ধর্ম শাস্ত্র
শাস্ত্র অর্থ শাসন। সুতরাং যে গ্রন্থে ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতি-নীতি বর্ণিত থাকে এবং
যে গ্রন্থ পাঠ করলে ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয় তাকে ধর্মশাস্ত্র বলে।
ধর্মশাস্ত্রে মূলত ভগবান, দেবদেবী ও মুনি-ঋষিদের মুখ-নিঃসৃত বানী, উপদেশ,
নির্দেশ এবং তাঁদের লীলা-কাহিনী বর্ণিত থাকে। ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে বিভিন্ন
শ্লোক ও মন্ত্র-তন্ত্রের সংকলন। শ্লোক শব্দের অর্থ যশ-খ্যাতি। পদ্যে লেখা
যেসব বাক্য দ্বারা ঈশ্বর বা দেবতার যশ-খ্যাতি বা গুণকীর্তন
প্রকাশ করা হয় তাকে শ্লোক বলে। “মননাৎ ত্রায়তে যস্তু স মন্ত্রঃ পরিকীর্তিতঃ” অর্থাৎ
যে বস্তু মনন বা চিন্তা করতে করতে ত্রাণ পাওয়া যায় তাকে মন্ত্র বলে। ‘তন্’ ধাতু দ্বারা
তন্ত্র শব্দটি গঠিত। তন্ ধাতুর অর্থ বিস্তার সাধন। যা জীবনকে বিস্তার করে অর্থাৎ বড়
করতে করতে অসীমের সাথে মিলিয়ে দেয় তাই তন্ত্র। তন্ত্র জীবনকে বিস্তারিত করে সাধককে
দুঃখ হতে ত্রাণ করে। হিন্দুদের সব ধর্মগ্রন্থ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এই সংস্কৃত ভাষাকে
দেবভাষা বলে। সময়ের সাথে সাথে যখন বৈদিক বা আর্য ভাষার অপভ্রংশ ঘটতে থাকে তখন বৈয়াকরণিক
পানিনি ঐ সময়ে প্রচলিত বৈদিক ভাষা সংস্কার করে একটি ব্যাকরণ রচনা করেন। সংস্কার করা
হয়েছিল বলে ঐ বৈদিক ভাষা সংস্কৃত ভাষা নামে পরিচিতি পেল।
হিন্দুদের ধর্ম শাস্ত্রের প্রকারভেদ
হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্রকে প্রধানত পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা— শ্রুতি-শাস্ত্র, স্মৃতি-শাস্ত্র, পুরাণ, ঐতিহাসিক মহাকাব্য এবং তন্ত্র-শাস্ত্র। শ্রুতি-শাস্ত্রকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে ছয়টি দর্শন, যথা— সাংখ্য, ন্যায়, বৈশেষিক, যোগ, মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শন। যে শাস্ত্র গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শ্রম্নত হয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে তাকে শ্রুতি-শাস্ত্র বলে। শ্রুতি-শাস্ত্র অপৌরুষেয় অর্থাৎ কোন পুরুষ তা রচনা করেননি। ঋষিরা ধ্যানযোগে যে জ্ঞান লাভ করেছেন, সে জ্ঞান শিষ্যদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। শিষ্যরা ঐ জ্ঞান লাভ করে আবার তাঁদের শিষ্যদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এভাবে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় যে জ্ঞান প্রবাহিত হয়েছে, তা একদিন লিপিবদ্ধ হয়ে শ্রুতি শাস্ত্র নামে খ্যাত হয়েছে। মুনি-ঋষি রচিত শাস্ত্রই স্মৃতি শাস্ত্র। মুনি-ঋষিদের স্মৃতিপটে যে জ্ঞান ছিল তারই লিপিবদ্ধ রূপ স্মৃতি-শাস্ত্র নামে খ্যাত। বেদ-উপনিষদ শ্রুতি-শাস্ত্রের অন্তর্গত এবং মনুসংহিতা, যাজ্ঞবল্ক্য-সংহিতা প্রভৃতি স্মৃতি-শাস্ত্রের অন্তর্গত। পুরাণ শব্দের অর্থ পুরাতন বা প্রাচীন। পুরাণে সহজ উপায়ে ও গল্পের মাধ্যমে ধর্মকথা বুঝানো হয়েছে। সেখানে মানব ও দেবাসুরের বিভিন্ন কল্পিত কাহিনী বর্ণিত আছে। রামায়ণ ও মহাভারতকে ঐতিহাসিক মহাকাব্য বলে। রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী ঐতিহাসিক কারণ পুরাকালে বাস্তবে যা ঘটেছে তা নিয়েই ঐ কাহিনী রচিত হয়েছে। শিবের মুখ হতে যে জ্ঞান নিঃসৃত হয়েছে তাই তন্ত্র-শাস্ত্র। শিব তন্ত্র-শাস্ত্রের বক্তা এবং পাবর্তী শ্রোতা। শিবের মুখ থেকে আগমন হয়েছে বলে তন্ত্র-শাস্ত্রকে আগম শ্রাস্ত্রও বলে।
আরও পড়ুন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন