7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ খাদ্য ও ভোজন বিধি

 হিন্দুমতে ভোজন বিধি

    পঞ্চার্দ্র হয়ে অর্থাৎ দক্ষিণ হস্ত, বাম হস্ত, দক্ষিণ পদ, বামপদ এবং মুখ এই পঞ্চ অঙ্গ ধৌত করে পূর্বমুখ হয়ে বসে মৌনী হয়ে (কথা না বলে) ভোজন করতে হয়। ব্রাহ্মণগণকে চতুষ্কোণ মণ্ডল, ক্ষত্রিয়গণকে ত্রিকোণ মণ্ডল, বৈশ্যগণকে অর্ধচন্দ্রাকার এবং শূদ্রগণকে বর্তুলাকার মণ্ডল অঙ্কিত করে তার উপর ভোজন-পাত্র রেখে ভোজন করতে হয়। ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসী এবং বিধবাদের কাংস্যপাত্রে ভোজন নিষিদ্ধ।
ভোজন বিধি

    অন্নগ্রহণের পূর্বে সুপ্রোক্ষিতম্অস্তু (উত্তমরূপে সিক্ত করলাম) বলে অন্ন-ব্যঞ্জনাদির উপর জলের ছিটা দিয়ে অবগুণ্ঠন ও ধেনু-মুদ্রা প্রদর্শন করে মৎস্য-মুদ্রা দ্বারা অন্ন আচ্ছাদিত করতে হয়। তারপর অন্ন-ব্যঞ্জনের উপর দশবার গায়ত্রী-মন্ত্র জপ করতে হয়। মানুষের দেহে দশটি বায়ু ভোজন ও পরিপাকে সাহায্য করে। তার মধ্যে নাগ, কূর্ম, কৃকর, দেবদত্ত ও ধনঞ্জয় এই পঞ্চবায়ুকে বাহ্য-পঞ্চবায়ু এবং প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান এই পঞ্চবায়ুকে অন্তর-পঞ্চবায়ু বলে। ভোজনের পূর্বে বাহ্য-পঞ্চবায়ুকে ভূতিবলি প্রদান করা হয়। এজন্য ভূমিতে অল্প পরিমান অন্ন পাঁচভাগে রেখে ‘‘ওঁ নাগায় নমঃ, ওঁ কূর্মায় নমঃ, ওঁ কৃকরায় নমঃ, ওঁ দেবদত্তায় নমঃ, ওঁ ধনঞ্জয়ায় নমঃ’’ বলে প্রত্যেক ভাগে একটু জল দিতে হয়। তারপর এক গণ্ডূষ (এক কোষ) জল নিয়ে অর্ধেক পান করতে হয় এবং অবশিষ্ট জল দ্বারা অন্নের উপর আস্তরণ দিতে হয়। এক আপোশান বলে। আপোশানকালে অমৃতঃ উপস্তরণমসি স্বাহা (অমৃতের আস্তরণ দিলাম) মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় অর্থাৎ তখন ভোক্তাকে মনে মনে চিন্তা করত হয় যেন অন্নের উপর জল রূপ অমৃতের আস্তরণ বা আচ্ছাদন দেয়া হয়েছে। এরপর অন্তর-পঞ্চবায়ুকে অন্নে আহুতি দিতে হয়। উপনিষদে বলা হয়েছে অন্নই ব্রহ্ম। তাই অন্নে প্রাণবায়ু আহতি দিলে মূলত ব্রহ্মেই আহুতি দেয়া হয়। তর্জনী, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা ‘‘ওঁ প্রাণায় স্বাহা’’ মন্ত্রে প্রাণবায়ুকে; মধ্যমা, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা ‘‘ওঁ অপানায় স্বাহা’’ মন্ত্রে অপান বায়ুকে; কনিষ্ঠা, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা ‘‘ওঁ সমানায় স্বাহা’’ মন্ত্রে সমান বায়ুকে; কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠ এই চতুরাঙ্গুলি দ্বারা ‘‘ওঁ উদানায় স্বাহা’’ মন্ত্রে উদান বায়ুকে এবং পঞ্চাঙ্গুলি দ্বারা ‘‘ওঁ ব্যানায় স্বাহা’’ মন্ত্রে ব্যান বায়ুকে আহুতি দেওয়া হয়। এভাবে নির্দিষ্ট মন্ত্রে নিদিষ্ট আঙ্গুলি সহযোগে অন্নে ঘৃতপ্রদানের মাধ্যমে ব্রহ্মে প্রাণবায়ুকে আহুতি দেয়া হয়। এর পর আহার শুরু করতে হয়। শাস্ত্রমতে প্রথমে মিষ্টি, তারপর লবণ, লবণের পর অন্ন, অন্নের পরে কটু এবং অবশেষে তিক্ত আহার গ্রহণ কর্তব্য। ব্রাহ্মণগণের সাথে ভোজন করতে বসলে এক ব্যক্তি পাত্র ত্যাগ করলে সকলকেই ত্যাগ করতে হয় অর্থাৎ শেষান্ন ভোজন করতে নেই। ভোজন শেষে অন্নযুক্ত হস্তে এক গণ্ডূষ জল নিয়ে ওঁ অমৃতঃ অপিধানমসি স্বাহা (অমৃত ধারণ করে শেষ করলাম) মন্ত্রে প্রত্যোপশান অর্থাৎ অর্ধেক জল পান করে অবশিষ্টাংশ মাটিতে ফেলতে হয়।

হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ খাদ্য

    চিল, শকুন, পায়রা, কলবিঙ্ক (চড়াই), প্লব (জলচর পাখী বিশেষ), টিট্রিভ (তিতির), হাঁস, চক্রবাক, গ্রামকুক্কুট, সারস, রজ্জুবাল, দাত্যূহ (ডাহুক), শুক-সারিকা (টিয়া ও শালিক), ময়ুর, পানকৌরী, বক, প্রভৃতি পাখীর মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। সাপ, পেঁচা, অজানা পশু, উট, পঞ্চনখবিশিষ্ট পশু (যেমন- বানর, শৃগাল প্রভৃতি) প্রাণীর মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। তবে পঞ্চনখবিশিষ্ট প্রাণীর মধ্যে শজারু, গোধ (গোসাপ), কূর্ম, শশক (খরগোস) ভোজন করা যায়। এছাড়া ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা), গ্রাম্যশুকর, রশুন, গাম্যকুক্কুট, পলন্ডু (পেঁয়াজ), গৃঞ্জন (গাজর) এই ছয়টি জ্ঞানপূর্বক যে ভোজণ করবে তাকে কৃচ্ছ্র-সান্তপন ব্রতের মাধ্যমে শুদ্ধ হতে হবে। তবে যজ্ঞে আহুতি দেয়ার পর যে মাংস অবশিষ্ট থাকে, সে মাংস ভোজনকে দৈব-প্রবৃত্তি বলে এবং নিজের জন্য পশু হত্যা করে মাংস ভোজনকে রাক্ষসের আচার বলে। সুতরাং শাস্ত্রে মন্ত্র দ্বারা শোধনকৃত মাংস যজ্ঞে আহুতি দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তাই ভোজন করার নির্দেশ আছে। মাছ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, পাঠীন (বোয়াল), রোহিত (রুই), রাজীব (ডোরাকাটা দাগযুক্ত মাছ), সিংহতুণ্ড (যে মাছের মুখের আকৃতি সিংহের মত) এবং শল্ব (আঁশযুক্ত) মাছ দেবতা ও পিতৃপুরুষের উদ্ধেশ্যে উৎসর্গ করে খাওয়া যায়। ওষধি (যে গাছ ফল পাঁকার পর মরে যায়), ছাগল প্রভৃতি পশু, যূপ নির্মাণযোগ্য বৃক্ষসমুহ এবং তির্যক প্রাণী (পাখী) যজ্ঞের জন্য বিনাশ প্রাপ্ত হয়ে আবার উচ্চযোনি লাভ করে। যে পিতৃলোক ও দেবলোকের অর্চনা না করে অন্য প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করে সে নিজের মাংস বৃদ্ধি করে, জগতে তার তুলনায় পাপী আর নেই।

খাদ্যের প্রকারভেদ

    আহার সাধারণত তিন প্রকার, যথা- সাত্ত্বিক আহার, রাজসিক আহার এবং তামসিক আহার। যা আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, চিত্ত-প্রসন্নতা ও রুচি বর্ধনকারী, সরস, স্নেহযুক্ত, সারবান (দেহে যার শক্তি বহু কাল থাকে) এবং প্রীতিকর আহারকে সাত্ত্বিক আহার বলে। অতি কটু (ঝাল), অতি অম্ল (টক), অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, তীক্ষ্ণ, বিদাহী  (যেমন- সরিষা) এবং দুঃখ, শোক ও রোগ উৎপাদক আহারই রাজসিক আহার। যে খাদ্য বহু পূর্বে পাঁক হয়েছে, যার রস শুষ্ক হয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, পর্যুষিত (বাসি), উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র তাকে তামসিক আহার বলে ।
খাদ্য

বার-তিথি অনুসার বিভিন্ন খাদ্য বর্জন

    বার-তিথি অনুসার বিভিন্ন আহার বর্জন করতে হয়। যেমন- কার্তিক মাসে মৎস্য ভক্ষণ বর্জন করা উচিত। একান্ত সম্ভব না হলে উক্ত মাসের শুক্ল-একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচদিন মৎস্য ভক্ষণ বর্জন করা উচিত। প্রতিপদে কুষ্মাণ্ড (কুমড়া), দ্বিতীয়ায় বৃহতী (ক্ষুদ্র বেগুন), তৃতীয়ায় পটল, চতুর্থীতে মূলা, পঞ্চমীতে বেল, ষষ্ঠীতে নিম, সপ্তমীতে তাল, অষ্টমীতে নারিকেল, নবমীতে কলম্বী (কলমী), একাদশীতে শিম্বী (শিম), দ্বাদশীতে পূতিকা (পুঁইশাক), ত্রয়োদশীতে বার্তাকু (বেগুণ), চতুর্দশীতে মাষকলাই এবং পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় মাংস ভোজণ নিষিদ্ধ।

খাদ্যে দোষ

    খাদ্যে ত্রিবিধ দোষ। যথা- জাতি দোষ, আশ্রয় দোষ এবং নিমিত্ত দোষ। জাতিদোষ হল খাদ্যের প্রকৃতিগত দোষ। যেমন- মদ্য, রসুন, পেঁয়াজ প্রভৃতি উত্তেজক খাদ্যে যে দোষ জান্মে তাই আশ্রয় দোষ। কোন দুষ্ট ব্যক্তির নিকট হতে খাদ্যগ্রহণ করলে ঐ দুষ্ট ব্যক্তির দোষে খাদ্যে যে দোষ জন্মে তাকে আশ্রয় দোষ বলে। যেমনঃ অশুচি, অতি কৃপণ, আসুর স্বভাব, কুৎসিত ও রোগাক্রান্ত খাদ্যবিক্রেতা প্রভৃতি ব্যক্তির নিকট খাদ্য গ্রহণ করলে ঐ খাদ্য আশ্রয় দোষে দুষ্ট হয়। খাদ্য ধূলি, ময়লা, কেশ, মুখের লালা প্রভৃতি অপবিত্র দ্রব্যের সংস্পর্শে থাকলে ঐ খাদ্যে যে দোষ জন্মে তাই নিমিত্ত দোষ। খাদ্যের এই ত্রিবিধ দোষ পরিহার করা কর্তব্য। এছাড়াও শাস্ত্রে দৃষ্টকারক, অদৃষ্টকারক ও দৃষ্টাদৃষ্টকারক এই তিন প্রকার অন্নদোষ আছে। যে দ্রব্য আহার করলে শরীরে রোগ জন্মে এবং স্বাস্থ্যহানি ঘটে তাকে দৃষ্টকারক বলে। যে দ্রব্য আহার করলে দূরদৃষ্ট জন্মে তাকে অদৃষ্টকারক বলে। যে দ্রব্য আহার করলে ইহলোকে রোগাদি ও পরলোকে দূরদৃষ্টি জন্মে তাকে দৃষ্টাদৃষ্টকারক বলে। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন