7/Slider/slider-tag <center><div id='bp_recent'></div><div class='bp_footer'><small><a id='bp_recent_link' target='_blank' href='http://www.bloggerplugins.org/2011/09/recent-posts-thumbnails-blogger-widget.html?utm_src=bp_recent' style='padding: 1px 0px 0px 19px;text-decoration:none;'><a href='http://www.bloggerplugins.org/?utm_src=bp_recent' target='_blank' title='blogger widgets'></a></a></small></div> <script style='text/javascript' src='http://bloggergadgets.googlecode.com/files/recentposts_orig.js'></script> <script style='text/javascript'> var numberOfPosts = 5; var showPostDate = false; var showSummary = false; var titleLength = 0; var showCommentCount = false; var showThumbs = true; var showNoImage = true; var imgDim = 125; var imgFloat = 'left'; var myMargin = 5; var mediaThumbsOnly = true; var showReadMore = false; </script> <script src='https://hindudarshon.blogspot.com/feeds/posts/default?max-results=5&orderby=published&alt=json-in-script&callback=bprecentpostswiththumbnails'> </script></center>

পৃষ্ঠাসমূহ

১৯ জানুয়ারী, ২০২২

জ্ঞান যোগ কি

জ্ঞান যোগ কি

জ্ঞান বিচারের দ্বারা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়াই জ্ঞান যোগ। জ্ঞান মানুষকে পবিত্র করে এবং মনের পশুসত্ত্বাকে দমন করে দেবত্বকে জাগিয়ে তোলে। গীতায় ৪র্থ অধ্যায়ের ৩৮ নং শ্লোকে আছে “ন হি জ্ঞানেন সদৃশ্যং পবিত্রমিহ বিদ্যতে। তৎ স্বয়ং যোগাসংসিদ্দঃ কালেনাত্মনি বিন্দতি।।” অর্থাৎ ইহলোকে জ্ঞানের ন্যায় পবিত্র আর কিছু নাই। কর্মযোগে সিদ্ধ পুরুষ সেই জ্ঞান কাল সহকারে আপনিই অন্তরে লাভ করেন। গীতায় আরো বলা হয়েছে যে, “শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ। জ্ঞানং লব্ধা পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি।।” অর্থাৎ যিনি শ্রদ্ধাবান, একনিষ্ঠ, সাধন-তৎপর এবং জিতেন্দ্রিয় তিনিই জ্ঞানলাভ করেন। আত্মাজ্ঞান লাভ করে অচিরেই পরম শান্তি লাভ করেন।

জ্ঞানযোগ

জ্ঞান যোগের প্রকারভেদ

জগতে দুই প্রকার বিদ্যা বা জ্ঞান রয়েছে। যথা পরা বিদ্যা ও অপরা বিদ্যা। জাগতিক বিষয় সম্পর্কিত বিদ্যাকে অপরাবিদ্যা বলে। যেমন ধনুর্বিদ্যা, মধুবিদ্যা প্রভৃতি। ঈশ্বর বা ব্রহ্ম সম্পর্কিত বিদ্যাকে পরাবিদ্যা বলে। প্রকৃতপক্ষে বেদান্ত পাঠের মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করা হয়, তাই পরাবিদ্যা। অপরাবিদ্যা থেকে পরাবিদ্যা শ্রেষ্ঠ এবং পরা বিদ্যা অজর্নই জ্ঞানযোগীর প্রকৃত উদ্দেশ্য।

জ্ঞান যোগের স্তর

জ্ঞান লাভ একবারে হয় না। জ্ঞান লাভের বিভিন্ন স্তর বা সোপান রয়েছে। যোগাবাশিষ্ট নামক গ্রন্থে বশিষ্ট মুনি জ্ঞানের সাত প্রকার অবস্থার কথা বলেছেন। ঐ সাত প্রকার অবস্থাকে ভূমিকা বলে। এই সাত প্রকার ভূমিকা (অবস্থা বা স্তর) হল শুভেচ্ছা, বিচারণা, তনুমানসা, অসংসক্তিকা, সত্ত্বাপত্তি, পরার্থভাবিনী ও তুর্যগা। শম-দমাদি সাধন বা ইন্দ্রিয় সংযমের ফলে মুক্তি লাভের যে ইচ্ছা জন্মে তাই শুভেচ্ছা। এ স্তরে আমি জ্ঞান লাভ করছি এরকম বোধ জন্মায়। আত্মার কথা শ্রবণ-মনন প্রভৃতি করার ফলে যে বিচারবোধ জন্মায় তাই বিচারণা। যা জানার ছিল তা জেনেছি, আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই, বিচারণা স্তরে জ্ঞানীর এ রকম উপলব্ধি আসে। তনুমানসা বলতে বিষয়-বাসনা ত্যাগ করে শ্রুত অর্থের নিরন্তর চিন্তার দ্বারা সৎ স্বরূপে অবস্থিত হওয়া বোঝায়। সোজা কথায় অন্তরের সত্যকে উপলব্ধি করাই তনুমনসা। জ্ঞানের এই স্তরে জ্ঞানীর উপলব্ধি হবে যা সত্য তা বাইরে নেই, এতদিন অপরের নিকট যে সত্যকে অনুসন্ধান করেছি তা বৃথা অর্থাৎ সত্য আমার ভিতরেই রয়েছে। “আমিই ব্রহ্ম” এমন অপরোক্ষ জ্ঞান যে স্তরে হয়, তাকে অসংসক্তিকা বলে। যে জ্ঞান লাভ করলে সর্ববিষয়ে অনাসক্তি আসে তাকে সত্ত্বাপত্তি বলে। জ্ঞানের যে স্তরে পরব্রহ্ম ব্যতীত অন্য কোন ভাবনা আসে না, তাকে পরার্থভাবিনী বলে। এ অবস্থায় চিত্ত পরব্রহ্মে লয় হয়। জ্ঞানীর যে অবস্থায় নিজ হতে বা অপর হতে কোন রকম চিত্তে চাঞ্চল্য আসে না সে অবস্থাকে তুর্যগা বলে। এই অবস্থায় জ্ঞানীর পূর্ণ জ্ঞান লাভ হয়। জ্ঞানী তখন শান্ত, সদানন্দ ও জীবন্মুক্ত হন। ব্রহ্মজ্ঞান বা আত্মজ্ঞান, প্রকৃতি-পুরুষ সম্পর্কিত জ্ঞান প্রভৃতি তত্ত্বজ্ঞান সম্যকভাবে লাভ করতে পারলেই জ্ঞান যোগী হওয়া যায়।

জ্ঞান যোগ ও প্রকৃতি-পুরুষ

এবার জ্ঞানযোগের সংশ্লিষ্ট সৃষ্টি ও প্রকৃতি-পুরুষ সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করা যাক। সৃষ্টির আদিতে পরব্রহ্ম বহু হবার চিন্তা করলেন। তখন পরব্রহ্ম থেকে প্রথমে ত্রিগুণাত্বিকা প্রকৃতি ও পুরুষ সৃষ্টি হল। সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণবিশিষ্টা প্রকৃতিই ত্রিগুণাত্নিকা প্রকৃতি। এই প্রকৃতিকে ব্রহ্মের শক্তিও বলা হয়। এই ত্রিগুণাত্নিকা প্রকৃতি ব্রহ্মের মায়াও বটে। ব্রহ্মের যে চৈতন্যময় সত্ত্বা নিগুর্ণ, নিরাকার ও নির্বিকার, তাই পুরুষ। পুরুষ ও প্রকৃতিকে পৃথক মনে হলেও এরা কিন্তু অভিন্ন। প্রকৃতি ছাড়া পুরুষ কার্য সম্পাদন করতে পারে না আবার প্রকৃতিও পুরষের আশ্রয় ছাড়া নিষ্কৃয়। তাই প্রকৃতিকে পুরুষ থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়। পুরুষের আরও একটি সংজ্ঞা আছে, যথা যিনি দেহপুরে বাস করেন তিনিই পুরুষ। অথার্ৎ দেহস্থ আত্মাই হল পুরুষ আর ঐ আত্মার শক্তিই হল প্রকৃতি।

জ্ঞান যোগ ও সৃষ্টিতত্ত্ব

জ্ঞান যোগ : অহংকার সৃষ্টি

প্রকৃতি হতে প্রথমে মহতত্ত্ব সৃষ্টি হল। মহতত্ত্বকে বুদ্ধি তত্ত্বও বলা হয়। মহতত্ত্বের উপর ত্রিগুণ ক্রিয়া করে এবং দ্রব্য-ক্রিয়া-জ্ঞান যোগ হয়ে সৃষ্টি হল অহংকারের। সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণ ভেদে অহংকার তিন প্রকার। তামসিক অহংকার হতে দ্রব্যের, রাজস অহংকার থেকে ক্রিয়ার এবং সাত্ত্বিক অহংকার থেকে জ্ঞানের উপলব্ধি হয়। তামসিক অহংকার হতে সৃষ্টি হয়েছে পঞ্চ-সূক্ষ্মভূত ও পঞ্চ-তন্মাত্র।

জ্ঞান যোগ : পঞ্চভূত ও পঞ্চতন্মাত্র সৃষ্টি

ক্ষিতি (মাটি), অপ (জল), তেজ (আগুন), মরুৎ (বায়ু) ও ব্যোম (আকাশ) এই পাঁচটি পদার্থকে সূক্ষ্মভূত বা অপঞ্চীকৃত মহাভূত বলে। এই পাঁচটি সূক্ষ্মভূতের যে গুণ রয়েছে, তাকে তন্মাত্র বলে। পঞ্চ-ভূতের শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ এই পঞ্চ-গুণই পঞ্চ-তন্মাত্র। পঞ্চ সূক্ষ্মভূতের মধ্যে আকাশ থেকে বায়ু, বায়ু থেকে আগুন, আগুন থেকে জল এবং জল থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। আকাশের গুণ শব্দ, বায়ুর গুণ শব্দ ও স্পর্শ, আগুনের গুণ শব্দ, স্পর্শ ও রূপ, জলের গুণ শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস এবং পৃথিবী বা মাটির গুণ গন্ধ। পঞ্চ-সূক্ষ্মভূত পঞ্চীকরণের মাধ্যমে পঞ্চ-মহাভূতে পরিণত হয়। 

জ্ঞান যোগ : পঞ্চ-জানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় সৃষ্টি

রাজসিক অহংকার থেকে পঞ্চ-জানেন্দ্রিয়, পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় ও মন সৃষ্টি হয়। চক্ষু, শ্রোত্র (কর্ণ), নাসিকা, রসনা (জিহ্বা) ও ত্বককে একত্রে পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয় বলে। বাক (মুখ), পাণি (হাত) পদ, পায়ু (মলদ্বার) ও উপস্থ (জননেন্দ্রিয়) এই পাঁচটিকে পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় বলে। প্রাণ, অপাণ, ব্যান, সমান ও উদান এ পঞ্চ-বায়ু বা পঞ্চ-প্রাণও রাজসিক অহংকার থেকে সৃষ্টি হয়। সাত্ত্বিক অহংকার থেকে উৎপন্ন হয় পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠাত্রী চন্দ্র, মিত্র, বরুণ, ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ। পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়ের কর্ণের দেবতা দিক, চক্ষুর দেবতা সূর্য, নাসিকার দেবতা অশ্বিদ্বয়, জিহ্বার দেবতা বরুণ এবং ত্বকের দেবতা বায়ু।

জ্ঞান যোগ : সূক্ষ্মশরীর বা লিঙ্গশরীর সৃষ্টি

পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ-বায়ু, মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার নিয়ে সূক্ষ্মশরীর বা লিঙ্গশরীর গঠিত। মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার এই চারটি বস্তুকে একত্রে অন্তঃকরণ বলে। বেদান্তসার গ্রন্থে আছে, অন্তঃকরণের নিশ্চয়াত্মক বৃত্তিকে বুদ্ধি বলে। অর্থাৎ যা থেকে কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত বা সঠিক ধারণা জন্মে তাই বুদ্ধি। মন হল সঙ্কল্প ও বিকল্পাত্মক অন্তঃকরণ বৃত্তি। সঙ্কল্প ও বিকল্পাত্মক অন্তঃকরণ বলতে বোঝায় প্রথমে একটি বিষয় সঠিক হয়েছে ভেবে পরক্ষণেই সঠিক হয়নি এমন ভাবা। মন অস্থির কিন্তু বুদ্ধি স্থির। অনুসন্ধান বা স্মরণাত্মক অন্তঃকরণ বৃত্তিকে চিত্ত বলে। চিত্তের মাধ্যমে অতীতের কোন ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। আমি-আমি এরকম অভিমান রূপ অন্তঃকরণ-বৃত্তিকে অহংকার বলে।

জ্ঞান যোগ : জগৎ ও ব্রহ্ম সম্পর্কিত জ্ঞান

জ্ঞানযোগীকে অবশ্যই জগৎ ও ব্রহ্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে। ব্রহ্ম অনন্ত অসীম, নিরাকার, নির্বিকার পক্ষান্তরে জগৎ সসীম, সাকার ও পরিণামী। একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং এই জগৎ প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা কিন্তু মায়ার কারণে জগৎকে সত্য বলে মনে হয়। মায়াই ব্রহ্ম ও জগতের মধ্যে ভেদজ্ঞানসৃষ্টি করে। ধারা যাক, জগৎ ও ব্রহ্মের মধ্যে একটি অদৃশ্য কাঁচের আবরণ রয়েছে। কাঁচ স্বচ্ছ হলে সহজেই জগৎ থেকে ব্রহ্মকে দেখা যাবে। কিন্তু কাঁচ অস্বচ্ছ হলে জগৎ থেকে ব্রহ্মকে দেখা যাবে না। মায়াই যেন ঐ অস্বচ্ছ কাঁচ। তাই মায়ার আবরণ দূর করতে পারলেই ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি করা যাবে এবং জগৎকে মিথ্যা মনে হবে।

জ্ঞান যোগের চারটি সাধনা

জ্ঞানযোগীর জন্য যে চারটি সাধনার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে তা হল নিত্য-অনিত্য-বস্তু বিবেক, ইহমুত্র-ফলভোগ-বিরাগ, শমাদি ষট্-সম্পত্তি এবং মুমুক্ষুত্ব। একমাত্র ব্রহ্মই নিত্য অন্য সবকিছু অনিত্য অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য ও জগৎ মিথ্যা এই জ্ঞানই নিত্য-অনিত্য-বস্তু বিবেক। ইহলোকের বা পরলোকের সুখভোগের ইচ্ছা ত্যাগের নাম ইহমুত্র-ফলভোগ-বিরাগ। শম, দম, উপরতি, তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা ও সমাধান এই ছয় প্রকার সম্পত্তিকে ষট্-সম্পত্তি বলে। মন প্রতি মূহুর্তে বিষয়-ভোগ করতে চায়। এই মন বড় অস্থির। এই অস্থির মনকে নিয়ন্ত্রন করে ব্রহ্মে স্থির করাকে শম বলে। দশ ইন্দ্রিয়কে দমন করাই দম। দমন করা বলতে ইন্দ্রিয়গুলোকে নিজ নিজ স্থানে স্থির রাখা বোঝায়। ইন্দ্রিয়গুলোকে দমন করা হলে এরা বাহ্যিক বিষয়ের প্রতি আসক্ত হতে পারে না। তবে ইন্দ্রিয়গুলো দমন করার পরও বাহ্য-বিষয়ের দিকে যেতে চায়। তাই ইন্দ্রিয়গুলোকে আত্মা বা ব্রহ্মের বিষয় ছেড়ে পুনরায় বাহ্য-বিষয়মুখী না করতে দেয়াকে উপরতি বলে। কোন রকম চিন্তা-ভাবনা বা বিলাপ না করে সব রকমের দুঃখ সহ্য করে যাওয়াকে তিতিক্ষা বলে। শাস্ত্রে ও গুরুবাক্যে বিশ্বাস করার নাম শ্রদ্ধা। সব সময় বুদ্ধিকে শুদ্ধ ব্রহ্মে স্থাপন করার নাম সমাধান। চতুর্থ সাধনা মুমুক্ষুত্ব অর্থ মুক্তি লাভের ইচ্ছা। মুক্তিলাভই জ্ঞানযোগীর চরম পুরুষার্থ।

জ্ঞান যোগ : শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন

ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি না হওয়া পর্যন্ত শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন ও সমাধি অনুষ্ঠানের প্রয়োজন আছে। বেদান্ত-শাস্ত্রের মূলকথা হল ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। উপক্রম-উপসংহার, অভ্যাস, অপূর্বতা, ফল, অর্থবাদ ও উপপত্তি এই ছয় প্রকার লিঙ্গ (পরিচায়ক প্রমাণ) দ্বারা বেদান্তের তাৎপর্য উপলব্ধি করার নাম শ্রবণ। কোন বস্তু সম্পর্কে বর্ণনার সময় উপক্রমে (শুরুতে) এবং উপসংহারে (শেষে) ঐ একই বস্তু বোঝানোকে উপক্রম-উপসংহার বলে। যেমন ব্রহ্ম সম্পর্কে আলোচনার সময় শুরুতে ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলে শেষেও ঐ একই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতে হয়। মোট কথা কোন বস্তু বিষয়ে বর্ণনার শুরুতে যে বস্তু থাকে শেষেও ঐ বস্তু থাকতে হয়। কোন বস্তু সম্পর্কে আলোচনার সময় ঐ বস্তুকেই পুনঃপুনঃ বর্ণনা করার নাম অভ্যাস। অন্য কোন প্রমাণের দ্বারা শাস্ত্রে বর্ণিত কোন বস্তুকে বুঝতে না পারার নাম অপূর্বতা। যেমন ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় এই কথাটি অন্য কোন প্রমাণের দ্বারা বোঝানো যায় না এবং অন্য কোন প্রমাণের প্রয়োজনও হয় না। কোন বর্ণনীয় বস্তুর প্রয়োজনীয়তা শ্রবণের নাম ফল। যেমন মুক্তি পেতে হলে ব্রহ্মকে জানা প্রয়োজন এমন বিষয় শ্রবণ করার নাম ফল। প্রতিপাদ্য বস্তুর প্রশংসা করাকে অর্থবাদ বলে। যেমন প্রতিপাদ্য বা বর্ণনীয় বিষয় যদি ব্রহ্ম হয় তবে ব্রহ্মের প্রশংসাই অর্থবাদ। প্রতিপাদ্য বিষয়কে বোঝানোর জন্য যে যুক্তি স্থাপন করা হয়, তাই উপপত্তি বলে। যেমনব্রহ্ম অদ্বিতীয়’ এই কথাটা প্রমাণের জন্য যে যুক্তি, তাই উপপত্তি। বেদান্তের পক্ষে যুক্তি প্রয়োগ করে যে অদ্বিতীয় ব্রহ্মের কথা শ্রবণ করা হয়েছে তা চিন্তা করার নাম মনন। বৈষায়িক চিন্তা পরিহার করে একমাত্র ব্রহ্মের চিন্তা বা ধ্যান করকে নিদিধ্যাসন বলে। ব্রহ্ম নিরাকার হলেও জ্ঞানযোগীরা ব্রহ্মকে জ্যোতির্ময় রূপ কল্পনা করেন এবং ব্রহ্মকে জ্যোতি রূপে ধ্যান করেন। নিদিধ্যাসনের পর সমাধি স্তরে উপনীত হতে হয়। সকল বিষয়বস্তু পরিত্যাগ করে যার ধ্যান করা হয় সে বস্তুতে চিত্তকে লয় করাই হল সমাধি।

জ্ঞান যোগ ও অপরোক্ষানুভূতি

অপরোক্ষানুভূতি না আসলে সমাধি স্তরে পৌছানো অসম্ভব। অপরোক্ষ অর্থ পরোক্ষ নয় অর্থাৎ ব্রহ্ম ও জগতে ভেদ নেই এ রকম যে অনুভূতি তাই অপরোক্ষ অনুভূতি। জগতের সকল বিষয় বাসনা নেতি নেতি (না না) বলে মন থেকে দূর করে ‘আমিই ব্রহ্ম’ এরকম চিন্তার ফলে অপরোক্ষানুভূতি আসে। অপরোক্ষানুভূতি আসলে যোগী সর্বভূতে ব্রহ্মকে দর্শন করেন। তখন তাঁর মধ্যে সাম্যভাব বিরাজ করে। তিনি শীত-গ্রীষ্ম, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, পাপ-পুণ্য প্রভৃতি সব দ্বন্দ্বার্থক বিষয়ে সমদর্শী হন। অর্থাৎ তখন তিনি দুঃখে কাতর হন না আবার সুখেও উল্লাসিত হন না। তিনি ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল, কুকুর, গাভী থেকে কীট-পতঙ্গ সকল কিছুকে সমান জ্ঞান করেন। জ্ঞানযোগীর এ চূড়ান্ত অবস্থাকে জীবন্মুক্তিও বলে। জ্ঞানযোগী মনে করেন মায়ার কারণেই তাঁকে দেহধারণ করতে হয়েছে। মায়াই দুঃখের কারণ। তাই এই মায়ার আবরণ দূর করে ব্রহ্মের সাথে লীন হয়ে যেতে পারলে আর এ মায়ার জগতে দেহধারণ করে দুখ পেতে হয় না। জ্ঞানীর নিকট মুক্তি বলতে স্থুলদেহ ত্যাগ করার পর ব্রহ্মের সাথে লীন হওয়া বোঝায়।

জ্ঞান যোগ সংক্রান্ত পিডিএফ বই “জ্ঞান যোগ” পড়তে বা ডাউনলোড করতে নিচের DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন

 জ্ঞান যোগ সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন







এই ওয়েবসােইটের সকল ধর্মীয় পোস্ট  পড়ার জন্য এই <পোস্ট দেখুন> অংশে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন