7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১০ জানুয়ারী, ২০২২

বৈদিক দেবতা

বৈদিক দেবতা

 সূর্য

সূর্য ব্যতীত আমাদের প্রাত্যহিক জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। সূর্যের আলোই আমরা জগৎ দেখি। সূর্যের আলোর দ্বারা প্রস্তুতকৃত খাদ্যে উদ্ভদকুল জীবন-ধারণ করে। সেই উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত শস্য আহার করে মানুষ জীবন-ধারণ করে। তাই বলা যায় সূর্যই আমাদের পালনকর্তা। কিন্তু পুরাণ মতে ভগবান বিষ্ণু পালনকর্তা হিসেবে খ্যাত। তবে সূর্যকে কি পালনকর্তা বলা যায়? সূর্যকেও পালনকর্তা বলা যায় কারণ বেদে সূর্য ও বিষ্ণু একই দেবতা। ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলের ৯৯ নং সূক্তের ২য় ঋকে বলা হয়েছে “হে বিষ্ণু তুমি পৃথিবীর পূর্বদিক ধারণ করেছ”। ঋগ্বেদের অন্যত্র বিষ্ণুর তিনটি পাদ-বিক্ষেপের উল্লেখ আছে। সূর্য উদয়ের সময় পূর্ব-আকাশে প্রথম পাদ-বিক্ষেপ, মধ্য আকাশে স্থিতির সময় দ্বিতীয় পাদ-বিক্ষেপ এবং অস্তাচলে অস্ত যাওয়ার সময় তৃতীয় পাদ-বিক্ষেপের কথা ঋগ্বেদে বলা হয়েছে। তাই বেদ অনুসারে বিষ্ণু ও সূর্য পৃথক দেবতা নন। পূষা, সবিতা, আদিত্য, বিবস্বান প্রভৃতি নামেও সূর্য পরিচিত। সূর্য দেবতা খুব দয়াময়। সূর্যকে স্তুতি করলে ধবল, ছউদ, দাউদ প্রভৃতি চিত্রপীড়া হতে মুক্তি পাওয়া যায়। ধবল বা শ্বেতি রোগ হতে মুক্তির জন্য ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ৫০ নং সূক্ত পাঠ করতে হয়। কথিত আছে, প্রস্কন ঋষি সূর্যের স্তুতি করে শ্বেতি রোগ হতে মুক্তি লাভ করেছিলেন। সূর্যের স্তুতি করে কৃষ্ণ-পুত্র শাম্বেরও রোগমুক্তি ঘটেছিল। শাম্বের দুরারোগ্য ব্যাধি কিছুতেই সারছে না এমন সময় একদিন সূর্য স্বপ্নে এসে তাকে বললেন যে, তাঁর এক হাজার নাম জপ করতে। কিন্তু শাম্ব অসুস্থতা হেতু এক হাজার নাম জপ করতে অপরাগতা প্রকাশ করায় সূর্য তাঁর একুশটি নাম জপের নির্দেশ দিলেন। বিবর্তন, বিবস্বান, মার্তণ্ড, ভাস্কর, রবি, লোকপ্রকাশক, শ্রীমান, লোকচক্ষু, গ্রহেশ্বর, লোকসাক্ষী, ত্রিলোকেশ, কর্তা, হর্তা, তমিস্রহা, তপন, তাপন, শুচি, সপ্তাশ্ববাহন, গভস্তি, ব্রহ্মা এবং সর্বদেব এই একুশটি নাম জপ করে শাম্ব রোগ-মুক্ত হন।

বৈদিক দেবতা

    ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৬৪ নং সূক্তে বলা হয়েছে আদিত্য সমস্ত জগৎকে আশ্রয় করে আছেন। আদিত্য ছয় লোক সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সূর্য থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে। ঋগ্বেদেও একথা উল্লেখ আছে। সূর্য বা সবিতা দ্যাবাপৃথিবীকে প্রসব করেছেন এজন্য সবিতাকে বলা হয়েছে প্রসবকারী। ৭ম মণ্ডলের ৯৯ নং সূক্তের ৩য় ঋকে আছে সূর্য (বিষ্ণু) ময়ূখ বা কিরণ দ্বারা দ্যাবাপৃথিবীকে (আকাশ ও পৃথিবী) ধারণ করেছেন। ৬ষ্ঠ মণ্ডলের ৩২ নং সূক্তে বলা হয়েছে সূর্য দক্ষিণ অয়নে বারি-রাশি বিমুক্ত করে বর্ষাকাল সৃষ্টি করেন।

    বেদ অনুসারে ঊষা সূর্যের স্ত্রী। পুরাণ মতে তাঁর কন্যার নাম সূর্যা এবং পুত্রের নাম শনি। ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৮৫ নং সূক্তে সূর্যার সাথে অশ্বিদ্বয়ের বিবাহের উল্লেখ আছে যা বিবাহ সূক্ত নামে পরিচিত। ঋগ্বেদের ৫ম মণ্ডলের ৪০ নং সূক্তে সূর্য-গ্রহণের উল্লেখ আছে স্বর্ভানু অন্ধকার দ্বারা সূর্যকে গ্রাস করে যা সূর্য-গ্রহণ নামে পরিচিত। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, সূর্য-গ্রহণের সময় অত্রি ঋষি দেবতাদের অর্চনা করে অন্তরীক্ষে সূর্যের চক্ষু স্থাপন করেন। ফলে স্বভানুর মায়া দূর হয় এবং অন্ধকার কেটে যায়। তবে পুরাণ মতে স্বভানু নয়, রাহু সূর্যকে গ্রাস করে। বিষ্ণু যখন সমুদ্র-মন্থনে উঠে আসা অমৃত দেবতাদের পরিবেশন করছিলেন তখন রাহু দেবতাদের বেশে অমৃত পান করছিল। কিন্তু সূর্য ও চন্দ্র তা বুঝে ফেলেন এবং রাহুর এ দুরাভিসন্দির কথা দেবতাদের নিকট প্রকাশ করেন। বিষ্ণু তখন রাহুর মস্তক ছেদন করেন। এ কারণে রাহু সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে। কিন্তু গ্রাস করলেও পূর্ণ ভোজন করতে পারেন না কারণ রাহুর দেহ নেই, শুধু মুণ্ড আছে। ফলে রাহু সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করলেও তার ছিন্নমুণ্ড থেকে তাঁরা সহজেই বহির্গত হয়ে যান।

    ঋগ্বেদের ৫ম মণ্ডলের ৩১ নং সূক্তে আছে সূর্য গোলাকার এবং তাঁর রথ এক চক্রবিশিষ্ট। অরুষ নামের সাতটি অশ্ব দ্বারা সে রথ চালিত হয়। সূর্যের সাতটি অশ্ব থাকার এক গভীর তাৎপর্য রয়েছে। বেদে সূর্যের সাতটি রশ্মিকে সাতটি অশ্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সূর্যের বাহন অশ্ব হওয়ার পেছনেও যুক্তি আছে। সূর্য তেজী, শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী। প্রাণীদের মধ্যে অশ্বেরও এসব গুণ বিদ্যমান। তাই অশ্বই সূর্যের বাহন হিসেবে যথার্থ।

    পুরাণে সূর্যের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। পুরাণ মতে সূর্য কশ্যপের পুত্র। তাঁর বর্ণ রক্তজবা ফুলের মত। সূর্য রক্তকমলে সমাসীন। তাঁর এক হাতে পদ্ম এবং অন্য হাতে অভয় মুদ্রা। সূর্য মাণিক্যমৌলি (রত্নখচিত মুকুটবিশিষ্ট) এবং তিন চক্ষুবিশিষ্ট। পুরাণে বিষ্ণু ও সূর্য পৃথকভাবে কল্পিত এবং সূর্য হলেন বিষ্ণুর তেজঃস্বরূপ। সূর্য জগৎ-প্রকাশক এবং সকল বস্তুর প্রাণ স্বরূপ। সূর্যকে মাণিক্যমৌলি বলার একটা কারণ আছে। আসলে মণি-মাণিক্য উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান। গ্রহ-নক্ষত্রও উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান। এই গ্রহ-নক্ষত্রই যেন সূর্যের মণি-মাণিক্যযুক্ত অলঙ্কার সরূপ। এছাড়াও সূর্যর কেয়ুর (তাগা) এবং অঙ্গদ (বলয়) নামক অলঙ্কার রয়েছে। মূলত সূর্যের অঙ্গভূষণের দ্বারা সমগ্র সৌরজগতের রূপ কল্পিত হয়েছে।

 

বায়ু পুরাণে আছে সূর্য প্রথমে অণ্ড বা ডিম্বরূপে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বহুকাল অতিবাহিত হওয়ার পরও অণ্ড না ফুটলে ত্বষ্টা সে অণ্ডকে চূর্ণ করে ফেলেন। সূর্যের পিতা কশ্যপ এ ঘটনায় মর্মাহত হয়ে বলেন “এ অণ্ড মরেনি”। তারপর থেকে সূর্য মার্তণ্ড হিসেবে খ্যাত হন। সূর্য হতে সূর্যবংশের সৃষ্টি হয় এবং রামচন্দ্র ছিলেন সূর্যবংশের রাজা। রামায়ণে রামচন্দ্র কতৃর্ক সূর্যস্তব করার কথা পাওয়া যায়। মহাভারতে সূর্যের বরে কুন্তী এক পুত্র লাভ করেন যিনি কর্ণ নামে খ্যাত হন। ব্রহ্ম পুরাণ মতে আদিত্য বা সূর্যই ক্ষণ, মুহূর্ত, দিবস, নিশা, পক্ষ, মাস, সম্বৎসর, ঋতু ও যুগ সৃষ্টির কারণ। পুরাণে এ কথাও আছে যে, দ্বাদশ আদিত্ব দ্বাদশ মাসে ক্রিয়া করেন। তন্মধ্যে অর্যমা বৈশাখে, বিবস্বান জৈষ্ঠে, অংশুমান আষাঢ়ে, পর্জন্য শ্রাবণে, বরুণ ভাদ্রে, ইন্দ্র আশ্বিনে, ধাতা কার্তিকে, জয়ন্ত অগ্রহায়ণে, পূষা পৌষে, মিত্র মাঘে, ত্বষ্টা ফাল্গুনে এবং বিষ্ণু চৈত্রে তাপ প্রদান করেন।

    এবার আসা যাক সূর্যপূজা প্রসঙ্গে। প্রত্যেক দেবতার পূজার সময় সূর্যার্ঘ্য দান ও সূর্যপূজা করা হয়। ব্রহ্ম পুরাণ মতে, যে ব্যক্তি ভক্তি সহকারে একাহারী হয়ে ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যকে অর্চনা করেন অথবা যে ব্যক্তি অষ্টমী তিথিতে অহোরাত্র উপবাস থেকে সূর্যকে পূজা করেন, তারা সকলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন। আবার বলা হয়েছে সপ্তমী তিথিতে উপবাসপূর্বক উপহার সামগ্রী দ্বারা সূর্যকে পূজা করলে পাপশূন্য হয়ে সূর্যলোকে যাওয়া যায়।

অশ্বিদ্বয়

    ঋগ্বেদ অনুসারে বিবস্বানের ঔরসে সরণ্যুর গর্ভে অশ্বিদ্বয় জন্মগ্রহণ করেন। যমজ বলে তাঁদের নাম হয়েছে অশ্বিনৌ বা অশ্বিদ্বয়। পুরাণ মতে অশ্বিদ্বয় হলেন স¦র্গবদ্য বা চিকিৎসক। বেদেও তাঁদের চিকিৎসক রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। সূর্যকন্যা সূর্যা হলেন অশ্বিদ্বয়ের পত্নী। অশ্বিদ্বয়ের সূর্যাকে লাভ করার একটি ইতিহাস আছে। সকল দেবতাই সূর্যাকে পেতে চাইলেন। তাই সূর্য তাঁর কন্যা সূর্যার পতি নির্বাচন করার জন্য এক ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করলেন। সে প্রতিযোগিতায় অশ্বিদ্বয় জয়ী হয়ে সূর্যাকে পত্নী রূপে লাভ করেন। অশ্বিদ্বয় দধীচি মুনির নিকট হতে সুকৌশলে প্রবগ্যবিদ্যা ও মধুবিদ্যা অর্জন করেন। এই বিদ্যা ইন্দ্র দধীচি মুনিকে শিখিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন “যদি এ বিদ্যা অন্য কাউকে বলতো তোমার শিরচ্ছেদ করব”। কিন্তু অশ্বিদ্বয় দধীচির নিকট সব বিদ্যা কৌশলে শিখে নেন এবং তাঁর মস্তক ছিন্ন করে অশ্বের মস্তক লাগিয়ে দেন। ইন্দ্র তা জানতে পেরে অশ্বিদ্বয় কতৃর্ক লাগানো দধীচির অশ্ব-মস্তক কেটে ফেলেন এবং শর্যনাবৎ সরোবরে নিক্ষেপ করেন। পরে অশ্বিদ্বয় দধীচিকে পুনরায় মানুষের মস্তক লাগিয়ে দেন।

    রোগাক্রান্ত চ্যবণমুণি অশ্বিদ্বয়ের কৃপায় রোগমুক্ত হয়েছিলেন। অশ্বিদ্বয় কক্ষীবানের কন্যা ঘোষাকে কুষ্ঠ ব্যাধী হতে মুক্ত করেন। ঋজ্রাশ্ব তাঁর পিতার অভিশাপে অন্ধ হয়ে গেলে অশ্বিদ্বয় তাঁর দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। বন্দন নামক ঋষি অসুর কতৃর্ক কূপে নিক্ষিপ্ত হলে অশ্বীদ্বয় তাঁকে কূপ হতে উদ্ধার করেন। রেখ ঋষিকে অসুরেরা কূপে ফেলে দিলে দশ রাত নয় দিন অশ্বীদ্বয়কে স্মরণ করে দশম দিনে তিনি কূপ হতে উদ্ধার পেলেন। যুদ্ধে খেল রাজার স্ত্রী বিশ্পলার একটি পা ছিন্ন হলে রাজার পুরোহিত অর্গস্ত্য বিশ্পলাকে অশ্বিদ্বয়ের স্তুতি করতে বলেন। বিশ্পলা তাঁদের স্তুতি করে লোহার পা লাভ করেন। একদিন গোতম ঋষি মরুভূমিতে ছিলেন, তখন অশ্বিদ্বয় অন্য দেশের একটি কূপ উঠিয়ে সেখানে স্থাপন করলেন এবং গোতম ঋষির তৃষ্ণা মেটালেন। তুগ্র নামক রাজর্ষি শক্রদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সেনাপতি বুজ্যুকে সমুদ্রপথে নৌকায় প্রেরণ করলেন। সমুদ্রে অনেক দূর গিয়ে নৌকা ভেঙে যায়। ভুজ্যু অশ্বিদ্বয়ের স্মরণ করলে অশ্বীদ্বয় তাঁকে তিন-দিন তিন-রাতে রাজা তুগ্রের নিকট পৌছে দেয়। বিমদ নামক ঋষি স্বয়ংবরের মাধ্যমে এক কন্যা লাভ করলে অন্যান্য রাজারা তাঁকে আক্রমন করে। অশ্বীদ্বয় ঋষিকে জয়লাভে সাহায্য করেন এবং কন্যাকে তাঁর নিকট পৌছে দেন।

    পুরাণে অশ্বিনীর জন্মবৃত্তান্ত একটু ভিন্নতর। সূর্য বিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞাকে বিবাহ করেন। কিন্তু সংজ্ঞা সূর্যের তেজ সহ্য করতে পারেন না। তাই সংজ্ঞা তাঁর দেহ হতে ছায়া নামক এক নারীকে নির্গত করেন এবং সূর্যের নিকট হতে চলে এসে অশ্বিনী রূপ ধারণ করে উত্তর-কুরুবর্ষে বিচরণ করতে লাগলেন। সূর্য তা জানতে পেরে অশ্ব রূপ ধারণ করে সেখানে যান এবং সেই অশ্বিনীরূপী সংজ্ঞার সাথে মিলিত হন। পরে সংজ্ঞা দুটি যমজ পুত্রের জন্ম দেন এবং তাঁরাই হলেন অশ্বিদ্বয়। মহাভারতে আছে অশ্বিদ্বয়ের বরে মাদ্রীর গর্ভে নকুল ও সহদেব নামের দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়।

বরুণ

বরুণ হলেন জলের দেবতা। ঋগ্বেদের অনেক সূক্তে মিত্র ও বরুণকে একই সাথে স্তুতি করা হয়েছে। মিত্র হলেন দিবাভাগের সূর্য। “বরুণ” শব্দটি এসেছে “ধৃ” ধাতু থেকে যার অর্থ আবরণকারী। তাই বরুণ অর্থ অবরণকারী রাতের আকাশ। প্রাচীন ঋষিরা আকাশকে জলময় কল্পনা করতেন। আকাশকে অবরণকারী সে জলরাশিই হল বরুণদেব। রাতেই বরুণ দেবতা অধিক ক্রিয়াশীল হন। আকাশে জলের অস্তিত্ব আছে ইহা রাতেই বেশি উপলব্ধি করা যায়। সূর্যের তাপে পৃথিবীর জল বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে চলে যায়। রাতে সূর্যের উত্তাপ কম থাকে বলে আকাশের জলরাশি ঘণীভূত হয়ে শিশির উৎপন্ন করে এবং তা পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত হয়। যেহেতু আকাশে জলরাশির অস্তিত্ব রাতেই বেশী অনুভূত হয় তাই বরুণ হলেন রাতের দেবতা। বেদে আছে বরুণদেব মানুষের উদরাময় রোগ সৃষ্টি করেন এবং তিনিই ঐ রোগ হতে মুক্ত করেন। বরুণ দশদিকপালের একজন এবং তিনি পশ্চিম দিকের অধিপতি। পুরাণ মতে বরুণ সমুদ্র-মন্থনে উঠে আসা বারুণী নামক সুরা পান করেন। মহাভারতে পাওয়া যায় খাণ্ডব-দহনের সময় বরুণ অগ্নিকে সাহায্য করার জন্য চন্দ্রপ্রদত্ত গাণ্ডীব ধনু অর্জুনকে এবং কৌমোদকী নামক গদা শ্রীকৃষ্ণকে প্রদান করেন। ঋগ্বেদে ঋষিগণ বরুণের নিকট যে প্রার্থনা জানিয়েছেন, তা অতি উদার। ঋগ্বেদের ৫ম মণ্ডলের ৬৪ নং সূক্তে বরুণের নিকট সদ্গতি লাভের জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এছাড়াও ৫ম মণ্ডলের ৭০ নং সূক্তে আছে “হে মিত্রাবরুণ আমরা যেন নিজেদের অথবা পুত্র-পৌত্রাদিগণের সাথে কখনও তোমরা ব্যতীত অন্যের বদন্যতার উপর নির্ভর না করি। আবার অন্যত্র বরুণদেবের নিকট প্রার্থনা জানানো হয়েছে “হে বরুণ, যদি আমরা কখনও কোন দাতা, মিত্র, বয়স্য, ভ্রাতা, নিকট প্রতিবেশী বা মূকের প্রতি কোন অপরাধ করে থাকি, তাহলে তা নষ্ট কর”।

বায়ু

    বেদের বায়ু পুরাণে পবনদেব নামে পরিচিত। “বা” ধাতু থেকে বায়ু শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ‘বা’ধাতুর অর্থ সর্বত্র সর্বক্ষণ সুখে প্রবাহমান। বায়ু ব্যতীত কোন প্রাণীর জীবনধারণ অসম্ভব। বায়ু যখন প্রবল ও উন্মত্ত রূপ ধারণ করেন তখন তিনি মরুৎ নামে খ্যাত হন। অর্থাৎ মরুৎ হলেন ঝড়ের দেবতা। বেদে রূদ্রের সন্তান মুরুৎগণকে আবার সগ্বের্র গায়ক রপেও পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ৮৫ নং সূক্তের ১০ ঋকে মরুৎগণের বীণা বাজানোর কথা উল্লেখ আছে। ঋষিরা কল্পনা করেছেন, ঝড়ের সময় চারিদিকে যে গর্জন শোনা যায়, এটাই বোধ হয় স্বর্গের গান-বাজনা। রামায়ণে বায়ু হলেন হনুমানের পিতা। সুমেরু পর্বতে বায়ুর ঔরসে অঞ্জনার গর্ভে হনুমানের জন্ম হয়। আবার মহাভারতে আছে, বায়ুর ঔরসে কুন্তীর গর্ভে ভীমের জন্ম। বেদে বায়ুর বাহন অশ্ব। 

ঊষা

    সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রকৃতি যে সৌম্য মূর্তি ধারণ করে তাকেই বৈদিক ঋষিরা ঊষা দেবী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ঊষা জ্যোতির্বসনা, চির-যৌবনা ও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী। ঋগ্বেবেদে ঊষাকে বলা হয়েছে সূর্যের প্রণয়িনী বা স্ত্রী। ঊষাদেবী অজুর্নী, দহনা, সরণ্যু, সরমা প্রভৃতি নামেও পরিচিতা। বিবস্বানের ঔরসে ঊষার গর্ভে অশ্বিদ্বয়ের জন্ম হয়। এর একটা তাৎপর্য আছে। বিবস্বান বা সূর্য যখন ভালভাবে প্রকাশিত হয় না তখন ঊষাদেবী আকাশে অবস্থান করেন। আস্তে আস্তে সূর্য প্রকাশিত হতে থাকে এবং ঊষা চলে যেতে থাকে। এই সূর্য ও ঊষার মিলিত ক্রিয়ায় প্রভাত রূপ অশ্বিদ্বয়ের জন্ম। যেহেতু সূর্য ও ঊষার মিলিত ক্রিয়ায় প্রভাত রূপ অশ্বিদ্বয় জন্মলাভ করে সেহেতু অশ্বিদ্বয়ের পিতা-মাতা রূপে সূর্য ও ঊষাকে কল্পনা করা হয়েছে। ঊষাদেবী তুষ্ট হলে ধন-সম্পদ দান করেন, পৃথিবীকে শস্যপূর্ণা করে তোলেন, ঊষা রাত্রির অন্ধকার দূর করেন এবং জীব জগৎকে জাগিয়ে তোলেন। জপ, ধ্যান, সাধনা প্রভৃতির জন্য ঊষা কালই শ্রেষ্ঠ।

এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

অষ্টাঙ্গ যোগ
হিন্দুদের চতুরাশ্রম 
পূজা পদ্ধতি
ঈশ্বরতত্ত্ব 
বৈদিক যজ্ঞ 
রামায়ণের কাহিনী 
মহাভারতের কাহিনী 
অদ্বৈতবাদ ও দ্বৈতবাদ 
মহাপুরাণ 
হিন্দুধর্মে নিষিদ্ধ খাদ্য ও ভোজনবিধি 
দেবী দুর্গার স্বরূপ 
হিন্দুধর্মে সৃষ্টিতত্ত্ব 
হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র 
নবপত্রিকা ও কলাবৌ 
হিন্দু দেবতা 
সৌর ও গাণপত্য 
গীতা, চণ্ডী ও মনুসংহিতা 
উপনিষদ বা বেদান্ত 
শারদীয় দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন