর কারণ সব পুরাণ একই সময় এবং একই ব্যক্তির হাতে রচিত নয়। এটা আমার কথা নয়, বিভিন্ন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত পুরাণের ভাষা, রচনাশৈলী ও ঐতিহাসিক সত্যতা বিচার করেই উক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে কাহিনীর এই ভিন্নতাকে আমি ছোট করে দেখছি না কারণ একই বিষয়ের প্রকাশভঙ্গি একেক জনের নিকট একেক রকম হতে পারে আবার একই বস্তু স্থান-কাল-পাত্রভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। আমি বিভিন্ন পুরাণের তুলনামূলক আলোচনা নয় বরং বিভিন্ন পুরাণের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছি। আসলে জ্ঞানী পাঠকের মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যে কোন গ্রন্থের স্থুল ও ঋণাত্মক ভাব বর্জন করে সূক্ষ্ম ও ধনাত্মক ভাব গ্রহণ করা। যা হোক, পুস্তকের সব কিছুই যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে পেয়েছি, তা নয়। কিছু কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা যখন কোন গ্রন্থেই পেতাম না তখন ঈশ্বরের নাম নিয়ে ঐ বিষয়ে ধ্যানস্থ হোতাম। ঈশ্বরের কৃপায় চিন্তা করতে করতে এক সময় সব জটিল প্রশ্নের উত্তর কেমন করে যেন পেয়ে যেতাম তা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। আমি একথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে, কোন কিছু খোজার মত খোজলে তার সন্ধান অবশ্যই পাওয়া যায়।

    আমার মত ক্ষুদ্র মনুষ্যের পক্ষে পুস্তক রচনা করা দুঃসাধ্যই ছিল। যাদের কৃপায় আমার এ পুস্তক রচনা সম্ভব হয়েছে তাদের প্রতি আমার ঋণ এক জন্মে শোধ হবে না। প্রথমেই আমি কৃপাময় ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবই তাঁর ইচ্ছা। তাঁর ইচ্ছা না থাকলে শতজন্মের প্রচেষ্টায়ও এ পুস্তক রচনা সম্ভব হত না। ঈশ্বর আমার সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বরই আমার জীবন-তরীর হাল ধরে আছেন আর আমি শুধু পাল তুলেছি মাত্র। ঐ পালে যখন কৃপা নামক সুবাতাস বইতে থাকে তখনই তরী নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলতে থাকে। আমার সব কিছু তাঁরই দান। আমিতো শুধু নিমিত্ত মাত্র।

   আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার জন্মদাতা পিতা-মাতার প্রতি। পিতা-মাতার চেয়ে উত্তম শিক্ষক আর কেই বা হতে পারে? পিতা-মাতা শুধু আমাকে লালন-পালনই করেননি, তাঁরা আমাকে ধর্মশিক্ষাও দিয়েছেন। আমার ধর্মশীলা মাতার ধর্মাচারণ, ব্রতপালন, কর্মনিষ্ঠতা ও সারল্য দেখেই আমি ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলাম। আমার পিতৃদেব সম্পর্কে বিশেষ কথা না বললেই নয়। আমি পিতৃদেবের মত প্রতিভাশীল, জ্ঞানী, উদার, সত্যবাদী ও দৃঢ়প্রতীজ্ঞ ব্যক্তি খুব কমই দেখেছি। তিনি বাহ্য-ধর্মাচরণে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু অন্তরে তাঁর প্রবল ধর্মভাব ছিল। তিনি প্রায়শই বলতেন সাধু সেজো না, সাধু হও। পিতৃদেবের নিকট আমি যা শিক্ষা অর্জন করেছি তা কোনো তুলনা বা উপমা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। বাল্যে তাঁর মুখে রামায়ণ-মহাভারত শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। ফলে বাল্যে থেকেই আমার রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী মুখস্থ ছিল। তিনিই আমার চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিলেন। আমার মধ্যে যদি কোন উচ্চ-চিন্তা, সাহিত্যবোধ ও দর্শনের স্ফুরণ ঘটে তার জন্য আমি পিতৃদেবের নিকট ঋণী। সদা সত্য কথা বলবে এবং মানবসেবা করবে, তাঁর এই বেদবাক্যতুল্য উপদেশামৃতই আমি জীবনের মূলমন্ত্র ও চলার পথের পাথেয় করেছি। ইহ জীবনের শেষদর্শনকালেও তিনি ঐ উপদেশ দিয়েছিলেন এবং মৃত্যুও পূর্বে যে বর দিয়ে গিয়েছিলেন তার শক্তিতেই এ দুঃসাধ্য-সাধন করতে পেরেছি।

    বাল্যে আমার দীক্ষাগুরু শ্রীমৎ আচার্য বিবেকানন্দ গোস্বামীর নিকট আমি খুব আদরণীয় ছিলাম। আমি তাঁর সেবা করব কি উল্টো তিনিই আমার যার-পর-নাই স্নেহ-যত্ন করতেন। তাঁর দর্শনের জন্য যেখানেই যেতাম সেখানেই তিনি আমাকে নিজের পাশে বসিয়ে ভোজন করাতেন আর মিষ্টি স্বরে কথা বলতেন যা আজও আমার কানে বাজে। তিনি আমাকে একটা পত্রে লিখেছিলেন, তোমাকে চাঁদ হতে হবে তারা হলে চলবে না। তারকারা চাঁদ অপেক্ষা কোটী গুণ বড় হলেও পৃথিবীতে তারকাদের তুলনায় চাঁদের প্রয়োজনই বেশি। হয়তো এজন্যেই তিনি তারা নয় চাঁদ হয়ে আলো ছড়াতে বলেছেন। চাঁদ হতে পারব কিনা তা জানি না, যদি জোনাকীও হতে পারি তবে সে অবদান গুরুদেবেরই।

    বেবী, গীতা, জয়া, ক্ষমা ও কৃষ্ণা এই পঞ্চভগিনীর নিকট আমি অশেষ কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে লালিত-পালিত ও পরিপুষ্ট করে তুলেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা করে আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। ছেলেবেলায় আমরা সব ভ্রাতা-ভগিনী সন্ধ্যাকালে একত্রিত হয়ে ঈশ্বর-বন্দনা করতাম। এসবই আমাকে সঙ্গীত ও ধর্মের প্রতি অনুরাগী করে তুলেছিল। আমার দুর্দিনের সময় ভগ্নিপতিগণও পাশে ছিলেন তাই তাদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর একজন বিশেষ ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না। ঐ বিশেষ ব্যক্তিটির নাম মিতা মণ্ডল। যশোরে কর্মসূত্রে তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল। মিতা দিদিকে আমি শ্যামা দি বলে ডাকি। মা শ্যামাই যেন ঐ মিতা দিদির রূপ ধরে দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি অনেক শ্রম স্বীকার করে আমাকে ভারত হতে বেশ কিছু ধর্ম বিষয়ক পুস্তক এনে দিয়েছিলেন যা ছাড়া আমার এই পুস্তক লেখা সম্ভব হত না। এছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে আমাকে যে ঋণী করেছেন, তা এক জন্মে শোধ হওয়ার নয়।

    এক ধর্মসভায় পুরি সম্প্রদায়ের একদল সন্ন্যাসী আমার বক্তৃতা শুনে বিশেষ প্রীত হয়ে আমাকে আশীর্বাদ করেছিল। ঐ পূণ্যাত্মা সাধুদের আশীর্বাদের জোড়েই আমার মত একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এ অসাধ্য-সাধন সম্ভব হয়েছে। সুমনানন্দ পুরি নামক এক শাস্ত্রজ্ঞ অবধূতের নিকট আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তাঁর সাথে আমি অনেক শাস্ত্র আলোচনা করেছি। অনেক অজানা বিষয়ে তিনি আমাকে ধারণা দিয়েছেন। এছাড়াও যারা আমাকে নেপথ্যে থেকে আশীর্বাদ করেছেন, অলক্ষে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং পুস্তক রচনায় উদ্দীপিত করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পরিশেষে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার ধরিত্রী মাকে। ধরিত্রী মা আমাকে পরম যত্নে লালন করছেন এবং তাঁর কৃপায়ই আজও আমি জীবন-ধারণ করছি। পুষ্প, বৃক্ষ, তরুলতা, পশুপক্ষী, চন্দ্র, সূর্য, নদী, সমুদ্র, পর্বত, আকাশ, বায়ু প্রভৃতি প্রকৃতির সব উপকরণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এরাই আমার উৎকৃষ্ট শিক্ষক। এরাই আমাকে সাহিত্যের ভাষা যুগিয়েছে এবং অন্তরের লুকায়িত সত্য ও সুপ্তপ্রায় ভাবকে বাইরে প্রকাশ করেছে।

    পরিশেষে আমি বলতে চাই, পুস্তক রচনা করে যশ-খ্যাতি লাভ বা অর্থ উপার্জন আমার উদ্দেশ্য নয়। একজন হিন্দুর নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিতে গেলে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে যতটুকু জানা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু জানানোই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে আমি একথাও জানি যে, আমি কোন বিখ্যাত সাহিত্যিক বা দার্শনিক নই। আমার এ পুস্তক সকল হিন্দুর ঘরে ঘরেও পৌঁছাবে না এবং হয়তো সব পাঠকের মনোপুতও হবে না। কিন্তু তারপরও এ পুস্তক পাঠ করে একজন পাঠকও যদি হিন্দুধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ করতে পারেন এবং নিজের আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করতে পারেন, তবেই আমি কৃতার্থ হব। ঐ পূণ্যাত্মা পাঠকের জন্যই আমার মানব-জন্ম স্বার্থক হবে।

আকাশ বৈরাগী

 বৈশাখ, ১৪২৪


হিন্দুধর্মের সারকথা বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠার ছবি


হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

হিন্দুধর্মের সারকথা বই

 এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

অষ্টাঙ্গ যোগ
হিন্দুদের চতুরাশ্রম 
পূজা পদ্ধতি
ঈশ্বরতত্ত্ব 
বৈদিক যজ্ঞ 
রামায়ণের কাহিনী 
মহাভারতের কাহিনী 
অদ্বৈতবাদ ও দ্বৈতবাদ 
মহাপুরাণ 
হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ খাদ্য ও ভোজনবিধি 
দেবী দুর্গার স্বরূপ 
হিন্দুধর্মে সৃষ্টিতত্ত্ব 
হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র 
নবপত্রিকা ও কলাবৌ 
হিন্দু দেবতা 
সৌর ও গাণপত্য 
গীতা, চণ্ডী ও মনুসংহিতা 
উপনিষদ বা বেদান্ত 
শারদীয় দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি



 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


৩১ জানুয়ারী, ২০২২

নিত্যকর্ম পদ্ধতি

নিত্যকর্ম

নিত্যকর্ম পদ্ধতি

নিত্যকর্ম কি?

নিত্যকর্ম কত প্রকার?

নিত্যকর্ম কখন কোথায় করতে হয়?

    প্রত্যহ যেসব কর্তব্য-কর্মের মাধ্যমে মনুষের পুণ্যলাভ হয় সেসব প্রাত্যহিক কর্মকে নিত্যকর্ম বলে। প্রাতঃকৃত্য, প্রাতঃস্নান, পিতৃতর্পণ, সন্ধ্যা প্রভৃতি নিয়েই নিত্যকর্ম পদ্ধতি। নিত্যকর্মকে ছয় ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা প্রাতঃকৃত্য, পূর্বাহ্ণ-কৃত্য, মধ্যাহ্ন-কৃত্য, অপরাহ্ণ-কৃত্য, সায়াহ্ন-কৃত্য এবং রাত্রি-কৃত্য। নিচে প্রাতঃকৃত্যের বর্ণনা দেয়া হল।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি :

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : প্রাতঃকৃত্য

    প্রাতঃকৃত্য শুরু হয় সূর্যোদয়ের পূর্বে রাত্রির শেষ যামার্ধে। প্রাতঃকৃত্য বলতে নিদ্রা হতে জাগরণ, প্রাতঃস্মরণ, শৌচকর্ম, প্রাতঃস্নান প্রভৃতি কর্ম বোঝায়। শাস্ত্রে ব্রহ্মমুহূর্তে নিদ্রা হতে জাগ্রত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। রাত্রির শেষ যামার্ধ অর্থাৎ রাত্র ৪ টা ৩০ মিনিট হতে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়কে ব্রহ্মমুহূর্ত বলে। 

করতল দর্শন

    নিদ্রাভঙ্গের পর প্রথমে নিম্নোক্ত মন্ত্রে করতল দর্শন করতে হয়

করাগ্রে বসতে লক্ষ্মীঃ করমধ্যে সরস্বতীঃ।

করমূলে স্থিতো ব্রহ্মা প্রভাতে করদর্শনম্।।

অর্থাৎ প্রভাতে করদর্শনের মাধ্যমে করের অগ্রভাগে লক্ষ্মী, করের মধ্যভাগে সরস্বতী এবং করমূলে অধিষ্ঠানকারী ব্রহ্মার প্রতিচ্ছবি দর্শন করতে হয়। তারপর ইষ্টদেবতাকে করজোড়ে নমস্কার করে শয্যার উপর উত্তরমুখী হয়ে বসে প্রাতঃস্মরণীয় বিষয় চিন্তা ও পাঠ করতে হয়। 

নবগ্রহ স্মরণ

    প্রথমেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব এবং নবগ্রহের স্মরণ ও তাঁদের নমস্কার করতে হয়। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব হলেন সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের দেবতা। তাই শুরুতেই তাঁদের স্মরণ করতে হয়। নবগ্রহ দ্বারা মানুষের কর্ম ও ভাগ্য প্রভাবিত হয়। নবগ্রহের কুপ্রভাবে মানুষের জীবনে নানা বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিঘ্ননাশের জন্য ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের সাথে নবগ্রহের স্মরণ ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-জ্ঞাপন একান্ত কর্তব্য। নিম্নোক্ত মন্ত্রে ত্রিদেব ও নবগ্রহের স্মরণ করতে হয়।

ওঁ ব্রহ্মামুরারি স্ত্রিপুরান্তকারী, ভানুঃ শশী ভূমিসুতো বুধশ্চ।

গুরুশ্চ শুক্রঃ শনি রাহু কেতুঃ কুর্বন্তু সর্বে মম সুপ্রভাতম্ ।।

অর্থাৎ ব্রহ্মা, মুরারি (বিষ্ণু), ত্রিপুর বিনাশীকারী (শিব), ভানু (রবি), শশী (চন্দ্র), ভূমিসুত (মঙ্গল), বুধ, গুরু (বৃহস্পতি), শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু সকলে আমার সুপ্রভাত গ্রহণ করুন। তারপর দীক্ষিত ব্যক্তিদের গুরুকে স্মরণ ও নমস্কার করতে হয়।

আত্মচিন্তা 

   দীক্ষিত ও অদীক্ষিত সকলেরই নিম্নোক্ত মন্ত্রে আত্মচিন্তা করতে হয়

অহং দেবো ন চান্যেহস্মি, ব্রহ্মৈবাহংন শোকভাক্।

সচ্চিদানন্দ রূপোহহং, নিত্যমুক্তঃ স্বভাববান্ ।।

আমি দেব, অন্য কেউ নই, আমি ব্রহ্ম, আমি সৎ, চৈতন্যময় ও আনন্দময়। আমি শোকে অভিভূত হই না, আমি সর্বদা মুক্তস্বভাব। 

আত্মনিবেদন

আত্মচিন্তনের পর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আত্মনিবেদন করতে হয়।

লোকেশ চৈতন্যময়াধিদেব, শ্রীকান্তবিষ্ণো ভবদাজ্ঞৈব।

প্রাতঃ সমুত্থায় তব প্রিয়ার্থং সংসারযাত্রা মনুবর্তয়িষ্যে ।।

জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তি জানাম্যধর্মং ন চ মে নিবৃত্তিঃ।

ত্বয়া হৃষীকেশঃ হৃদিস্থিতেন, যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি ।।

হৃদয়ে যে পরম দেবতার বাস, তিনি যে কার্যে আমাকে প্রেরণ করেছেন, আমি তাই করছি, জগত্রয়ে আমার নিজের কোন কার্যই নাই। ধর্মজনক যা কিছু আছে, তা সকলই জানি কিন্তু তাতে আমার প্রবৃত্তি নাই। পাপজনক যা কিছু আছে তাও জানি, তাতেও আমার অপ্রবৃত্তি নাই। হে হৃদিস্থিত হৃষীকেশ, তবুও যা কিছু করছি, তা তোমার নিয়োগ অনুসারে মাত্র, আমার নিজের প্রবৃত্তি বশে নয়। হে লোকেশ, হে চৈতন্যময়াধি দেব, হে শ্রীকান্ত, হে বিষ্ণু, আমি তোমার প্রীতি সম্পাদনের জন্যই তোমার আজ্ঞা অনুসারে প্রাতেঃ জাগ্রত হয়ে সংসার-যাত্রা নির্বাহ করছি। 

দেবীপক্ষে বিশেষ মন্ত্র 

দেবীপক্ষে প্রাতেঃ এক বিশেষ মন্ত্র পাঠ করতে হয়, তা এরকম

প্রাতঃ প্রভৃতি সায়ান্তং সায়াদি প্রাতরন্ততঃ।

যৎ করোমি জগত্যর্থে তদস্তু তব পূজানম্ ।।

ত্রৈলোক্য রক্ষাধিময়ে সুরেশী, শ্রীপার্বতী ত্বচ্চরণাজ্ঞৈব।

প্রাতঃ সমুত্থায় তব প্রিয়ার্থং, সংসারযাত্রা মনুবর্তয়িষ্যে ।।    

হে ত্রিলোকের চৈতন্যময়ী, হে ঈশ্বরের ঈশ্বরী, হে সুরেশী, হে শ্রী পার্বতী, আমি প্রাতঃকাল হতে সায়হ্ন এবং সায়াহ্ন হতে প্রাতঃ পর্যন্ত জগতের নিমিত্ত যা কিছু করছি তা তোমারই পূজন আর তোমার প্রীতি সম্পাদনের জন্য, তোমারই শ্রীচরণের আজ্ঞা অনুসারে প্রত্যূষে জাগ্রত হয়ে সংসারযাত্রা নির্বাহ করছি। 

কলিদোষ নাশনের জন্য মন্ত্র

    কলিদোষ নাশনের জন্য নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

কর্কোটকস্য নাগস্য দময়ন্ত্যা নলস্য চ।

ঋতুপর্ণস্য রাজর্ষেঃ কীর্তনং কলিনাশনম্ ।।

কলিদোষ নাশনের নিমিত্ত, কর্কোটক নাগ, নল ও দময়ন্তী এবং রাজর্ষি ঋতুপর্ণের নাম স্মরণ করবে। 

অর্থনাশ নিবারণ ও নষ্টদ্রব্য পুন-প্রাপ্তির  মন্ত্র

    অর্থনাশ নিবারণ ও নষ্টদ্রব্য পুন-প্রাপ্তির জন্য মৎস্য পুরাণের নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

কার্তবীর্যার্জুনো নাম রাজা বাহু সহস্রভৃৎ।

যোহস্য সংকীর্তয়েন্নাম কল্যমুত্থায় মানবঃ।

ন তস্য বিত্তনাশঃ স্যান্নষ্টঞ্চ লভতে পুনঃ ।।

যে মানব প্রাতঃকালে নিদ্রা হতে জাগরিত হয়ে সহস্রবাহুধারী কার্তবীর্যাজুর্ন নামক রাজার নাম-কীর্তন করে, তার বিত্তনাশ হয় না এবং হৃত বা নষ্টদ্রব্যের পুন-প্রাপ্তি হয়ে থাকে। 

পুণ্যশ্লোক স্মরণ

    নিম্নোক্ত মন্ত্রে পুণ্যশ্লোকগণের নাম স্মরণ করতে হয়।

পুণ্যশ্লোক নলো রাজা পুণ্যশ্লোকো যুধিষ্ঠিরঃ।

পুণ্যশ্লোকা চ বৈদেহী পুণ্যশ্লোকো জনার্ধনঃ ।।

রাজা নল, মহারাজা যুধিষ্ঠির, বৈদেহী (সীতা) ও জনার্ধন (বিষ্ণু) এই সকল পূন্যশ্লোকগণের নাম স্মরণ করবে।

পঞ্চকন্যা স্মরণ

    পুণ্যশ্লোকগণের নাম স্মরণ করে পঞ্চকন্যার নাম স্মরণ করতে হয়। এই পঞ্চকন্যার প্রত্যেকেই সতী ও প্রতিব্রতা ছিলেন। তাই তাঁদের স্মরণ করলেও মনে সৎ চিন্তা জাগ্রত হয় এবং পাপনাশ হয়।

অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা।

পঞ্চকন্যা স্মরোন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম্ ।।

মহাপাপ নাশের নিমিত্ত অহল্যা, দ্রৌপদী, কুন্তী, তারা ও মন্দোদরী এই পঞ্চকন্যার নাম স্মরণ করবে। 

দশমহাবিদ্যা স্মরণ

    নিম্নোক্ত মন্ত্রে দশমহাবিদ্যার নাম স্মরণ করতে হয়।

ওঁ কালী তারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভুবনেশ্বরী।

ভৈরবী ছিন্নমস্তা চ বিদ্য ধূমাবতী তথা ।।

বগলা সিদ্ধবিদ্যা চ মাতঙ্গী কমলাত্মিকা।

এতা দশ মহাবিদ্যা সিদ্ধবিদ্যা প্রকীর্তিতা ।।

কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা এই দশমহাবিদ্যা সিদ্ধবিদ্যা বলে খ্যাতা। এরপর নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

প্রভাতে যঃ স্মরেন্নিত্যং দুর্গা দুর্গাক্ষরদ্বয়ম্।

আপদস্তস্য নশ্যন্তি তমঃ সূযোর্দয়ে যথা ।।

প্রতিদিন প্রভাতে “দুর্গা দুর্গা” এই অক্ষরদ্বয় স্মরণ করলে সূর্যোদয়ে অন্ধকার বিনাশের মত তাঁর আপদসমূহ দূরীভূত হয়ে থাকে। 

ভূমি বা পৃথিবী প্রণাম

    “ওঁ প্রিয়দত্তায়ৈঃ ভূবে নমঃ” মন্ত্রে পৃথিবীকে নমস্কার করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ভূমিতে পদ-স্পর্শ করতে হয়।

ওঁ সমুদ্রমেখলে দেবী পর্বতস্তন মণ্ডলে।

বিষ্ণুপত্নী নমস্তেহস্তু পাদস্পর্শং ক্ষমস্ব মে ।।

সমুদ্র যার মেখলা (কটিবন্ধনী) স্বরূপ, পর্বতসমূহ যার স্তনমণ্ডল স্বরূপ, সেই বিষ্ণুপত্নী ভূমিকে নমস্কার। আপনি আমার পাদস্পর্শ জনিত অপরাধ ক্ষমা করুন। এরপর শুভ বস্তু স্পর্শ করতে হয়, যেন শুভ বস্তুর স্পর্শে সম্পূর্ণ দিনটি শুভ হয়ে যায়। বিদ্বান ব্রাহ্মণ, সৌভাগ্যবতী ও সাধ্বী স্ত্রী, অগ্নি, গরু এবং সাগ্নিক ব্রাহ্মণের মুখ দর্শন করে গরু, ঘৃত, দধি, সর্ষপ (সরিষা), প্রিয়ঙ্গু প্রভৃতি শুভবস্তু স্পর্শ করলে সকল পাপ হতে মুক্তি লাভ করা যায়। এরপর শৌচকার্য বা মলত্যাগ বিধেয়।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : শৌচকর্ম ও দন্তধাবন

    মানুষের দেহে দ্বাদশ প্রকার মল আছে। এর মধ্যে বসা (চর্বি), শুক্র, অসৃক (রক্ত), মজ্জা, মুত্র ও বিষ্ঠা এই ছয় প্রকার মল মৃত্তিকা ও জলের দ্বারা শুদ্ধ করতে হয় এবং ঘ্রাণবিট্ (নাসিকা মল) কর্ণবিট (কর্ণ মল), শ্লেষ্মা, অশ্রু, ধূষিকা (চক্ষুর পেচঁড়া) ও স্বেদ (ঘর্ম) এই ছয় প্রকার মল শুধু জল দ্বারা শুদ্ধ করতে হয়। মলত্যাগের পর উই ও ইদুঁর কতৃর্ক উত্তোলিত মৃত্তিকা এবং জল দ্বারা শৌচকর্ম করতে হয়। জলে মলমূত্র ত্যাগ নিষিদ্ধ। দিনে উত্তরমুখ এবং রাত্রিতে দক্ষিণমুখ হয়ে মলমূত্র ত্যাগ, মৈথুন, প্রস্রাব, দন্তধাবন, স্নান করা উচিত এবং ভোজনকালে মৌনী থাকা অর্থাৎ কথা না বলা আবশ্যক। এখন দন্তধাবন প্রসঙ্গে আসা যাক। সূর্যোদয়ের পূর্বে চার দণ্ডের (৯৬ মিনিট) মধ্যে দন্তধাবন কর্তব্য। পূর্ব ও উত্তরমুখে বসে দন্তধাবন করা বিধেয়। দন্তধাবনে কখনো তর্জনী ব্যবহার করা উচিত নয়। খদির, নিম, আপাঙ্, কদম্ব, করঞ্জ, বট, তিন্তিড়ী (তেঁতুল), বাঁশ, আম, বিল্ব, অর্কবৃক্ষ (আঁকড় গাছ), যজ্ঞডুমুর এবং তিক্ত, কষায় ও কটুরসযুক্ত বৃক্ষ, কণ্টকযুক্ত, সুগন্ধি ও ক্ষীরযুক্ত বৃক্ষের দণ্ড দ্বারা দন্তধাবন বিধেয়। তবে শ্রাদ্ধদিনে, জন্মতিথিতে, বিবাহ দিনে, অজীর্ণ হলে, চান্দ্রায়ণের দিনে, উপবাসের দিনে এবং প্রতিপদ, পর্বদিন, ষষ্ঠী, চতুর্দশী, অষ্ঠমী, নবমী ও রবিবারে দন্তকাষ্ঠ বর্জন করতে হয়।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : স্নানবিধি

    শাস্ত্রে মান্ত্র, ভৌম, আগ্নেয়, বায়ব্য, দিব্য, বারুণ ও মানস এই সাত প্রকার স্নানের উল্লেখ আছে। ঋক্-মন্ত্রের মাধ্যমে যে দেহশুদ্ধি তাকে মন্ত্র-স্নান বলে। গঙ্গাদি মৃত্তিকা দ্বারা তিলক-ধারণের মাধ্যমে যে দেহশুদ্ধি তাকে ভৌম-স্নান বলে। সংস্কৃত (শুদ্ধ) ভস্মের দ্বারা শরীর লেপনকে আগ্নেয়-স্নান বলে। গরুর ক্ষুরের দ্বারা সৃষ্ট ধূলিস্পর্শে বায়ব্য-স্নান হয়। রৌদ্র-সমন্বিত বৃষ্টিজলে যে স্নান তা দিব্য-স্নান নামে পরিচিত। জলে অবগাহন করে অর্থাৎ নিমজ্জিত হয়ে যে স্নান তাকে বারুণ-স্নান বলে। বিষ্ণুস্মরণ অর্থাৎ বিষ্ণুর পাদপদ্ম নিঃসৃত গঙ্গাজলে স্নান করছি, মনে মনে এমন চিন্তা করাই মানস-স্নান। প্রথমে স্রোতের দিকে মুখ করে অথবা সূর্যদেবের দিকে মুখ করে জলে নিমগ্ন হয়ে নারায়ণ, গঙ্গা ও ইষ্টদেবের স্মরণ করতে হয়। তারপর মুক্ত কেশ হয়ে অবগাহন করে কৃতাঞ্জলি হয়ে (হাত-জোড় করে) সূর্যমণ্ডল হতে তীর্থ আবাহন করতে হয়। নিম্নোক্ত মন্ত্রে তীর্থ আকর্ষণ বা আবাহন করা হয় 

ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।

নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।।

ব্রহ্মাণ্ডে দেবতীর্থানি করৈঃ স্পষ্টানি তে রবেঃ।

তেন সত্যেন মে দেব! তীর্থর্ং দেহি দিবাকর! ।।

প্রিয়ব্রতানি তীর্থানি সূর্যরশ্মিস্থিতানি চ।

আগত্যার্ঘ্যং গৃহীত্বা সর্বসিদ্ধিং প্রযচ্ছ মে।

চতুস্রঃ বিনির্মায় তত্র স্নানং দিশেৎ সুধীঃ ।।

-হে গঙ্গে, হে যমুনে, হে গোদাবরি, হে সরস্বতি, হে নর্মদে, হে সিন্ধু, হে কাবেরি, আপনারা এই জলে বাস করুন। হে সূর্যদেব, ব্রহ্মাণ্ডে যেসব দেবতীর্থে আপনার কর স্পর্শ পড়েছে আমাকে সেসব দেবতীর্থ প্রদান করুন। সূর্যরশ্মিস্থিত কল্যাণকারক যে সকল তীর্থ আছেন, তাঁরা আগমন পূর্বক অর্ঘ্য গ্রহণ করে আমাকে সর্বসিদ্ধি দান করুন। এই স্থান সুধী ব্যক্তি একটি চতুষ্কোণ-মণ্ডল নিমার্ণ করে তার মধ্যে স্নান করবে”। উক্ত মন্ত্রে তীর্থ আবাহন করে অঙ্কুশমুদ্রা সহযোগে “বং” এই বীজমন্ত্র দ্বারা ঐ তীর্থগণকে জলে সংযোগ করতে হয়। তারপর ঐ স্থানকে সোম (চন্দ্র), সূর্য ও অগ্নিমণ্ডল চিন্তা করে তার মধ্যে স্নান করা বিধেয়। শাস্ত্রোক্ত এই পদ্ধতিতে স্নান করলে নদী ও পুষ্করিণীর জলে স্নান করেও তীর্থস্নানের ফল হয়। তীর্থ আবাহনের অন্য একটি মন্ত্র আছে, যথা

ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।

নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেস্মিন্ সন্নিধিং কুরু ।।

ওঁ কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুষ্করানি চ।

পুণ্যান্যেতানি তীর্থানি স্নানকালে ভবন্ত্বিহ ।।

হে গঙ্গে, হে যমুনে, হে গোদাবরি, হে সরস্বতি, হে নর্মদে, হে সিন্ধু, হে কাবেরি, আপনারা এই জলে বাস করুন। কুরুক্ষেত্র, গয়া, গঙ্গা, প্রভাস ও পুষ্কর এই সকল পূণ্যতীর্থসমূহ স্নানের সময় অবস্থান করছেন। প্রাচীনকালে স্নানের সময় গাত্রমল দূরীভূত করার জন্য গাত্রে মৃত্তিকা লেপন করা হত। নিম্নোক্ত মন্ত্রে মৃত্তিকা লেপন করা হত।

ওঁ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণুক্রান্তে বসুন্ধরে!

মৃত্তিকে হর মে পাপং যন্ময়া দুষ্কৃতং কৃতম্।

ওঁ উদ্ধতাসি বরাহেণ কৃষ্ণেন শতবাহুনা।

নমস্তে সর্বদেবানাং প্রভবারুণী সুব্রতেঃ।

ওঁ আধারং সর্বরূপস্য বিষ্ণুরতুল তেজসঃ।

তদ্রূপাশ্চ ততো জাতা অগ্নে তাঃ প্রণমাম্যহম্।

ইত্যপদিশ্যাম্ভসি ত্রির্ণিমজ্জেৎ ততো বুধঃ ।।

হে অশ্বক্রান্ত, হে রথক্রান্ত, হে বিষ্ণুক্রান্ত, হে বসুন্ধরে, হে মৃত্তিকে, আমার দুষ্কার্যজনিত যে সকল পাপ তা বিনষ্ট করুন। বরাহ রূপে শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে শতবাহুর দ্বারা উদ্ধার করেছিলেন, আমার গাত্রে আরোহণ করে আমার সকল পাপ বিমোচন করুন। হে মৃত্তিকে, ব্রহ্মাদত্তে, কাশ্যপ অভিমন্ত্রীতে, হে সর্বভূত প্রসবিনী, সুব্রতে, তোমাকে নমস্কার। সর্বরূপের আধার স্বরূপ বিষ্ণুর তুল্য তেজযুক্তা এবং তাঁর কতৃর্ক জন্মলাভ করেছ বলে তোমাকেই অগ্রে প্রণাম করি। এই মন্ত্র বলার পর চক্ষু, কর্ণ ও নাসিকা বন্ধ করে জলে তিন বার ডুব দিতে হয়।

    স্নান করার পূর্বে শরীরে তৈল-মর্দন করতে হয়। তবে রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি বার তৈল-মর্দন নিষিদ্ধ। স্নানের শুরুতেই নাভিজলে দণ্ডায়মান হয়ে আচমন পূর্বক সঙ্কল্প করতে জয়। যথা বিষ্ণু ওঁ তৎসৎ অদ্য অমুক মাসি (মাসের নাম উল্লেখ করতে হয়), অমুক তিথৌ (তিথির নাম উল্লেখ করতে হয়), অমুক গোত্রঃ (গোত্রের নাম উল্লেখ করতে হয়), শ্রী অমুক দেবশর্মা (নিজের নাম), শ্রী নারায়ণ প্রীতয়ে অস্যাং নদ্যাং (নদীর নাম)  বা গঙ্গায়াং বা তড়াগে (নদী বা দীঘীর নাম) স্নানমহং করিষ্যে। স্নানকালে তর্পণ করা বিধেয়। দেবতা, ঋষি ও পিতৃপুরুষের তৃপ্তি-সাধনের জন্য যে কর্ম, তাই তপর্ণ। স্নানকালে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তিলজল তর্পণ করা সকল পুত্রের জন্যই আবশ্যক। সামবেদীয়গণের তর্পণ বাক্য এরকম “বিষ্ণুরোম অমুকাগোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা” অর্থাৎ বিষ্ণুকে স্মরণ করে অমুক গোত্রের অমুকের তৃপ্তির জন্য তিল ও জল অর্পণ করছি। পিতামহ, মাতামহ, প্রপিতামহ, প্রমাতামহ প্রভৃতি পিতৃপুরুষের উদ্ধেশ্যে তর্পণের ক্ষেত্রে পিতার গোত্র নামের স্থলে তাঁদের গোত্রের নাম উল্লেখ করতে হয়। প্রত্যেকের উদ্ধেশ্যে তিল সহ এক অঞ্জলি জল প্রদান করা হয়।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী

    প্রত্যেক হিন্দুধর্মাবলম্বীর তিন বেলা সন্ধ্যা কর্তব্য। ব্রহ্ম-গায়ত্রী প্রভৃতি মন্ত্র জপ করাই হল সন্ধ্যা। ভাগবতে আছে নক্ষত্র থাকতে থাকতে প্রাতঃসন্ধ্যা, সূর্য মাথার উপরে উঠলে মধ্যাহ্ন-সন্ধ্যা এবং সূর্য অর্ধেক ডুবেছে এমন সময় সায়ং-সন্ধ্যায় বসবে। প্রকৃতপক্ষে প্রাতঃসন্ধ্যার সময় সূর্যোদয়ের ২৪ মিনিট পূর্ব হতে সূর্যোদয়ের পর ২৪ মিনিট পর্যন্ত। মধ্যাহ্ন-সন্ধ্যার সময় ১১ টা ৪৮ মিনিট হতে ১ টা ১২ মিনিট পর্যন্ত। সূর্যাস্তের দুই ঘণ্টা পূর্ব হতেই সায়ং-সন্ধ্যা শুরু করতে হয়। প্রত্যেক সন্ধ্যার পূর্বেই স্নান করা আবশ্যক। তবে তিন বার স্নান করতে অসমর্থ হলে শুধু প্রাতঃসন্ধ্যার পূর্বে স্নান করতে হয়। কুশাসন, ঊর্ণাশন বা মৃগচর্মের উপর বসে সন্ধ্যা করা বিধেয়। প্রাতঃ ও মধ্যাহ্ন-সন্ধ্যায় পূর্বমুখ হয়ে এবং সায়ং-সংন্ধ্যায় উত্তরমুখ হয়ে বসতে হয়। তারপর আচমন, বিষ্ণুস্মরণ, প্রাণায়াম ও ধ্যান সম্পন্ন করে গায়ত্রীমন্ত্র জপ করা বিধেয়। গায়ত্রীমন্ত্র জপের পূর্বে গায়ত্রীর আবাহন এবং ধ্যান করতে হয়। প্রভাতে গায়ত্রী, মধ্যাহ্নে সাবিত্রী এবং সায়াহ্নে সরস্বতীর ধ্যান করতে হয়। গায়ত্রী জপকালে নিগুর্ণ-ব্রহ্মকে ত্রিগুণময়ী ও শিবশক্তি রূপে চিন্তা করতে হয়। প্রাতঃসন্ধ্যার সময় হৃদয়ের নিকট দক্ষিণ হস্ত চিৎ রেখে, মধ্যাহ্ন-সন্ধ্যার সময় দক্ষিণ হস্ত বক্র রেখে এবং সায়ং-সন্ধ্যার সময় দক্ষিণ হস্ত অধোমুখ রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রপর্ব দ্বারা অনামিকার মূলপর্ব থেকে জপ শুরু করে কনিষ্ঠার মূল, মধ্য ও অগ্রপর্ব, অনামিকার অগ্রপর্ব, মধ্যমার অগ্র এবং তর্জনীর অগ্র, মধ্য ও মূলপর্বে পর্যন্ত জপ করলে ১০ বার জপ সম্পন্ন হয়।  সাধ্যানুসারে দশ, অষ্টোত্তর শত (১০৮) বা অষ্টোত্তর সহস্র (১০০০৮) গায়ত্রী জপ করতে হয়। “ওঁ ভূঃ ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভগোর্দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎঃ ওঁ” এই ব্রহ্ম-গায়ত্রী মন্ত্র জপ শেষে তাঁকে নিম্নোক্ত মন্ত্রে বিসর্জন দিতে হয়।

ওঁ মহেশ বদনোৎপন্না বিষ্ণোহৃর্দয় সম্ভবা।

ব্রহ্মণা সমনুজ্ঞাতা গচ্ছ দেব যথেচ্ছয়া ।।

মহেশ্বরের বদন ও বিষ্ণুর হৃদয় হতে উৎপন্না গায়ত্রী দেবী, ব্রহ্মার নির্দেশ মত যেখানে ইচ্ছা সেখানে গমন করুন। গায়ত্রী-মন্ত্র বিসর্জন শেষে আত্মরক্ষা ও রুদ্রোপস্থান মন্ত্র পাঠ করে সূর্যার্ঘ্য দান ও সূর্যপ্রণাম করতে হয়। সূর্যপ্রণাম শেষে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ত্রুটি মার্জনার জন্য গায়ত্রী দেবীকে এক অঞ্জলি জল প্রদান করতে হয়।

ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ভবেৎ।

পূর্ণং ভবতু তৎসর্বং তৎপ্রসাদাৎ সুরেশ্বরি ।।

অর্থাৎ হে সুরেশ্বরি, আমার এই সকল মন্ত্র উচ্চারণে যদি কোন অক্ষর পরিভ্রষ্ট হয়ে থাকে এবং যদি কোন অক্ষর মাত্রাহীন হয়ে থাকে, তোমার কৃপায় তা সব কিছুই পূর্ণ (শুদ্ধ) হোক।  

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : ভোজন বিধি

    পঞ্চার্দ্র হয়ে অর্থাৎ দক্ষিণ হস্ত, বাম হস্ত, দক্ষিণ পদ, বামপদ এবং মুখ এই পঞ্চ অঙ্গ ধৌত করে পূর্বমুখ হয়ে বসে মৌনী হয়ে (কথা না বলে) আহার করতে হয়। ব্রাহ্মণগণকে চতুষ্কোণ মণ্ডল, ক্ষত্রিয়গণকে ত্রিকোণ মণ্ডল, বৈশ্যগণকে অর্ধচন্দ্রাকার এবং শূদ্রগণকে বতুর্লাকার মণ্ডল অঙ্কিত করে তার উপর ভোজন-পাত্র রেখে আহার গ্রহণ করতে হয়। ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসী এবং বিধবাদের কাংস্যপাত্রে ভোজন নিষিদ্ধ। অন্নগ্রহণের পূর্বে সুপ্রোক্ষিতম্অস্তু (উত্তমরূপে সিক্ত করলাম) বলে অন্ন-ব্যঞ্জনাদির উপর জলের ছিটা দিয়ে অবগুণ্ঠন ও ধেনু-মুদ্রা প্রদর্শন করে মৎস্য-মুদ্রা দ্বারা অন্ন আচ্ছাদিত করতে হয়। তারপর অন্ন-ব্যঞ্জনের উপর দশবার গায়ত্রী-মন্ত্র জপ করতে হয়। মানুষের দেহে দশটি বায়ু ভোজন ও পরিপাকে সাহায্য করে। তার মধ্যে নাগ, কূর্ম, কৃকর, দেবদত্ত ও ধনঞ্জয় এই পঞ্চবায়ুকে বাহ্য-পঞ্চবায়ু এবং প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান এই পঞ্চবায়ুকে অন্তর-পঞ্চবায়ু বলে। ভোজনের পূর্বে বাহ্য-পঞ্চবায়ুকে ভূতিবলি প্রদান করা হয়। এজন্য ভূমিতে অল্প পরিমান অন্ন পাঁচভাগে রেখে “ওঁ নাগায় নমঃ, ওঁ কূর্মায় নমঃ, ওঁ কৃকরায় নমঃ, ওঁ দেবদত্তায় নমঃ, ওঁ ধনঞ্জয়ায় নমঃ” বলে প্রত্যেক ভাগে একটু জল দিতে হয়। তারপর এক গণ্ডূষ (এক কোষ) জল নিয়ে অর্ধেক পান করতে হয় এবং অবশিষ্ট জল দ্বারা অন্নের উপর আস্তরণ দিতে হয়। এক আপোশান বলে। আপোশানকালে অমৃতঃ উপস্তরণমসি স্বাহা (অমৃতের আস্তরণ দিলাম) মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় অর্থাৎ তখন ভোক্তাকে মনে মনে চিন্তা করত হয় যেন অন্নের উপর জল রূপ অমৃতের আস্তরণ বা আচ্ছাদন দেয়া হয়েছে। এরপর অন্তর-পঞ্চবায়ুকে অন্নে আহুতি দিতে হয়। উপনিষদে বলা হয়েছে অন্নই ব্রহ্ম। তাই অন্নে প্রাণবায়ু আহতি দিলে মূলত ব্রহ্মেই আহুতি দেয়া হয়। তর্জনী, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা “ওঁ প্রাণায় স্বাহা” মন্ত্রে প্রাণবায়ুকে; মধ্যমা, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা “ওঁ অপানায় স্বাহা” মন্ত্রে অপান বায়ুকে; কনিষ্ঠা, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা “ওঁ সমানায় স্বাহা” মন্ত্রে সমান বায়ুকে; কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠ এই চতুরাঙ্গুলি দ্বারা “ওঁ উদানায় স্বাহা” মন্ত্রে উদান বায়ুকে এবং পঞ্চাঙ্গুলি দ্বারা “ওঁ ব্যানায় স্বাহা” মন্ত্রে ব্যান বায়ুকে আহুতি দেওয়া হয়। এভাবে নির্দিষ্ট মন্ত্রে নিদিষ্ট আঙ্গুলি সহযোগে অন্নে ঘৃতপ্রদানের মাধ্যমে ব্রহ্মে প্রাণবায়ুকে আহুতি দেয়া হয়। এর পর আহার শুরু করতে হয়। শাস্ত্রমতে প্রথমে মিষ্টি, তারপর লবণ, লবণের পর অম্ল, অস্লের পরে কটু এবং অবশেষে তিক্ত আহার গ্রহণ কর্তব্য। ব্রাহ্মণগণের সাথে ভোজন করতে বসলে এক ব্যক্তি পাত্র ত্যাগ করলে সকলকেই ত্যাগ করতে হয় অর্থাৎ শেষান্ন ভোজন করতে নেই। ভোজন শেষে অন্নযুক্ত হস্তে এক গণ্ডূষ জল নিয়ে ওঁ অমৃতঃ অপিধানমসি স্বাহা (অমৃত ধারণ করে শেষ করলাম) মন্ত্রে প্রত্যোপশান অর্থাৎ অর্ধেক জল পান করে অবশিষ্টাংশ মাটিতে ফেলতে হয়।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : শাস্ত্রপাঠবিধি

    মনুসংহিতায় বলা হয়েছে বর্ষাকালে এবং রাত্রিতে বেদপাঠ নিষিদ্ধ। ভূমিকম্প, ঝড় প্রভৃতি দুর্যোগকালেও বেদপাঠ নিষিদ্ধ। জলমধ্যে দাঁড়িয়ে, মধ্যরাত্রির চতুর্থ মুহুর্তে, মলমুত্র ত্যাগর সময়, উচ্ছিষ্ট অবস্থায় এবং শ্রাদ্ধীয় নিমন্ত্রন গ্রহণ করে মনে-মনেও বেদ চিন্তা করা উচিত নয়। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সময়, অমাবস্যা, পূর্ণিমা, অষ্টমী ও চতুর্দশী তিথিতে বেদ পাঠ নিষিদ্ধ। কলহকালে, যুদ্ধকালে, সবেমাত্র ভোজন করে, অজীর্ণ হলে অর্থাৎ আগের দিনের অন্ন পরের দিন পরিপাক না হলে, বমি করার পর এবং ঢেকুর তুলতে তুলতে বেদ অধ্যয়ন করা উচিত নয়। কোন কারণে দেহে রক্তপাত হলেও বেদ অধ্যয়ন অকর্তব্য। অশ্ব, বৃক্ষ, হস্তী, গাধা, উট ও নৌকায় আরোহন করে বেদ পাঠ নিষিদ্ধ। শ্মশানের নিকটে, গোচারণ স্থানে, মৈথুনকালীন বস্ত্র পরিধান করে এবং শ্রাদ্ধীয়-দ্রব্য গ্রহণ করে বেদ পাঠ অকর্তব্য। প্রাতঃ-সন্ধ্যা এবং সায়ং-সন্ধ্যাকালে বেদ পাঠ নিষিদ্ধ। একমাত্র মধ্যাহ্ন-সন্ধ্যাকালেই বেদ অধ্যয়ন কর্তব্য।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : পূর্বাহ্ণ-কৃত্য

    পূর্বাহ্ন-কৃত্য প্রথম যামার্ধ হতে তৃতীয় যামার্ধ অর্থাৎ ভোর ৬ টা হতে ৭ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে করণীয়। দেবগৃহ পরিষ্কার, গুরু ও মাঙ্গল্য দ্রব্য দর্শন, দর্পণে মুখ দর্শন, কেশ প্রসাধন এবং পুষ্প, তুলসী ও বিল্বপত্র চয়নাদি কর্ম প্রথম যামার্ধে অথার্ৎ ৬ টা হতে ৭ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে করতে হয়। এরপর বেদপাঠ দ্বিতীয় যামার্ধে অর্থাৎ ৭ টা ৩০ মিনিট হতে ৯ টার মধ্যে করতে হয়। তৃতীয় যামার্ধে অর্থাৎ ৯ টা হতে ১০ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মাতা, পিতা, গুরু, স্ত্রী এবং দরিদ্র আশ্রিত অতিথিদের ভরণ-পোষণের জন্য নিজ নিজ কর্ম দ্বারা অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত হওয়া কর্তব্য।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : মধ্যাহ্ন-কৃত্য

    পঞ্চম যামার্ধে অর্থাৎ ১২ টা হতে ১ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মধ্যাহ্নকৃত্য করণীয়। তখন নিত্য-হোম, নিত্য-শ্রাদ্ধ, অতিথি পূজা (সৎকার), গোখাদ্য দান, ভোজন প্রভৃতি কর্ম সম্পাদন করতে হয়।

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : অপরাহ্ণ-কৃত্য

    অপরাহ্ণ-কৃত্য ষষ্ঠ ও সপ্তম যামার্ধে অর্থাৎ দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট হতে ৪ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে করণীয়। এসময় পুরাণাদি শাস্ত্র পাঠ ও আলোচনা করা বিধেয়। অষ্টম যামার্ধে অর্থাৎ বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিট হতে সূর্যাস্তের মধ্যে সায়াহ্ন-কৃত্য করণীয়। তখন পশ্চিমদিকে অথবা বায়ুকোণে মুখ করে সায়ন্তনী সন্ধ্যা ও গায়ত্রী জপ করতে হয়। 

নিত্যকর্ম পদ্ধতি : রাত্রি-কৃত্য

    রাত্রির প্রথম যামার্ধে অর্থাৎ ছয়টায় রাত্রি-কৃত্য শুরু হয়। তখন দিবাভাগের যে কর্মগুলো ভূলবশত করা হয়নি তা সম্পাদন করতে হয়। সূর্যাস্তের পর অতিথি বিমুখ হলে মহাপাপ হয় তাই এই সময় অতিথিকে যত্ন সহকারে ভোজন করাতে হয়। সাধারণত রাত্রি প্রথম প্রহর শেষে অর্থাৎ রাত নয়টার পর শয়ন করতে যাওয়া বিধেয়। শাস্ত্রে নির্দেশ আছে গোময় উপলিপ্ত, শুদ্ধ ও নির্জন স্থানে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে শির রেখে শয়ন করবে এবং শিরোদেশে মাঙ্গল্য ও জলপূর্ণ কুম্ভ (কলস) রাখবে। কখনও উত্তরশিরা হয়ে শয়ন করা উচিত নয়। শূন্যগৃহে, শ্মশানে, শিবমন্দিরে, বৃক্ষতলে, চতুষ্পথে, কাঁকর, লোষ্ট্র (মাটির ঢেলা) ও ধূলিযুক্ত স্থানে, গোশালায়, ধান্যক্ষেত্রে, বিপ্রভবনে এবং গুরুবর্গের সাথে এক শয্যায় শয়ন নিষিদ্ধ। এছাড়াও ভিজা-কাপড় পরে, নগ্ন হয়ে আবরণশূন্য স্থলে এবং ঊর্ধ আকাশ দৃশ্যমান হয় এমন স্থলে শয়ন করা উচিত নয়। শয়ন করার পর নিত্যকর্ম শেষ হয়।

    নিত্যকর্মের বিধি-বিধান ক্ষেত্রবিশেষে পরিবর্তন ও শিথিলযোগ্য। যেমন প্রবাসে অনেক কর্ম করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন যথাসাধ্য কর্ম করলেই হয়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় আদি বর্ণভেদেও নিত্যকর্মের ভিন্নতা থাকে। ব্রাহ্মণদের যতটা বিধিপূর্বক কর্ম করতে হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের ততটা না করলেও চলে। দেশ-কাল-পাত্রভেদে কিছু কর্ম পরিবর্তিত হয়। যেমন পূর্বে শৌচকার্য ও স্নানে মৃত্তিকা ব্যবহারের রীতি থাকলেও বর্তমানকালে আবিষ্কৃত পরিষ্কারকদ্রব্য দ্বারা শৌচকার্য ও স্নান দোষণীয় নয়। এছাড়াও প্রাচীনকালে দন্তধাবনের জন্য ব্যবহৃত দন্তকাষ্ঠ বর্জন করে আধুনিক পদ্ধতিতে দন্তধাবন করাও ধর্ম-বিরুদ্ধ নয়। সময়ের সাথে সভ্যতা পরিবর্তিত হয় আর সেই সাথে পরিবর্তিত হয় কিছু বিধি-বিধানেরও। তবে যে পরিবর্তন ধর্ম-বিরুদ্ধ সে পরিবর্তন কখনোই কাম্য নয়। দিন যতই আধুনিক হোক না কেন সব সময় ঈশ্বর-দেবতায় ভক্তি স্থাপন করে কর্ম করা উচিত। কারণ জগৎ ও সময় পরিবর্তনশীল হলেও ঈশ্বর পরিবর্তনশীল নয়। 

(আমা কর্তৃক লিখিত “হিন্দুধর্মের সারকথা” পুস্তক থেকে সঙ্কলিত)

আরও পড়ুন