7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১১ জানুয়ারী, ২০২২

ব্রহ্মা দেব

 ব্রহ্মা

    ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই তিন দেবতাকে একত্রে ত্রিনাথ বা ত্রিমূর্তি বলা হয়। মূলত ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব পৃথক দেবতা নন। এক ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি ব্রহ্মা, যখন পালন করেন তখন তিনি বিষ্ণু এবং যখন সংহার বা ধংস করেন তখন তিনি শিব। ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, কিন্তু কেন এবং কিভাবে? কল্পনা করা হয় যে, ব্রহ্মা বহু হওয়ার বাসনায় এবং লীলারস আস্বাদনের জন্য এই জীব-জগৎ সৃষ্টি করেছেন। একজন কুমার যেমন মাটি দিয়ে কলস তৈরী করেন, ব্রহ্মা কিন্তু সেভাবে সৃষ্টি করেন না। সব গ্রন্থেই বলা হয়েছে, ব্রহ্মা তপস্যা বা মন্ত্রবলে মায়া দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করেছেন।

ব্রহ্মা

ব্রহ্মার উৎপত্তি

    এবার আসা যাক ব্রহ্মার উৎপত্তি প্রসঙ্গে। বিভিন্ন পুরাণে ব্রহ্মার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে তিন দেবতারই উৎপত্তি হয়েছে পরব্রহ্ম থেকে এবং তিন জন একই কিন্তু তারপরও পৃথকভাবে তাঁদের উৎপত্তি কথা বলা হয়েছে। পুরাণের রূপক কাহিনী বুঝতে না পেরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের অনুসারীরা পরস্পরের সাথে বিবাদ করেন, যা কখনই কাম্য নয়। মার্কণ্ডেয়, বিষ্ণু প্রভৃতি পুরাণ মতে ব্রহ্মার সৃষ্টি বিষ্ণু হতে। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে বলা হয়েছে, শিবের উৎপত্তি ব্রহ্মা থেকে। আবার শিব পুরাণ অনুসারে শিব থেকেই ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর সৃষ্টি। তাহলে পুরাণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, তিন জন থেকেই তিন জনের উৎপত্তি অর্থ্যাৎ একই ঈশ্বর তিন জন হয়েছেন। যে পুরাণ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে পৃথক করেছে, সে পুরাণই আবার তিন দেবতাকে এক করেছে। কালিকা পুরাণে (১২/২৯) উল্লেখ আছে মহেশ্বর ইচ্ছা করে তাঁর ত্রিগুণময় শরীর তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং এই তিন ভাগ সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণময় হয়েছিলেন। তাঁর শরীরের ঊর্ধভাগ হতে ব্রহ্মা, মধ্যভাগ হতে বিষ্ণু এবং নিম্মভাগ হতে শিব উৎপন্ন হয়েছিলেন। কালিকাপুরাণের অন্যত্র (১২/৩৭) উল্লেখ আছে একই পরমেশ্বর সৃষ্টি, স্থিতি এবং ধ্বংসের জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই পৃথক পৃথক সংজ্ঞা লাভ করেছেন। অনেকেই নারায়ণ এবং বরাহ অবতার হিসাবে বিষ্ণুকে বোঝে। কিন্তু ব্রহ্ম পুরাণে বলা হয়েছে, ব্রহ্মাই নারায়ণ রূপে কারণ সমুদ্রে যোগনিদ্রায় নিমগ্ন থাকেন। কূর্ম পুরাণে (৬/৭-৯) ব্র্রহ্মার বরাহ রূপ ধারণের উল্লেখ আছে। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু বা নারায়ণে কোন ভেদ নেই। গরুড় পুরাণে (৪/১২) বলা হয়েছে হরি স্বয়ং ব্রহ্মা হয়ে জগৎ সৃষ্টি করেছেন, বিষ্ণু রূপে জগৎ পালন করেন এবং রুদ্র রূপে কল্পান্তে জগৎ সংহার করেন। অতএব ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবে ভেদ জ্ঞান অজ্ঞানতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। কিন্তু যেহেতু শাস্ত্রে তাঁদের পৃথকভাবে স্তুতি করা হয়েছে, সেহেতু ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের পৃথক মূর্তি সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

বেদে ব্রহ্মা

    বেদে ব্রহ্মকে পাওয়া যায় ব্রহ্মণস্পতি বা বৃহস্পতি নামে। বৃহস্পতি অর্থ স্তুতিদেব বা স্তুতিকারী ঋত্বিক। সুতরাং যিনি মন্ত্র উচ্চারণ করে যজ্ঞ সম্পাদন করেন, তিনিই ব্রহ্মা। পুরাণেও দেখা যায় ব্রহ্মা সৃষ্টিকার্য সহ সকল কর্ম করেন মন্ত্রের মাধ্যমে। তিনি কমণ্ডলু, অজপা, বেদ প্রভৃতি ধারণ করেন অর্থাৎ পুরাণেও তাঁর ব্রাহ্মণের বেশ। কৃষ্ণ-যজুর্বেদে বলা হয়েছে ব্রহ্মাই দেবতাদের বৃহস্পতি এবং ব্রহ্মার দ্বারাই যজ্ঞ সম্যক ধৃত হয়ে থাকে অর্থাৎ বৃহস্পতিই ব্রহ্ম (ব্রহ্মা)।

ব্রহ্মার রূপ

    এখন ব্রহ্মার রূপ বর্ণনা করা যাক। কালিকা পুরাণে ব্রহ্মার যে রূপ পাওয়া যায় তা এরকম ব্রহ্মা কমণ্ডলুুধারী, চার বাহুবিশিষ্ট, কখনও রক্তকমলে কখনও হংসের উপর অবস্থান করেন। তাঁর গাত্র-বর্ণ রক্তাভ-গৌর এবং তাঁর অঙ্গ উন্নত। চার হস্তের বাম দিকের দুই হস্তে কমণ্ডলু ও হোমপাত্র এবং ডান দিকের দুই হস্তে সু্রব ও জপমালা (অজপা)। তাঁর সম্মুখভাগে দেবগণ, বাম পাশে সাবিত্রী এবং ডানপাশে সরস্বতী রয়েছেন। মৎস্য পুরাণ মতে ব্রহ্মা চতুমুর্খ অর্থাৎ ব্রহ্মার চারটি মস্তক। তিনি শুভ্রবসন ও মৃগচর্ম পরে আছেন এবং তিনি দিব্য যজ্ঞোপবীতধারী (যজ্ঞসূত্র ধারণকারী)। তাঁর পাশে ঘৃতপাত্র ও চারিবেদ রয়েছে। ব্রহ্মার কমণ্ডলু, ঘৃতপাত্র ও জপমালা ধারণ, শুভ্রবসন পরিধান পভৃতি দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, ব্রহ্মা একজন তপস্বী বা ব্রাহ্মণ। তিনি সত্ত্বগুণ সম্পন্ন এবং তিনি সৃষ্টিও করেন তপস্যাবলে। ব্রহ্মার চার মুখ চারিবেদ প্রকাশক। কেউ কেউ বলেন ব্রহ্মার চার মুখ দ্বারা চার দিক বোঝায়। হংস অর্থ সূর্য। সূর্য জ্ঞানের আধার। ব্রহ্মা জ্ঞানী এবং তিনি মন্ত্র-তন্ত্র দ্বারাই সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করেন।

ব্রহ্মার দিন

    এবার আসা যাক ব্রহ্মার সৃষ্টি-প্রকৃয়া প্রসঙ্গে। পুরাণশাস্ত্রে উল্লেখ আছে ব্রহ্মার দিনে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয় এবং ব্রহ্মার রাতে প্রলয় বা ধ্বংস সংঘটিত হয়। এই ব্রহ্মার কাল আর পৃথিবীর কাল এক নয়। ৪৩২ কোটি বছরে  ব্রহ্মার এক দিন এবং ৪৩২ কোটি বছরে এক মন্বন্তর ব্রহ্মার এক রাত হয় । ব্রহ্মার এই দিনকে কল্পও বলে। সত্য যুগের আয়ু ১৭,২৮,০০০ বছর, ত্রেতা যুগের আয়ু ১২,৯৬,০০০ বছর, দ্বাপর যুগের আয়ু ৮,৪৬,০০০ এবং কলি যুগের আয়ু ৪,৩২,০০০। চর্তুযুগের মোট আয়ু ৪৩২০০০০ বছর। এরকম এক সহস্র চতুযুর্গ অতিবাহিত হয় ব্রহ্মার এক দিনে অর্থাৎ ব্রহ্মার একদিন = ৪৩২০০০০ × ১০০০ = ৪৩২০০০০০০০ বছর অর্থাৎ ৪৩২ কোটি বছর। এটাই কল্পকালের হিসেব। এক কল্পকালের আবার ১৪টি হিসেব মন্বন্তর। তাহলে ৩০,৬৭,২০,০০০ বছরে এক মন্বন্তর হয়। প্রতিটি মন্বন্তরে একজন মনু রাজত্ব করেন অর্থাৎ ব্রহ্মার দিনে ১৪ জন মনু রাজত্ব করেন।

ব্রহ্মার মানসপুত্র

    এবার ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু সম্পর্কে বলা আবশ্যক। ব্রহ্মার দেহ হতে মনুর আবির্ভাব। এজন্য মনুকে স্বায়ম্ভুব মনু বলা হয়। মনুর স্ত্রীর নাম শতরূপা। মনুর প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামে দুই পুত্র এবং আকুতি, দেবাহুতি ও প্রসূতি নামে তিন কন্যা ছিল। মনুষ্য শব্দটি এসেছে মনু থেকে। যারা মনুর বশংধর তারাই মনুষ্য বা মানব। প্রত্যেক মন্বন্তরেই দেবতা, ইন্দ্র, সপ্তর্ষি, মনু-পুত্রগণ প্রভৃতি সৃষ্টি হয় এবং মন্বন্তর শেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এক কল্পের চতুর্দশ মন্বন্তরের চতুর্দশ মনু হলেন স্বায়ম্ভুব, স্বরোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত, সাবর্ণি, দক্ষসাবর্ণি, ব্রহ্মসাবর্ণি, ধর্মসাবর্ণি, রুদ্রসাবর্ণি, দেবতাসাবর্ণি ও ইন্দ্রসাবর্ণি।

ব্রহ্মার সৃষ্টি

    ব্রহ্মা কিভাবে এই বিশ্বচরাচর সৃষ্টি করেছেন? মনুসংহিতায় সৃষ্টি প্রকৃয়ার যে তথ্য পাওয়া যায় তা এরকম সৃষ্টির পূর্বে এ বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড তমসাচ্ছন্ন বা অন্ধকারময় ছিল। তারপর ব্রহ্মা অব্যক্ত থেকে ব্যক্ত হলেন অর্থাৎ নিরাকার ব্রহ্ম থেকে সাকার পুরুষের সৃষ্টি হল। তারপর সে পুরুষ প্রথমে জলের সৃষ্টি করলেন এবং তাতে শক্তিবীজ নিক্ষেপ করলেন। সে শক্তিবীজ একটি স্বর্ণের অণ্ডে বা ডিম্বে পরিণত হল। সেই অণ্ডের মধ্যে জন্ম নিলেন ব্রহ্মা। এই স্বর্ণের অণ্ডকে হিরণ্যগর্ভও বলা হয়। হিরণ্যগর্ভে জন্ম বলে ব্রহ্মাকেও হিরণ্যগর্ভ বলা হয়। ব্রহ্মা সেই হিরণ্যগর্ভে এক বৎসর বাস করেন। তারপর তিনি ধ্যানবলে ঐ অণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করলেন। ব্রহ্মের অণ্ডের উপরের খণ্ড থেকে স্বর্গলোক এবং নিচের খণ্ড থেকে মর্ত্যলোক বা পৃথিবী সৃষ্টি হল। তারপর ব্রহ্মার ইচ্ছা-শক্তি থেকে মহতত্ত্ব, মহতত্ত্ব থেকে অহংকার এবং অহংকার থেকে পঞ্চ-ভূত, পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় সৃষ্টি হল। পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ-ভূত, মন, বুদ্ধি ও অহংকারের মিশ্রণে উৎপত্তি হল মানুষের। একে একে ব্রহ্মা এই বিশ্বজগতের সবকিছু সৃষ্টি করলেন।

ব্রহ্মার প্রজা সৃষ্টি

    মার্কণ্ডেয়পুরাণে বলা হয়েছে ব্রহ্মার দেহ হতে ক্ষেত্রজা প্রজা এবং মন হতে মানসী প্রজার সৃষ্টি হয়েছে। ভাগবতে পাওয়া যায় ব্রহ্মার দেহ দুভাগ হয়ে দক্ষিণ ভাগ হতে মনু নামক পুরুষ এবং বাম ভাগ হতে শতরূপা নামক নারীর জন্ম হল। এছাড়াও ব্রহ্মার ক্ষেত্র বা দেহ হতে দেবতা, অসুর, যক্ষ, রক্ষ, গান্ধর্ব, কিন্নর, সর্প, ঔষধ, ফলমূল প্রভৃতি জন্মলাভ করে। তাই এরা ব্রহ্মার ক্ষেত্রজা প্রজা। মরীচি, অত্রি, ক্রতু, পুলস্ত্য, পুলহ, অঙ্গিরা, ভৃগু, বশিষ্ট আদি ঋষিগণ এবং সনৎ, সনক, সনন্দন ও সনাতন নামক চার সন্নাসী-পুত্র হলেন ব্রহ্মার মানসপুত্র। ব্রহ্মা কতৃর্ক এরকম ক্ষেত্রজা ও মানসী প্রজার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি প্রজাপতি নামে খ্যাত হলেন।

চণ্ডীতে ব্রহ্মা

    চণ্ডীতে আছে বিষ্ণু কারণ-সমুদ্রে যোগনিদ্রায় নিমগ্ন হলেন। তাঁর নাভী হতে একটি রক্তবর্ণের পদ্ম সৃষ্টি হল এবং ঐ পদ্ম থেকে ব্রহ্মা জন্ম লাভ করেন। ব্রহ্মা সেই পদ্মে উপবিষ্ট হয়ে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করলেন। প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টির পিছনে একটা কার্য-কারণ সম্বন্ধ থাকে। কারণ বিনা কার্য হয় না অর্থাৎ প্রত্যেকটি কার্যের পিছনে একটি কারণ আছে। এই সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন হওয়ার পেছনেও কারণ আছে। কি সে কারণ? ব্রহ্মের বহু হওয়ার বাসনা বা ইচ্ছাই কারণ আর সে কারণের ফলেই সৃষ্টিকার্য সম্পাদিত হয়েছে। ঠিক এজন্য পুরাণে বলা হয়েছে বিষ্ণু কারণ সমুদ্রে শায়িত। বিষ্ণু যোগনিদ্রায় নিমগ্ন এর অর্থ বিষ্ণু নিগুর্ণ ও অব্যক্ত অবস্থায় আছেন। নিগুর্ণ ব্রহ্ম কোন কার্য করেন না অর্থাৎ নিগুর্ণ অবস্থায় ব্রহ্ম সৃষ্টিও করেন না এবং প্রলয়ও করেন না। সুতরাং বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ব্রহ্মের নিগুর্ণ অবস্থাই নির্দেশ করে। কিন্তু সৃষ্টি করার জন্য ব্রহ্মাকে অবশ্যই সগুণ হয়া আবশ্যক। এজন্য নিগুর্ণ ব্রহ্ম থেকে সত্ত্ব ও রজোগুণ সম্পন্ন ব্রহ্মার আবির্ভাব ঘটল। ব্রহ্মা জন্মলাভ করেও কিন্তু পরমাত্না থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন না। এই ভাবটি বোঝানোর জন্য বিষ্ণুর নাভী-কমলে ব্রহ্মার অবস্থান কল্পনা করা হয়েছে। মৃণাল বা পদ্মের বৃন্ত পরমাত্নারূপী বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছে। বিষ্ণুর নাভী থেকে পদ্মের সৃষ্টি হয়েছিল এজন্য বিষ্ণু পদ্মনাভ এবং পদ্ম থেকে ব্রহ্মা সৃষ্টি হয়েছিলেন বলে ব্রহ্মা পদ্মযোনি নামে খ্যাত হলেন। গর্ভস্থ শিশুর নাভীর সাথে তাঁর মায়ের সংযোগ রক্ষার জন্য একটি নাড়ী থাকে যাকে অমরা বলা হয়। চণ্ডীর ঐ রূপক সৃষ্টিতত্ত্বে পদ্মবৃন্তই সেই অমরা যা সগুণ ব্রহ্মা ও নিগুর্ণ বিষ্ণুর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। তাহলে চণ্ডীর সৃষ্টিতত্ত্ব বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করার জন্য নিগুর্ণ ব্রহ্ম হতে সর্বপ্রথম যে গুণের সৃষ্টি হয় তাই ব্রহ্মা।

ব্রহ্মার গুণ

    ব্রহ্মা খুব দয়াময়। শুধু দেবতা আর মানুষ নয়, তিনি দৈত্য, দানব ও অসুরদেরও বরদান করেন। রাবণ, মহিষাসুর প্রভৃতি অসুরেরাও তপস্যাবলে ব্রহ্মা কতৃর্ক বর লাভ করেছিল। পুরাণে সৃষ্টিকার্য ছাড়াও ব্রহ্মার অন্যান্য গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। ব্রহ্মা আয়ুর্বেদ-শাস্ত্রের সৃষ্টিকর্তা। পুরোহিত হিসেবেও তাঁর খ্যাতি আছে। তিনি বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর বিয়ের পুরোহিত ছিলেন। ব্রহ্মপুরাণে উল্লেখ আছে ব্রহ্ম বরুণকে জলের, বিষ্ণুকে আদিত্যগণের, পাবককে বসুগণের, দক্ষকে প্রজাপতিগণের, বাসবকে মরূৎগণের, বাসুকিকে নাগগণের, তক্ষককে সর্পগণের, গরুড়কে পক্ষিগণের এবং শার্দুলকে মৃগগণের অধিপতি করেছিলেন।

ব্রহ্মার শক্তি বা পত্নী

    ব্রহ্মার শক্তি বা পত্নী হলেন সাবিত্রী ও গায়ত্রী । মৎস্য পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মার শক্তি দেবী সরস্বতীও। সেখানে ব্রহ্মার শক্তি হিসেবে শতরূপা, সাবিত্রী, সরস্বতী, গায়ত্রী ও ব্রহ্মাণীর নাম পাওয়া যায়। আসলে মানুষের পত্নী বলতে যা বোঝায় দেবতাদের পত্নী কিন্তু সে রকম নয়। পৃথিবীতে পত্নী যেমন স্বামীর সেবা করে এবং ঘর-সংসার করে, দেবতাদের পত্নী সে রকম নয়। মূলত দেবতাদের পত্নী রূপক বা কাল্পনিক। দেবতা থেকে সৃষ্ট কোন শক্তি বা গুণকে নারী রূপে কল্পনা করা হয়। সেজন্য দেবতা হতে জাত শক্তিকে কখনো পত্নী আবার কখনও কন্যাও বলা হয়। ব্রহ্মার কন্যার নাম সন্ধ্যা। কালিকা পুরাণে আছে যে, ব্রহ্মা তাঁর কন্যা সন্ধ্যাকে কামনা করেন। এই কামনাকে লৌককভাবে চিন্তা করা অনুচিত। ‘ধ্যান’ থেকে যা উৎপত্তি লাভ করে তাই সন্ধ্যা। সন্ধ্যা বলতে মূলত জপ-ধ্যান, মন্ত্র-তন্ত্র, প্রার্থনা প্রভৃতি বোঝায়। এসব মন্ত্র-তন্ত্র ব্রহ্মা কতৃর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং তিনি জপ-ধ্যানে ব্যস্ত থাকেন বলে এসবের প্রতি তাঁর আসক্তি বা কামনা থাকাটা আবশ্যক। সন্ধ্যা তিন প্রকার, যথা প্রাতঃসন্ধ্যা, মধ্যাহ্নসন্ধ্যা ও সায়ংসন্ধ্যা। যে মন্ত্রে ব্রহ্মের ধ্যান করা হয় তা গায়ত্রী ছন্দে রচিত। প্রাতঃকাল মন্ত্র উচ্চারণ ও জপ-ধ্যানের শ্রেষ্ঠ সময়। বস্তুত ব্রহ্ম-মুহুর্ত বা প্রাতঃকালের গায়ত্রীমন্ত্রকে সাবিত্রী বলে। ব্রহ্মা সকল মন্ত্রের অধিপতি আর গায়ত্রী ও সাবিত্রী মন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। তাই গায়ত্রী ও সাবিত্রী ব্রহ্মার শক্তি বা পত্নী রূপে কল্পিত হয়েছে। ব্রহ্মা কতৃর্ক জ্ঞান প্রকাশিত হয়, এজন্য জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকেও তাঁর পত্নী বলা হয়েছে। ব্রহ্মার পূজা খুব একটা দেখা যায় না। তবে বৈশাখী পূর্ণিমায় নদীয়ার শন্তিপুরে ব্রহ্মার পূজা হয়।

ব্রহ্মার ধ্যানমন্ত্র

ব্রহ্মা কমণ্ডলুধরশ্চতুর্বক্রশ্চতুর্ভুজঃ।

কদাচিৎরক্তকমলে হংসারূঢ়ঃ কদাচন।।

বর্ণেন রক্তগৌরাঙ্গঃ প্রাংশুস্তুঙ্গাঙ্গ উন্নতঃ কমণ্ডলুর্বামকরে স্রুবো হস্তে তু দক্ষিণে।

দক্ষিণাধস্তথা মালা বামাধশ্চ তথা স্রুবঃ।

আজ্যস্থালী বামপার্শ্বে বেদাঃ সর্বেহগ্রত স্থিতাঃ।।

সাবিত্রী বামপার্শ্বস্থা দক্ষিণস্থা সরস্বতী।

সর্বে চ ঋষয়োহ্যগ্রে কুর্যাদেভিশ্চ চিন্তনম।।

ব্রহ্মার প্রণাম মন্ত্র

নমোওস্তু বিশ্বেশ্বর বিশ্বধাম জগত্সবিত্রে ভগবন্নমস্তে ।

সপ্তার্চিলোকায় চ ভূতলেশ সর্বান্তরস্থায় নমো নমস্তে ॥


এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

অষ্টাঙ্গ যোগ
হিন্দুদের চতুরাশ্রম 
পূজা পদ্ধতি
ঈশ্বরতত্ত্ব 
বৈদিক যজ্ঞ 
রামায়ণের কাহিনী 
মহাভারতের কাহিনী 
অদ্বৈতবাদ ও দ্বৈতবাদ 
মহাপুরাণ 
হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ খাদ্য ও ভোজনবিধি 
দেবী দুর্গার স্বরূপ 
হিন্দুধর্মে সৃষ্টিতত্ত্ব 
হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র 
নবপত্রিকা ও কলাবৌ 
হিন্দু দেবতা 
সৌর ও গাণপত্য 
গীতা, চণ্ডী ও মনুসংহিতা 
উপনিষদ বা বেদান্ত 
শারদীয় দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি



0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন